সদ্য লেখা বই নিয়ে দলের যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভীর মন্তব্যে দুঃখ পেয়েছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ।
আজ দুপুরে সুপ্রিম কোর্টের অ্যানেক্স ভবনের সামনে এক প্রেস বিফ্রিংয়ে মওদুদ আহমদ বলেন, আমি খুব দুঃখ পেলাম। কারণ, রিজভীকে আমি আমার ছোটো ভাইয়ের মতে মনে করেছি। তার অনেক লেখাপড়া আছে। তাকে অনেক স্নেহ করি। কিন্তু এখন যা শুনছি। তিনি যে মন্তব্য করেছেন, আমি এটাতো তার কাছে আশা করিনি।
মওদুদ বলেন, আমি যেখানে ভয় করছিলাম, সরকার অসন্তুষ্ট হবে। সেখানে দেখছি, আমার একজন সহকর্মী আমার ওপর অসন্তুষ্ট হলেন। তিনি পুরো বইটি পড়লে অনুতপ্ত হবে।
বাড়ির বিষয়ে তিনি বলেন, আমার বাড়ির ব্যাপারে বলবো, বইটা লিখেছি অনেক আগে। আমি রাজনীতি করি। আমি বিরোধী দলের নেতা এবং বিরোধী দলকে নিশ্চিহ্ন করার জন্য আজকে আমাকে জোর করে বাড়ি থেকে বের করার জন্য সরকার একটা প্রক্রিয়া শুরু করেছে। এ প্রক্রিয়া শুরু করেছে ২০১২ সাল থেকে। আর বইটা লেখা হয়েছে ৬/৭ বছর আগে। সুতরাং, এটার সঙ্গে কোনো সম্পর্ক নেই। বাড়ি বা সরকারকে সন্তুষ্ট করার প্রশ্নই উঠে না। আমার বিরুদ্ধে ১৮টি মামলা আছে।
তিনি বলেন, বাড়ির মামলা আইনি প্রক্রিয়ার মধ্যে আছে। বইয়ের কোনো মতামতের সঙ্গে সরকারের কোনো সম্পর্ক নেই।
এর আগে সকালে নয়াপল্টনে এক সংবাদ সম্মেলনে ক্ষমতাসীনদের সন্তুষ্ট করতেই মওদুদ আহমদ সম্প্রতি বিএনপির স্বার্থবিরোধী বই (‘বাংলাদেশ: ইমারজেন্সি অ্যান্ড দি আফটারম্যাথ: ২০০৭-২০০৮’) লিখেছেন বলে মন্তব্য করেন দলটির দফতরের দায়িত্বপ্রাপ্ত যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবীর রিজভী।
তার অভিযোগ, নিজের বইতে জিয়াউর রহমানের দল বিএনপি, দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া ও তার দুই ছেলেকে নিয়ে বিরূপ মন্তব্য লিখেছেন মওদুদ আহমদ। নিজেকে বাঁচাতে ও বাড়ি রক্ষা করতেই তার এই ভূমিকা।
এর কিছুক্ষণ পরে মওদুদ আহমদ প্রেস বিফ্রিং করে বলেন, বই লেখা এক জিনিস। এটা একটা কঠিন কাজ। বিশেষ করে সমসাময়িক রাজনীতির ওপর কোনো বই লেখা খুবই কষ্টসাধ্য ব্যাপার। এই বই আমি লিখেছি ২০০৭-২০০৮ সালে যখন জেলখানায় ছিলাম এবং ২০০৯ সালে বইটি লেখা সম্পন্ন করা হয়। অনেক বছর পরে যাই হোক বইটা প্রকাশিত হয়েছে।
মওদুদ আহমদ আরো বলেন, আমি ভেবেছিলাম, আমার দল বা দলের নেতাকর্মীরা এপ্রিসিয়েট করবে এবং আমিতো ভেবেছিলাম, রিজভী আমাকে অভিনন্দন জানাবেন, ধন্যবাদ জানাবেন এ ধরনের একটি বই লেখার জন্য।
কারণ, আমি যেটা ভয় করেছিলাম, বইটা বের হওয়ার পরে সরকার আমার ওপর অসন্তুষ্ট হবে। এবং হয়তো আমাকে আবার জেলখানায় যেতে হতে পারে। কারণ, বইটা যদি পড়া হয়, রিজভী বইটি পড়েছেন কি-না আমি জানি না। বইটি যদি অন্যভাবে পড়া যায়, তাহলে দেখা যাবে সেখানে রয়েছে, ২০০৭-২০০৮ সালে মইনউদ্দিন-ফখরুদ্দীন সরকার কিভাবে রাজনীতিবিদদের ওপর অত্যাচার-নির্যাতন এবং মানবাধিকার লঙ্ঘন করেছে।
বিশেষ করে বইয়ে আছে, শেষ পর্যায়ে আওয়ামী লীগকে ক্ষমতায় আনা ও বিএনপিকে দুর্বল করার জন্য ষড়যন্ত্র করেছে মইনউদ্দিন-ফখরুদ্দীন সরকার বলেও উল্লেখ করেন মওদুদ।
তিনি বলেন, মইনউদ্দিন-ফখরুদ্দীনের সহায়তার বর্তমান সরকার ক্ষমতায় এসেছে। তারই বিবরণ বইতে দেওয়া আছে। এখন দেখছি, ফল হলো উল্টো। আমার দল সম্পর্কে বা আমার দলের যে ব্যর্থতা বা আমরা যে পরাজিত হলাম এর অনেকগুলো কারণ আমার বইতে দেওয়া আছে। নির্বাচন যে হয়েছে ২০০৮ সালে সেখানে বলা আছে, এটা কোনো সুষ্ঠু নির্বাচন হয়নি। কিভাবে কারচুপি হয়েছে তা আছে। এগুলোর বৃত্তান্ত দেওয়া আছে। এটাই বইটির মূল প্রতিপাদ্য বিষয়।
সাবেক এ উপ রাষ্ট্রপতি বলেন, এ বইতে দল সম্পর্কে আমার যে অভিব্যক্তি সেটা আমার ব্যক্তিগত। এটার সঙ্গে দলের কোনো সম্পর্ক নেই। যখন আমি বই লিখি, তখন দলীয় ব্যক্তি হিসেবে বই লিখি না। আমি একজন রাষ্ট্রবিজ্ঞানী হিসেবে বই লিখি। সব বইতে বস্তুনিষ্ঠভাবে দেশের ইতিহাস তুলে ধরার চেষ্টা করি।
মওদুদ বলেন, আমাদের ব্যর্থতার যেসব কারণ চিহ্নিত হয়েছে সেগুলো যদি অনুসরণ করি এবং চেষ্টা করি সংশোধন করতে তাহলে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল আবার ক্ষমতায় আসবে। এটাই বইটির মূল বার্তা।