যাঁরা সুযোগ পাবেন
প্রার্থীকে স্বীকৃত বিশ্ববিদ্যালয় থেকে নার্সিংয়ে স্নাতক ডিগ্রি অথবা কোনো স্বীকৃত প্রতিষ্ঠান থেকে ডিপ্লোমা ইন নার্সিং বা ডিপ্লোমা ইন নার্সিং সায়েন্স অ্যান্ড মিডওয়াইফারি সার্টিফিকেট পাস হতে হবে। এ ছাড়া বাংলাদেশ নার্সিং কাউন্সিল কর্তৃক নিবন্ধিত হতে হবে। ১ আগস্ট ২০২৫ তারিখে বয়স হতে হবে ১৮ থেকে ৩২ বছর।
বিপিএসসির পরীক্ষা পদ্ধতি
পিএসসির নবম থেকে ১৩তম গ্রেডের নন-ক্যাডার পদের নিয়োগ পরীক্ষা নীতিমালা অনুসারে নেওয়া হবে। সিনিয়র স্টাফ নার্সের পদটি দশম গ্রেডের। তাই পরীক্ষাও হবে এই গ্রেডের মান অনুযায়ী। আবেদনকারীর সংখ্যা বেশি হলে অনলাইনে আবেদনের পর ১০০ নম্বরের এক ঘণ্টার এমসিকিউ পরীক্ষা নেওয়া হবে। এমসিকিউ পরীক্ষায় উত্তীর্ণ প্রার্থীদের লিখিত পরীক্ষায় অংশ নিতে হবে। লিখিত পরীক্ষা হবে রচনামূলক পদ্ধতিতে ২০০ নম্বরের, সময় চার ঘণ্ট। লিখিত পরীক্ষায় পাস করলে ডাকা হবে ৫০ নম্বরের মৌখিক পরীক্ষার জন্য। উল্লেখ্য, প্রার্থী সংখ্যা কম হলে সরাসরি ২০০ নম্বরের লিখিত রচনামূলক পরীক্ষা নেওয়া হবে।
পরীক্ষা ও বিষয়ভিত্তিক নম্বর বণ্টন
পিএসসির নিয়োগ পরীক্ষা পদ্ধতি অনুযায়ী প্রশ্নপত্রে বিষয়ভিত্তিক প্রশ্ন থাকবে। এক ঘণ্টার এমসিকিউ পদ্ধতির পরীক্ষায় বাংলায় ২০ নম্বর, ইংরেজিতে ২০ নম্বর, সাধারণ জ্ঞানে (বাংলাদেশ ও আন্তর্জাতিক বিষয়াবলি) ২০ নম্বর এবং প্রাসঙ্গিক টেকনিক্যাল বিষয় বা প্রফেশনাল বিষয়ে ৪০ নম্বরের প্রশ্ন থাকবে। প্রতিটি প্রশ্নের মান ১। অর্থাৎ ১০০ প্রশ্নে ১০০ নম্বর। পরীক্ষায় নেগেটিভ মার্কিং থাকবে। প্রতিটি ভুল উত্তরের জন্য ০.৫০ নম্বর কাটা হবে।
এ ছাড়া লিখিত (রচনামূলক) পরীক্ষায় বাংলায় ৪০, ইংরেজিতে ৪০, সাধারণ জ্ঞানে ৪০, প্রাসঙ্গিক টেকনিক্যাল বা প্রফেশনাল বিষয়ে ৮০ নম্বরের প্রশ্ন থাকবে। অর্থাৎ মোট ২০০ নম্বর। পিএসসির নন-ক্যাডারের নিয়োগ পরীক্ষার বিধি অনুসারে কোনো প্রার্থীকে লিখিত পরীক্ষায় পাস করার জন্য বাংলা, ইংরেজি এবং সাধারণ জ্ঞান প্রতিটি বিষয়ের জন্য পৃথক পৃথকভাবে ২৫ শতাংশ এবং প্রাসঙ্গিক টেকনিক্যাল বা প্রফেশনাল বিষয়ে ৪০ শতাংশ এবং সামগ্রিকভাবে ন্যূনতম ৪৫ শতাংশ নম্বর পেতে হবে। মৌখিক পরীক্ষায়ও পাস করার জন্য প্রাসঙ্গিক টেকনিক্যাল বা প্রফেশনাল বিষয়ে ন্যূনতম ৫০ শতাংশ নম্বর পেতে হবে। পরীক্ষার বিষয়ভিত্তিক সিলেবাস ও নম্বর বণ্টনের দরকারি তথ্য পাওয়া যাবে পিএসসির ওয়েবসাইটে (http://bpsc.gov.bd) প্রকাশিত বিজ্ঞপ্তিতে।
