বর্ণিল শোভাযাত্রায় সারা দেশে শুরু হয়েছে হিন্দুধর্মাবলম্বীদের অন্যতম ধর্মীয় অনুষ্ঠান শ্রীশ্রী জগন্নাথ দেবের রথযাত্রা উৎসব। উল্টো রথের মধ্য দিয়ে ৯ দিনব্যাপী এ উৎসব শেষ হবে ৫ জুলাই। এ উৎসব উপলক্ষে রাজধানীসহ সারা দেশে নানা অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে।
প্রতি বছর আষাঢ় মাসের শুক্লপক্ষের দ্বিতীয় তিথিতে অনুষ্ঠিত হয় এ রথযাত্রা উৎসব। হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের বিশ্বাস- এ তিথিতে বোন শুভদ্রা ও ভাই বলরামকে সঙ্গে নিয়ে ভক্তের কল্যাণে শ্রীশ্রী জগন্নাথদেব আসেন ধরাধামে। গতকাল বেলা ৩টার দিকে রাজধানীর স্বামীবাগ আশ্রম থেকে রথযাত্রা শুরু হয়ে ঢাকেশ্বরী মন্দিরে গিয়ে শেষ হয়। আন্তর্জাতিক কৃষ্ণ ভাবনামৃত সংঘ (ইসকন) এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। ৯ দিন পর ৫ জুলাই বেলা ৩টায় একই পথে উল্টো রথের শোভাযাত্রা ঢাকেশ্বরী মন্দির থেকে স্বামীবাগ আশ্রমে ফিরবে।
গতকাল সকাল ৮টায় বিশ্বশান্তি ও মঙ্গল কামনায় অগ্নিহোত্র যজ্ঞের মধ্য দিয়ে শুরু হয় শুভ রথযাত্রা মহোৎসবের আনুষ্ঠানিকতা। ৯ দিনব্যাপী অনুষ্ঠানের মধ্যে রয়েছে হরিনাম সংকীর্তন, বিশ্বশান্তি ও মঙ্গল কামনায় অগ্নিহোত্র যজ্ঞ, মহাপ্রসাদ বিতরণ, আলোচনা সভা, শোভাযাত্রা, পদাবলি কীর্তন, আরতি কীর্তন, ভাগবত কথা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, শ্রীমদ্ভগবদ্গীতা পাঠ, ধর্মীয় চলচ্চিত্র প্রদর্শন ও ধর্মীয় নাটক মঞ্চায়ন। এ ছাড়া দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে রথযাত্রার খবর পাঠিয়েছেন আমাদের প্রতিনিধিরা-
নারায়ণগঞ্জ : শহরের দেওভোগ আখড়া থেকে ইসকনের আয়োজনে রথযাত্রার বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা বের হয়। সেটি বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ শেষে পুনরায় দেওভোগের শ্রীশ্রী রাধা গোবিন্দ মন্দিরে শেষ হয়েছে। এতে অংশ নেয় বিভিন্ন বয়সের নারী-পুরুষ ও শিশু-কিশোররা। ঢাকঢোল, মুখোশে আনন্দ-উল্লাসে মুখরিত হয়ে ওঠে শোভাযাত্রাটি। রথ থেকে আম, জাম, কাঁঠাল, লটকন, লিচুসহ নানা প্রকার ফল বিতরণ করা হয়।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ : উত্তরবঙ্গ বৈষ্ণব সংঘের আয়োজনে হুজরাপুর মহারাজ মন্দির থেকে এবং হরে কৃষ্ণ সংঘের আয়োজনে সর্বজনীন মন্দির থেকে পৃথক রথযাত্রা শুরু করে একই স্থানে এসে শেষে হয়। এ উপলক্ষে চাঁপাইনবাবগঞ্জ পৌর পার্ক মাঠে সাত দিনব্যাপী মেলা বসেছে।
কলাপাড়া (পটুয়াখালী) : ব্যাপক উৎসাহ উদ্দীপনা ও ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্যের মধ্য দিয়ে কলাপাড়ায় শ্রীশ্রী জগন্নাথ দেবের রথযাত্রা মহোৎসব অনুষ্ঠিত হয়েছে। বিকাল ৩টায় পৌর শহরের জগন্নাথ নাট মন্দির প্রাঙ্গণে শুরু হয় রথযাত্রা। এতে অংশ নেয় বিপুলসংখ্যক হিন্দু ধর্মাবলম্বী নারী, পুরুষ ও শিশুরা। এ সময় উলুধ্বনি ও ঢাকের বাদ্যে মুখরিত হয়ে ওঠে পুরো এলাকা। প্রায় ৩ কিলোমিটার দীর্ঘ এ রথযাত্রা শেষ হয় চিংগড়িয়া সর্বজনীন মন্দিরে গিয়ে। এর আগে সকালে মন্দিরে দর্শন আরতি ও বাল্যভোগের মধ্য দিয়ে শুরু হয় এ উৎসবের আনুষ্ঠানিকতা।
