বাংলাদেশের প্রায় ৯০ শতাংশ বৈদেশিক বাণিজ্য চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে পরিচালিত হয়। সেখানে কয়েক দিন ধরে এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদের আন্দোলনের কারণে বেশির ভাগ সময় আমদানি কার্যক্রম বন্ধ ছিল। বেনাপোল স্থলবন্দরেও কলমবিরতিতে আমদানি রপ্তানি কার্যক্রম বেশির ভাগ সময় বন্ধ ছিল। এর পাশাপাশি সারা দেশেই কর ও ভ্যাট অফিসের কার্যক্রমও স্থবির হয়ে আছে। রাজস্ব খাতের অচলাবস্থায় ব্যবসায়ীদের মধ্যে উদ্বেগ তৈরি হয়েছে। অথচ সারা বছরের মধ্যে এ সময়ই অন্যান্য সময়ের তুলনায় রাজস্ব আদায়ের জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। রাজস্ব কর্মকর্তা-কর্মচারীদের কর্মব্যস্ততা এ সময়ে স্বাভাবিকের চেয়ে অনেক বেড়ে যায়। রাজস্ব খাতের অচল অবস্থায় দেশের সব রাজস্ব অফিসে এখন বিপরীত চিত্র দেখা যায়।
বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতির সাবেক সম্পাদক আইনুল ইসলাম বলেন, এনবিআরের অন্যতম কাজ হলো রাজস্ব আদায়। রাজস্ব আদায় করে সরকারকে দেবে, সরকার সে অনুযায়ী চলবে। রাজস্ব খাতে এ রকম আন্দোলন হলে রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হবে না। ফলে অর্থনৈতিকভাবে ঋণ করতে হবে। ঋণ বেশি করলে বিনিয়োগ কমবে। তাতে কর্মসংস্থানের ওপর চাপ পড়বে। সব মিলিয়ে দেশের অর্থনীতিতে ভয়াবহ অবস্থা হবে।
ব্যবসায়ীরা বলছেন, বন্দরে শিপিংয়ের লিড সময় আগে ছিল ২৫ থেকে ২৬ দিন। ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে হয়েছে ৪০ থেকে ৪৫ দিন। ইরান ইসরায়েল যুদ্ধে বন্দরে জট লেগেছে। এখন জাহাজের লিড সময় ৬০ দিনে চলে যাচ্ছে। এমন অবস্থায় রাজস্ব খাতের আন্দোলন দেশে বৈদেশিক বিনিয়োগ হুমকিতে পড়বে। যদি এই ব্যাঘাত দীর্ঘস্থায়ী হয়, তাহলে বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক সুনাম মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে, পণ্যের দাম বেড়ে যেতে পারে এবং অভ্যন্তরীণ বাজারে অস্থিরতা দেখা দিতে পারে। বাংলাদেশ গার্মেন্ট বায়িং হাউস অ্যাসোসিয়েশনের সদস্য ও ইউনাইটেড ফোরামের প্যানেল লিডার মোহাম্মদ মফিজ উল্লাহ বাবলু বলেন, আন্দোলনের কারণে বন্দরের কার্যক্রমে অচলাবস্থা তৈরি হয়েছে। আমাদের শিল্পের জন্য আমদানি করা জিনিসপত্র পড়ে আছে। এর ফলে কনটেইনার জট তৈরি হচ্ছে বন্দরে। ইতোমধ্যে সাড়ে ৩ হাজার থেকে ৪ হাজার কনটেইনার জট তৈরি হয়েছে। আমাদের শিপিং খরচ বেড়ে যাচ্ছে। শিপিংয়ের লিড সময় আগে ছিল ২৫ থেকে ২৬ দিন। ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে হয়েছে ৪০ থেকে ৪৫ দিন। এখন সে সময় ৬০ দিনে চলে যাচ্ছে। জাহাজের লিড সময় বাড়ায় শিল্পের জন্য একটি প্রতিবন্ধকতা তৈরি হচ্ছে। আমরা আশঙ্কা করছি প্রতিদিন ২০০ থেকে ২৫০ মিলিয়ন ডলার ক্ষতি হচ্ছে। এ অচলাবস্থা থাকলে আন্তর্জাতিকভাবে ক্রেতাদের কাছে আমাদের ভাবমূর্তি কমবে। তৈরি পোশাক খাত ক্ষতির সম্মুখীন হতে পারে। রাষ্ট্রীয়ভাবে রাজস্ব আদায়ে স্থবিরতা তৈরি হচ্ছে। এ আন্দোলন বেশি দূর যাওয়া উচিত নয়। সবার সঙ্গে আলোচনা করে জাতীয় স্বার্থে সমাধান করা উচিত। বাংলাদেশ পোশাক প্রস্তুতকারক ও রপ্তানিকারক সমিতির (বিজিএমইএ) পরিচালক ফয়সাল সামাদ বলেন, এভাবে আন্দোলন চললে ব্যবসা বন্ধ করে দিতে হবে। আমরা ব্যবসায়ীরা কী দোষ করলাম। ব্যবসাবাণিজ্যকে আন্দোলনের বাহিরে রাখা উচিত।
বাংলাদেশ ফ্রেশ ফ্রুটস ইমপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি সিরাজুল ইসলাম বলেন, এ আন্দোলনে আমদানি-রপ্তানিকারী ব্যবসায়ীদের বড় ধরনের ক্ষতি হচ্ছে। আমরা পণ্য ডেলিভারি যথাসময়ে নিতে পারছি না। এক দিনের মাল তিন দিনে নিতে হয়। ট্যাক্স-ভ্যাট জমার সময় চলে যাচ্ছে, আমরা ঠিকমতো রিটার্ন দিতে পারছি না।