দুই ধরনের পরীক্ষার প্রস্তুতি
এমসিকিউ ও রচনামূলক দুই ধরনের প্রস্তুতি রাখতে হবে। টেকনিক্যাল বা প্রফেশনাল বেশির ভাগ প্রশ্ন আসবে নার্সিং বিষয়ক পাঠ্যবই থেকে। ডিপ্লোমা ইন নার্সিং বা ডিপ্লোমা ইন নার্সিং সায়েন্স অ্যান্ড মিডওয়াইফারি সার্টিফিকেটের টেকনিক্যাল/প্রফেশনাল বিষয়ের পাঠ্যবইয়ের সিলেবাস অনুযায়ী প্রস্তুতি নিতে হবে। কারণ এসব বিষয়ের ওপর এমসিকিউ পরীক্ষায় ৪০ নম্বর এবং লিখিত রচনামূলক পরীক্ষায় ৮০ নম্বর থাকবে। এর পাশাপাশি বাংলা, ইংরেজি বিষয়ের প্রস্তুতির জন্য অষ্টম, নবম-দশম ও একাদশ-দ্বাদশ শ্রেণির বাংলা, ইংরেজি এবং সাধারণ জ্ঞানের (বাংলাদেশ ও আন্তর্জাতিক বিষয়াবলি) ওপর সম্প্রতি প্রকাশিত বই পড়তে হবে। সংবাদপত্র ও অন্যান্য অনলাইন মাধ্যমেও নিয়মিত চোখ রাখতে হবে, যাতে হালনাগাদ তথ্য সম্পর্কে জানাশোনা থাকে।
নার্সিং-সংশ্লিষ্ট টেকনিক্যাল বিষয়
সিনিয়র স্টাফ নিয়োগ পরীক্ষায় কমন কিছু প্রশ্ন প্রায় পরীক্ষায়ই আসতে দেখা গেছে। যেমন—রোগীর শারীরিক অবস্থা মূল্যায়ন, ওষুধ প্রয়োগ, জীবনরক্ষাকারী যন্ত্রপাতি পরিচালনা কিভাবে করা হয়। কমন কিছু বিষয়ে স্বচ্ছ ধারণা রাখতে হবে। পাশাপাশি নার্সিং শিক্ষাকালে মৌলিক বিষয়গুলো সম্পর্কে পরিচ্ছন্ন জ্ঞান থাকতে হবে। পেশার ক্ষেত্রে যেসব ব্যাবহারিক কাজের দরকার হয় বা যেসব কাজ বেশি বেশি করতে হয়, সেসব বিষয়ে স্পষ্ট ব্যাবহারিক জ্ঞান থাকতে হবে। গুরুত্বপূর্ণ বিষয়বস্তু—মিডওয়াইফারি, ফার্মাকোলজি, অর্থোপেডিক, সাইকোলজিক্যাল সায়েন্স, মেন্টাল হেলথ, অ্যানাটমি, ফিজিওলজি, কমিউনিটি অব নার্সিং, অ্যাডাল্ট নার্সিং, ফান্ডামেন্টাল নার্সিং, ক্লিনিক্যাল প্র্যাকটিস, পেডিয়াট্রিক অ্যান্ড নিউ বর্ন নার্সিং, ইন্টার্নশিপ নার্সিং ও পেশাগত ক্লিনিক্যাল দায়িত্ব সম্পর্কিত বিষয়গুলোতে। বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ টার্মের মধ্যে আছে—অ্যান্ডোক্রাইন সিস্টেম, রিপ্রডাক্টটিভ সিস্টেম, রেনাল/ইউরিনারি সিস্টেম, সার্কুলেটরি সিস্টেম, কার্ডিয়াক সিস্টেম, ডাইজেস্টিভ সিস্টেম, লিম্ফেটিক সিস্টেম, ইমিউন সিস্টেম, স্কেলেটাল সিস্টেম, অণুজীববিজ্ঞান ও ভ্যাকসিন, নিউট্রিশনসহ গুরুত্বপূর্ণ টার্মগুলো থেকে প্রশ্ন করা হয়। সুতরাং প্রস্তুতিতে টার্মগুলো অবশ্যই রাখতে হবে।
