ছাত্র-জনতার বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর সারাদেশে সংঘটিত নানা নৈরাজ্য, হামলা-ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ, দখল, চাঁদাবাজির ঘটনা থেকে দলকে দূরে রাখতে নানা পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে বলেও জানিয়েছেন বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য শেখ রবিউল আলম ।
তিনি বলেন, একদিকে নৈরাজ্যকারীদের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স, অন্যদিকে সারাদেশে থানা,উপজেলা, ওয়ার্ড ও ইউনিয়ন পর্যায়ে রাতদিন পাহারা বসিয়েছেন দলের নেতাকর্মীরা। যারাই অপকর্মের সঙ্গে জড়িত হবেন, তাদের বিরুদ্ধেই দল কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বলে তিনি সকলকে সর্তক করে দেন।
বৃহস্পতিবার বিকালে রাজধানীর সায়েন্সল্যাব, ধানমন্ডি ৭ ও ৮, শুক্রাবাদ, কলাবাগান, ধানমন্ডি ৩২ এবং ধানমন্ডি ২৭ হয়ে শংকর বাসস্ট্যান্ডে অবস্থান পরবর্তী পদযাত্রায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
এ সময় শান্তি পদযাত্রায় যোগ দেন বিএনপির আন্তর্জাতিক বিষয়ক কমিটির সদস্য ইশরাক হোসেন।
রবিউল আলম বলেন, দলের নেতাকর্মীদের বিষয়ে রয়েছে আরও কঠোর সতর্কবার্তা। কারও ন্যূনতম সম্পৃক্ততা পাওয়া গেলে তাৎক্ষণিক বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন দল ইতোমধ্যেই শুরু করেছে, যা আপনারা দেখতে পাচ্ছেন।
বিএনপি ভারপ্রাপ্ত চেয়ারপারসন ফরেন অ্যাডভাইজরি কমিটি-২ এর অন্যতম সদস্য শেখ রবিউল বলেন, পতন হওয়া স্বৈরাচার ও তার দোসররা পরিকল্পিতভাবে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার, তথা বিজয়ী ছাত্র-জনতার ওপর প্রতিশোধের নীল-নকশা নিয়ে মাঠে নেমেছে। জনরোষে পালিয়ে যাওয়া আওয়ামী লীগ নেতারা হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের নাগরিকদের সম্পদ ও ধর্মীয় উপাসনালয়কে বিশেষভাবে টার্গেট করেছে। পরিকল্পিত সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার লক্ষ্যে সমাজকে বিভক্ত করাই এ মুহূর্তে তাদের ষড়যন্ত্র। তবে বিএনপি এ বিষয়ে সজাগ রয়েছে। ইতোমধ্যেই সাধ্যমতো সব পদক্ষেপ দলের পক্ষ থেকে গ্রহণ করা হয়েছে বলে তিনি জানান।
তিনি আরও বলেন, দলের নাম ব্যবহার করে কেউ যদি এ ধরনের অপতৎপরতায় জড়িয়ে পড়ে, তার বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ও আইনগতভাবে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে এবং ভবিষ্যতেও তা নেওয়া অব্যাহত থাকবে।
তিনি নেতাকর্মীদের স্মরণ করিয়ে দিয়ে বলেন, শৃঙ্খলা পরিপন্থি কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকার অভিযোগের ভিত্তিতে ইতোমধ্যেই বিএনপি ও এর অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনের শতাধিক নেতাকর্মীকে বহিষ্কার করা হয়েছে। শোকজ করা হয়েছে আরও বেশ কয়েকজনকে। অতএব সাবধান কেউ এসবে জড়িয়ে যাওয়ার নূন্যতম চেষ্টা করবেন না।
তিনি বলেন, নৈরাজ্য প্রতিহত করতে জনসচেতনতার উদ্দেশ্যে এলাকায় এলাকায় নিয়মিত মাইকিংয়ের মাধ্যমে সচেতনতা বৃদ্ধি করা হচ্ছে এবং দুষ্কৃতকারীদের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হাতে তুলে দিতে তাৎক্ষণিক যোগাযোগের জন্য স্থানীয় দায়িত্বশীল নেতাদের মোবাইল ফোন নম্বরসহ লিফলেটও বিতরণ করা হচ্ছে।