কুড়িগ্রাম : কুড়িগ্রামের সবুজপাড়া এলাকার পাশে হরিকেশ মন্দির থেকে রথযাত্রা বের হয়ে জেলা শহরের দাদামোড়, শাপলা চত্বর ও পুরনো পশু হাসপাতাল হয়ে রথযাত্রাটি কালীমন্দিরে গিয়ে শেষ হয়।
শরীয়তপুর : রথযাত্রা উপলক্ষে শোভাযাত্রাটি শরীয়তপুর পালং হরিসভা মন্দির থেকে শুরু হয়ে শহরের প্রধান সড়কগুলো প্রদক্ষিণ শেষে পালং কালীমন্দিরে গিয়ে শেষ হয়। এ উপলক্ষে বিভিন্ন মন্দিরে কীর্তন ও ধর্মীয় সংগীতের আয়োজন করা হয়েছে।
দিনাজপুর : রথযাত্রা ঘিরে আলোচনা সভা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও মহাপ্রসাদ বিতরণসহ নানা অনুষ্ঠানমালার আয়োজন করা হয়। বিকালে কাহারোল উপজেলা সদরে অবস্থিত শ্রীশ্রী রাধা গোবিন্দ জিউ (ইসকন) মন্দির, খানসামার গোয়ালডিহি ইউপির দুবলিয়া (দোলাপাড়া) শ্রীশ্রী রাধারমণ গৌড়ীয় মঠ ও অনাথ আশ্রমসহ বিভিন্ন মন্দির থেকে এ রথযাত্রা বের হয়।
মানিকগঞ্জ : মানিকগঞ্জে রথযাত্রা শুরু হয়েছে। শ্রীশ্রী কালীবাড়ি মন্দিরে অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করেন জেলা বিএনপির সভাপতি আফরোজা খান রিতা।
লক্ষ্মীপুর : আনন্দ-উচ্ছ্বাস ও ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্যের মধ্য দিয়ে উদযাপিত হয়েছে রথযাত্রা মহোৎসব। বিকালে শহরের শ্যামসুন্দর জিউর আখড়া ও শ্রীশ্রী পরম ঈশ্বর শ্রীকৃষ্ণ চৈতন্য মহাপ্রভুর মন্দির থেকে রথসহ শোভাযাত্রাটি শহরের প্রধান প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ করে।
বাগেরহাট : সদর উপজেলার লাউপালায় হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের রথযাত্রা উৎসব শুরু হয়েছে। লাউপালা শ্রীশ্রী গোপাল জিউর মন্দির থেকে নানা ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠান শেষে দড়ি দিয়ে টেনে রথ বের করে আনেন হাজার হাজার ভক্ত-অনুরাগী। এ উপলক্ষে লাউপাড়ায় শুরু হয়েছে ১৫ দিনব্যাপী গ্রামীণ মেলা। মেলায় হস্তশিল্প, খেলনা, শিশুদের বিনোদন সরঞ্জাম, মিষ্টান্নসহ নানা ধরনের পসরা সাজিয়ে বসেছেন দোকানিরা।
পটুয়াখালী : বৈদিক যজ্ঞানুষ্ঠানের মাধ্যমে শ্রীশ্রী রাধা গোবিন্দ মন্দিরে ৯ দিনব্যাপী রথ উৎসবের সূচনা হয়। এ সময় হাজারো ভক্ত সমাগমে মন্দির চত্বর পরিপূর্ণ হয়ে ওঠে। যজ্ঞের আগুনে বিভিন্ন দ্রব্য আহুতি এবং বৈদিক মন্ত্র উচ্চারণের মাধ্যমে পুরোহিতরা দেশ ও জাতির শান্তি এবং কল্যাণ কামনায় ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা করেন। বিকালে মন্দিরে আলোচনা সভা শেষে মন্দির প্রাঙ্গণ থেকে শ্রীশ্রী জগন্নাথ দেবের রথটি হাজার হাজার ভক্তদের নিয়ে যাত্রা শুরু করে। পরে শহর প্রদক্ষিণ করে একই স্থানে এসে শেষ হয়।