রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলে যাত্রী ভোগান্তি বাড়াচ্ছে অকেজো ইঞ্জিন। মেয়াদোত্তীর্ণ এসব ইঞ্জিনের পাশাপাশি নতুন আমদানি করা ইঞ্জিনও যাত্রাপথে বিকল হয়ে যাচ্ছে। এতে রেলওয়ের যাত্রী ও পণ্য পরিবহন সেবা কার্যত ভেঙে পড়েছে। প্রায়ই ঘটছে শিডিউল বিপর্যয়। সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, সবশেষ আমদানি করা ৩ হাজার সিরিজের ইঞ্জিন প্রযুক্তিগত দিক থেকে অনেক উন্নত। এ ইঞ্জিন পরিচালনার জন্য দক্ষ লোকো মাস্টার (চালক) নেই। রেলওয়ের এক কর্মকর্তা বলেন, নতুন ইঞ্জিন আনা হয়েছে বেশ কয়েক বছর হলো। পার্টসে সমস্যা দেখা দেওয়া স্বাভাবিক। ওয়ার্কশপে কাজ করার পরও পার্টস না থাকায় পুরোপুরি ঠিক করা যায় না। বিদেশ থেকে ৩ হাজার সিরিজের ইঞ্জিনের পার্টস আনার পর এ সমস্যা থাকবে না। রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের এক পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, গত ছয় মাসে চলন্ত অবস্থায় বিকল হওয়া বেশির ভাগ ইঞ্জিনই ৩ হাজার সিরিজের। এ সময়ে চলন্ত অবস্থায় ৬৪টি ইঞ্জিন বিকলের মধ্যে নতুন সিরিজের ইঞ্জিনই ২৪টি। কয়েক বছর আগে দক্ষিণ কোরিয়া থেকে আমদানি করা এসব নতুন ইঞ্জিন বিকল হওয়ায় রেলওয়ের মেকানিক্যাল বিভাগের ব্যবস্থাপনা অদক্ষতা ও অনিয়মকে দায়ী করছেন সংশ্লিষ্টরা। এতে প্রায় প্রতিদিনই ট্রেনের যাত্রা বাতিল, ট্রেন ছাড়তে বিলম্ব ও গন্তব্যে পৌঁছাতে বিলম্বের ঘটনা ঘটছে। অনেক সময় পথিমধ্যে ইঞ্জিন বিকলে ঘণ্টার পর ঘণ্টা ট্রেন আটকে থাকার পাশাপাশি উদ্ধারকারী ইঞ্জিনও বিকল হওয়ার ঘটনা ঘটেছে।
রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরের প্রথম ছয় মাসে সর্বোচ্চ বেশি ইঞ্জিন বিকল হয়েছে আন্তনগর ট্রেনে। এ ট্রেনে ছয় মাসে ৬৪ বার ইঞ্জিন বিকল হয়েছে। ২৪ বার বিকল হয়েছে ৩ হাজার সিরিজের ইঞ্জিন।
উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন এসব ইঞ্জিন কিনতে ২০১৮ সালে দক্ষিণ কোরিয়ার হুন্দাই রোটেম কোম্পানির সঙ্গে চুক্তি করে রেলপথ মন্ত্রণালয়। কোরিয়ান এক্সিম ব্যাংকের অর্থায়নে ২৯৭ কোটি ৬৩ লাখ টাকা ব্যয়ে প্রথম ধাপে ২০২১ সালের আগস্টে দেশে আনা হয় ১০টি ইঞ্জিন। পরে আরেকটি প্রকল্পের মাধ্যমে ৮৪১ কোটি ২৩ লাখ টাকা ব্যয়ে আরও ২০টি ইঞ্জিন আনা হয়। ডিজেল-ইলেকট্রিক লোকোমোটিভগুলো ৩০০১ থেকে ৩০৩০ সিরিজের।
সূত্র জানায়, চলতি বছরের প্রথম ছয় মাসে মেইল এক্সপ্রেস/কমিউটার ট্রেনের ইঞ্জিন বিকল হয়েছে ৪৯ বার। জানুয়ারিতে ৭, ফেব্রুয়ারিতে ১২, মার্চে ৫, এপ্রিলে ৬, মে-তে ৭ এবং জুনে ১২ বার। তবে লোকাল ট্রেনে এই ছয় মাসে মাত্র ৫ বার ইঞ্জিন বিকল হওয়ার ঘটনা ঘটেছে। তার মধ্যে মার্চ ও এপ্রিলে একবার করে এবং মে-তে তিনবার বিকল হয়েছে। নতুন সিরিজের ইঞ্জিনগুলো বিকলের ঘটনায় লোকোমাস্টাররা বিড়ম্বনায় পড়ছেন। ভুক্তভোগী রেলওয়ে কর্মীরা ইঞ্জিন বিকলের ঘটনায় রেলের মেকানিক্যাল বিভাগসহ ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের উদাসীনতা ও অদক্ষতাকে দায়ী করেছেন।
ইঞ্জিন বিকল হওয়ায় যাত্রা বাতিলের ঘটনায় একের পর এক অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেছে চট্টগ্রাম রেলওয়ে স্টেশনে। সবশেষ গত ১ আগস্ট চট্টগ্রাম থেকে কক্সবাজারগামী প্রবাল এক্সপ্রেস ট্রেনের যাত্রা বাতিল করায় বিক্ষোভ এবং স্টেশন ম্যানেজারের কক্ষের সামনে ভাঙচুর করেছেন যাত্রীরা। পরে রেলওয়ে নিরাপত্তা বাহিনী এবং চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।
পটিয়ায় বগি রেখে চট্টগ্রামে পর্যটক এক্সপ্রেস : কক্সবাজার থেকে ঢাকাগামী পর্যটক এক্সপ্রেস বগি রেখেই চলে গেছে চট্টগ্রামে। সোমবার রাত ১০টার দিকে পটিয়া উপজেলার কচুয়া এলাকায় পর্যটক এক্সপ্রেস ট্রেনের বগি ও ইঞ্জিন বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়।
জানা গেছে, রাত পৌনে ৮টায় নির্ধারিত শিডিউল অনুযায়ী পর্যটক এক্সপ্রেস ঢাকার উদ্দেশে কক্সবাজার রেলস্টেশন ছেড়ে আসে। রাত পৌনে ১০টার দিকে ট্রেনটি কচুয়াই ইউনিয়নের গিরিশ চৌধুরী বাজারসংলগ্ন রেলগেট এলাকায় পৌঁছে। এ সময় হঠাৎ বিকট শব্দ শুনতে পান যাত্রী ও স্থানীয়রা। ট্রেনের ১৯টি বগি ইঞ্জিন থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে থেমে যায়। এতে বগিতে থাকা যাত্রীরা আতঙ্কিত হয়ে পড়েন। বিচ্ছিন্ন ইঞ্জিনটি চট্টগ্রাম রেলস্টেশনে পৌঁছার পর একটি রিলিফ ট্রেন বগিগুলো উদ্ধারের জন্য রাত ১১টার দিকে রওনা দেয়। রাত ১টা ২০ মিনিটের দিকে বগিগুলো চট্টগ্রাম রেলস্টেশনে নিয়ে আসা হয়।
চট্টগ্রাম রেলস্টেশন মাস্টার আবু জাফর মজুমদার বলেন, ইঞ্জিনের হুক ভেঙে যাওয়ায় বগিগুলো আলাদা হয়ে যায়। তবে ট্রেন লাইনচ্যুত হয়নি। রিলিফ ট্রেন গিয়ে রাতেই বগিগুলো চট্টগ্রামে নিয়ে আসে।