বাংলা : বাংলা বিষয়ের রচনামূলক পরীক্ষার প্রস্তুতির জন্য রচনা, সারাংশ, পত্রলিখন, বঙ্গানুবাদ এবং রচনামূলক ও এমসিকিউ পরীক্ষার জন্য বাংলা ব্যাকরণের ভাষা, ধ্বনিতত্ত্ব, বাক্য প্রকরণ, সমাস, উপসর্গ, অনুসর্গ, ধাতু, বচন, পদ-প্রকরণ, কারক, সন্ধিবিচ্ছেদ, এককথায় প্রকাশ, বাগধারা, ক্রিয়া-বিভক্তি, উক্তি, শব্দ, যুক্তবর্ণ, প্রত্যয়, প্রবাদ-প্রবচনে বেশি জোর দিতে হবে। বাংলায় প্রস্তুতির জন্য অষ্টম, নবম-দশম ও একাদশ-দ্বাদশ শ্রেণির পাঠ্যবই ভালো ভূমিকা রাখবে।
ইংরেজি : রচনামূলক পরীক্ষার জন্য Essay, Letter, Comprehension এবং রচনামূলক ও এমসিকিউসহ উভয় পরীক্ষার জন্য ইংরেজি ব্যাকরণের Use of Verbs, preposition, Voice, Narration, Correction of errors in composition, Use of word having similar pronunciation but conveying different meaning, Use of Idioms & Phrases-সহ গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়গুলোতে ভালো প্রস্তুতি নিতে হবে। প্রস্তুতির জন্য নবম-দশম শ্রেণির ইংরেজি ব্যাকরণ পাঠ্যবই ভালো ভূমিকা রাখবে।
গণিত : পাটিগণিত, বীজগণিত, জ্যামিতি ও মানসিক দক্ষতা বা অ্যানালিটিক্যাল অ্যাবিলিটি থেকে প্রশ্ন করা হয়। পাটিগণিতের সেট ও সংখ্যা, সরল, গড়, লাভ-ক্ষতি, শতকরা, সুদকষা, অনুপাত ও সমানুপাত অধ্যায়গুলো অনুশীলন করতে হবে। বীজগণিতের বর্গ ও ঘন এর সূত্র এবং ব্যবহার, লসাগু, গসাগু, উৎপাদকে বিশ্লেষণ, সমাধান, মান নির্ণয় ইত্যাদি অধ্যায়ে ভালো প্রস্তুতি থাকতে হবে। জ্যামিতির প্রাথমিক ধারণা ও সংজ্ঞা, রেখা, কোণ, ত্রিভুজ, বৃত্ত, চতুর্ভুজ এবং ত্রিকোণমিতি অধ্যায়গুলো আয়ত্তে রাখতে হবে। অ্যানালিটিক্যাল অ্যাবিলিটিতে উপস্থিত বুদ্ধিমত্তার প্রস্তুতি রাখতে হবে।
সাধারণ জ্ঞান : সাম্প্রতিক সময়ের গুরুত্বপূর্ণ বিষয়সহ আন্তর্জাতিক বিষয় যেমন—রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ, ফিলিস্তিন-ইসরায়েল যুদ্ধ, ভারত, চীন ও রাশিয়ার বাণিজ্যিক সম্পর্ক, বিশ্ববাণিজ্য, সামগ্রিক বিজ্ঞান, অর্থনীতি, কম্পিউটার, ইতিহাস, বিশ্ব-সংস্কৃতির ওপর জোর প্রস্তুতি রাখতে হবে। বাংলাদেশ প্রসঙ্গে সাম্প্রতিক রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক ঘটনাবলি, ইতিহাস-ঐতিহ্যসহ নানা বিষয়ে বিশদ জানাশোনা থাকতে হবে। সংবাদপত্র, টেলিভিশনসহ পাশাপাশি বিগত নিয়োগ পরীক্ষার প্রশ্নপত্র সংগ্রহ করতে পারলে ভালো ধারণা পাওয়া যাবে। বাজারে সিনিয়র স্টাফ নার্স নিয়োগের বেশ কিছু প্রকাশনীর প্রস্তুতিমূলক বই পাওয়া যায়। প্রস্তুতিতে সহায়ক ভূমিকা রাখতে পারে বইগুলো।
আবেদন লিংক: http://bpsc.teletalk.com.bd
বিডি প্রতিদিন/নাজিম