শেখ রবিউল আলম বলেন, দয়া করে কেউ আইন নিজের হাতে তুলে নেবেন না। প্রতিহিংসা, প্রতিশোধে লিপ্ত হবেন না। কোনও পরাজিত শক্তি কিংবা কেউ বিএনপির নাম ব্যবহার করে অপকর্ম করতে চাইলে, তাদের আইনের হাতে সোপর্দ করুন। যদি কোনও নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে অপরাধের অভিযোগ পাওয়া যায়, তাহলে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
নৈরাজ্যের বিরুদ্ধে ও সারাদেশে ধর্মীয় সম্প্রীতি বিনষ্ট করার সর্বাত্মক অপচেষ্টা রুখে দিতে ঢাকা-১০ আসনের সকল এলাকায় দলের সর্বোচ্চ প্রস্তুতি আছে বলেও জানান তিনি।
বিএনপির এই নেতা বলেন, ছাত্র-জনতার বিজয়কে বিতর্কিত করার জন্য সারাদেশে সংখ্যালঘু নির্যাতনের একটি গুজব সৃষ্টি করা হচ্ছে। আগের মতো বিএনপি’র বিরুদ্ধে এ দোষারোপ করে দেশ-বিদেশে সাম্প্রদায়িক দল বানানোর ষড়যন্ত্র শুরু হয়েছে। ২০০১ সালে বিএনপি ক্ষমতায় আসার পর একই ধরনের কাজ করেছিল একটি মহল। সেই বিষয়টিকে মাথায় রেখে এবার শুরু থেকেই সর্বোচ্চ সতর্কতা অবলম্বন করছি আমরা। তবুও ওই মহলটি একইভাবে মিথ্যা প্রচারণা শুরু করেছে। তারা একটি দেশের অনুকম্পা পেতে নানা নাটক তৈরি করছে। বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্টের নানা গুজব সৃষ্টিতে তৎপরতা শুরু করেছে। তবে এবার আন্দোলনের মাধ্যমে স্বৈরাচার সরকার বিদায়ের পর বিএনপিসহ অন্যান্য বিরোধী দল এবং রাজপথের শিক্ষার্থীরা সর্বোচ্চ সতর্ক থাকায় মন্দিরসহ সংখ্যালঘুদের বিভিন্ন উপাসনালয়ে হামলা-অগ্নিসংযোগের মতো তেমন কোনও ঘটনা ঘটেনি।
তিনি বলেন, এমনকি মাদ্রাসার ছাত্র, হুজুররাও এবার গুরুত্বপূর্ণ সকল স্থাপনায় রাত জেগে পাহারা দিচ্ছেন। ফলে সেখানে তেমন কোনও সুবিধা করতে পারেনি সুযোগসন্ধানী ওই মহলটি।
বিএনপির এই নেতা আরও বলেন, ঢাকা-১০ আসন অত্যন্ত স্পর্শকাতর এলাকা। এই এলাকায় পরাজিত ফ্যাসিবাদী শক্তিটির আতুরঘর ও শক্তিশালী আস্তানা ছিল। কিন্তু এলাকার সকল নেতাকর্মী ও সাধারণ জনগণকে নিয়ে আমরা রাতদিন পরিশ্রম করে আতঙ্কিত মানুষের পাশে থেকে জনগণের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সক্ষম হয়েছি।
এ সময় তিনি ধানমন্ডি, কলাবাগান, নিউমার্কেট ও হাজারীবাগে বসবাসরাত জনগণকে ঐক্যবদ্ধ ও সর্তক থাকতে অনুরোধ জানিয়ে বলেন, এই এলাকার নিরাপত্তা ও শান্তি নিশ্চিত করবে বিএনপি। কোনও অশান্তি এই এলাকায় বরদাস্ত করা হবে না।
পদযাত্রা শেষে শেখ রবিউল বলেন, নেতাকর্মীরা চব্বিশ ঘণ্টা সজাগ থাকবেন। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ আজ পতিত ও পরিত্যক্ত নাম। আওয়ামী লীগের ইতিহাসে সকল গুম, খুন ও অবৈধ হত্যাকাণ্ডের বিচারের পর রাজনীতিতে থাকবে কি না তখন জনগণ ভেবে দেখবে। এখন আমরা দেশ গড়ব। দুর্গন্ধ আওয়ামী লীগের কথা বলা ও শোনার মতো সময় ছাত্র-জনতার নেই।
কর্মসূচিতে ধানমন্ডি, কলাবাগান, নিউমার্কেট ও হাজারীবাগ থানা বিএনপি এবং অঙ্গ-সংগঠনের হাজার হাজার নেতাকর্মী অংশ নেন।
বিডি প্রতিদিন/একেএ