এ গল্পে পুরুষ আছে। নারী আছে। আছে প্রত্যাখ্যান এবং বিরহ। আছে সেই বিরহের টানে পিছু নেওয়াও। এ গল্প আরও একটি প্রেমের গল্প।
ভারতের আলিপুর চিড়িয়াখানার এক পুরুষ জেব্রা প্রেমে পড়েছিল সদ্য মা হওয়া এক জেব্রার। কিন্তু প্রেম নিবেদনের সময়েই ঘটে বিপত্তি। মাদি জেব্রাটির পছন্দ হয়নি পুরুষ জেব্রাটিকে। নাছোড় প্রেমিককে শিক্ষা দিতে শেষমেশ মাদি জেব্রা কামড়ে দেয় তাকে। প্রেমের ক্ষতে জ্বালা জুড়োয়নি। টানও কমেনি এতটুকু। চিকিৎসার জন্য অন্য খাঁচায় সরানোর পরে একটু সুস্থ হতেই ফের প্রেমিকার কাছে ফিরতে মরিয়ে হয়ে ওঠে বিরহী পুরুষ জেব্রাটি। আর তার সেই ফেরার তাগিদেই নাস্তানাবুদ গতকাল বুধবার সকালের চিড়িয়াখানা।
সাতসকালে টিন, বাঁশ, প্লাস্টিকের চাদর নিয়ে অগত্যা সেই প্রেমিক জেব্রার পিছনে ছুটে বেড়ালেন চিড়িয়াখানার কর্মীরা। প্রেমের টান কবেই বা হার মেনেছে এ সবের কাছে! কিছুতেই তাই কাবু করা যাচ্ছিল না তাকে। মুখের সামনে ঘেরাটোপ দেখলেই জোড়া পা পিছনে ছুড়ে ফের পালাচ্ছিল সে। ততক্ষণে এ সব দেখে চিৎকার জুড়েছে খাঁচাবন্দি বাঁদরেরা। ভয়ে এক ছুটে শিপাঞ্জি ঢুকে গিয়েছে নিজের ঘরে। সকাল সাড়ে ৭টা থেকে লড়াই চালিয়ে ঘণ্টা দেড়েক বাদে শেষ পর্যন্ত প্রেমিক জেব্রাকে খাঁচায় পোরা গেল বটে, তবে সেখানে প্রেমিকাকে না পেয়ে তার বড্ড মনখারাপ। প্রেমিকা যে রয়ে গিয়েছে বেশ অনেকটা দূরে, তার নিজের খাঁচায়।
সকাল সাড়ে ৭টা থেকে এই কাণ্ড চলাকালীন কোনও দর্শনার্থী না থাকায় কোনওক্রমে পরিস্থিতি সামাল দেওয়া যায় বলে জানিয়েছেন চিড়িয়াখানা কর্তৃপক্ষ। আলিপুর চিড়িয়াখানায় এখন পাঁচটি জেব্রা রয়েছে। কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন, ২০১০ সালে ইজরায়েল থেকে দু'টি মাদি এবং দু'টি পুরুষ জেব্রা নিয়ে আসা হয়। তখন তারা ছোট। এখন তাদের বয়স পাঁচ-ছ'বছর। প্রাপ্তবয়স্ক হওয়ার পরে একটি মাদি জেব্রা গত বছর একটি কন্যাসন্তান প্রসব করেছে। চিড়িয়াখানার কর্তারা জানান, এখন জেব্রাদের প্রজননের মরসুম। মা জেব্রাটিকেই এ বছর সঙ্গিনী করার মতলবে ছিল ওই পুরুষ জেব্রাটি। কিন্তু দিন কয়েক আগে প্রেম নিবেদনের সময় থেকেই বিপত্তির সূত্রপাত।
কিন্তু প্রেমে প্রত্যাখ্যান করে কেন এমন কামড় বসাল মাদী জেব্রা? চিড়িয়াখানার অধিকর্তা কানাইলাল ঘোষের অনুমান, সন্তান বড় না হওয়া অবধি মা জেব্রা কারও সঙ্গিনী হতে রাজি নয়। সেই কারণে পুরুষটি তার ঘনিষ্ঠ হতে চাইলে রেগে গিয়ে কামড়েই দিয়েছে সে।
প্রেমের ফাঁদ পাতা ভুবনে! জেব্রাই বা ধরা পড়বে না কেন?
সূত্র: আনন্দবাজার