বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় (ববি) এখন অভিভাবকহীন। নেই ভিসি, প্রো-ভিসি ও ট্রেজারার।
২০১১ সালের ১৮ এপ্রিল বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাকালীন প্রথম ভিসি হিসেবে নিয়োগ পাওয়া ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সয়েল ওয়াটার এন্ড এনভায়রমেন্ট সাইন্স বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. হারুনর রশীদ খানের ৪ বছরের মেয়াদ শেষ হয়েছে গত ১৭ এপ্রিল। শুরু থেকেই নেই প্রো-ভিসি এবং ট্রেজারার। এ কারনে ১৭ এপ্রিলের পর প্রকারান্তরে অভিভাবকহীন হয়ে পড়েছে দক্ষিণের কোটি মানুষের স্বপ্নের বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়।
ভিসি না থাকায় আটকে গেছে বিশ্ববিদ্যালয়ের আর্থিক, প্রশাসনিক ও একাডেমিক সকল সিদ্ধান্ত। সদ্যবিদায়ী ভিসি একাই ১২টি বিভাগের চেয়ারম্যান, ৫টি ফ্যাকাল্টির ডীন, পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক এবং প্রক্টরের অতিরিক্ত দায়িত্বে ছিলেন। এসব পদে কাউকে দায়িত্ব দিয়ে না যাওয়ায় স্থবির হয়ে পড়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল কার্যক্রম। বিশেষ করে একাডেমিক কাউন্সিল, সিন্ডিকেট, পরীক্ষার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে পারছেন না সংশ্লিস্টরা।
বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার মো. মনিরুল ইসলাম জানান, গত ১৫ এপ্রিল বিদায়ী ভিসি প্রফেসর ড. হারুনর রশীদ খান তার মেয়াদ শেষ হওয়ার বিষয়টি শিক্ষা মন্ত্রনালয়কে অবহিত করেন এবং ১৭ এপ্রিল ভিসি’র দায়িত্ব ছেড়ে চলে যান।
সূত্র জানায়, পরীক্ষা নিয়ন্ত্রকের অতিরিক্ত দায়িত্বে থাকা ভিসি না থাকায় ৫টি বিভাগের ২০১১-১২, ১২-১৩ এবং ১৩-১৪ শিক্ষা বর্ষের ফলাফল আটকে গেছে। নতুন ভিসি না আসা পর্যন্ত এই ফলাফল প্রকাশ করা যাচ্ছে না।
একজন কর্মকর্তা জানান, শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন-ভাতা উত্তোলন করতে হলে ভিসির স্বাক্ষর প্রয়োজন হয়। চলতি মাসের মধ্যে ভিসি নিয়োগ না হলে ১০০ শিক্ষকসহ সাড়ে তিনশ’ কর্মকর্তা-কর্মচারীর এপ্রিল মাসের বেতন-ভাতা আটকে যাওয়ার আশংকা করছেন তারা।
সংশ্লিস্টরা জানিয়েছেন, ভিসি না থাকায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রকল্পের শত কোটি টাকার উন্নয়ন কাজ থমকে গেছে। নতুন স্থায়ী ক্যাম্পাসে বিভিন্ন বিভাগে আসবাবপত্র ক্রয় এবং কম্পিউটার ল্যাবের জন্য কম্পিউটার ক্রয় প্রক্রিয়াও আটকে গেছে। এছাড়া ভিসি না থাকায় রেজিস্ট্রার কার্যালয় থেকে কোন অফিস আদেশ জারি হচ্ছে না। শিক্ষকরাও খেয়াল-খুশিমতো ক্যাম্পাসে আসছেন এবং ক্লাশ নিচ্ছেন।
সব কিছু মিলিয়ে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক এবং একাডেমিক কার্যক্রমে স্থবিরতা দেখা দিয়েছে বলে স্বীকার করেছেন বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক এমএ কাইউম। তিনি বলেন, ভিসি হলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ব্যক্তি এবং অভিভাবক। ভিসি না থাকায় বিশ্ববিদ্যালয়ে সবক্ষেত্রে কাজের গতি কমেছে। প্রধানমন্ত্রী দ্রুততম সময়ের মধ্যে ভিসি নিয়োগ দিয়ে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের কাজের গতি তরান্বিত করবেন বলে প্রত্যাশা করেন তিনি।
সংশ্লিস্টদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম ভিসি’র মেয়াদ শেষ হওয়ার পর ড. হারুনর রশীদকে দ্বিতীয় মেয়াদে ভিসি নিয়োগের প্রস্তাব করেছিলেন শিক্ষামন্ত্রী। কিন্তু ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে সংশ্লিস্ট বিষয়ে গবেষনায় মগ্ন থাকার কথা বলে শিক্ষামন্ত্রীর প্রস্তাব ফিরিয়ে দেন তিনি।
নির্ভরযোগ্য সূত্র জানিয়েছে, বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের দ্বিতীয় ভিসি হিসেবে নিয়োগের জন্য আলোচনায় আছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) শিক্ষা ও গবেষনা ইনস্টিটিউটের প্রফেসর ড. এম ওয়াহেদুজ্জামান চাঁন, ঢাবি’র কলা ও মানবিক অনুষদের ডীন প্রফেসর ড. আকতারুজ্জামান, ঢাবি’র সমাজবিজ্ঞান বিভাগের প্রফেসর ড. মশিউর রহমান এবং ঢাবি’র বাংলা বিভাগের প্রফেসর ড. বিশ্বজিৎ ঘোষ।
সূত্র জানিয়েছে, বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসির আলোচনায় থাকা শিক্ষকদের একটি তালিকা প্রধানমন্ত্রীর দপ্তরে রয়েছে। প্রধানমন্ত্রী ইন্দোনেশিয়া থেকে দেশে ফিরে এ ব্যাপারে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবেন। তারপর রাষ্ট্রপতি ভিসি নিয়োগ দেবেন।
বিডি-প্রতিদিন/ ২৩ এপ্রিল ২০১৫/ এস আহমেদ