দুই দিনের রাষ্ট্রীয় সফর শেষে নতুন দিনের প্রত্যাশা নিয়ে ঢাকা ছেড়েছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। রবিবার রাত সাড়ে ৮টায় ভারতীয় বিমান বাহিনীর বিশেষ ফ্লাইটে দিল্লির উদ্দেশে হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর ছেড়ে যান মোদি। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিমানবন্দরে মোদিকে আনুষ্ঠানিক বিদায় জানান।
ঢাকা ছাড়ার আগে বাংলাদেশকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। টুইটারে ঢাকা ছাড়ার প্রাক্কালে এক স্ট্যাটাসে মোদি লিখেছেন, ''ধন্যবাদ বাংলাদেশ। এই সফর আমার স্মৃতিতে ভাস্বর হয়ে থাকবে। এই সফর ভারত-বাংলাদেশ অংশীদারিত্ব সুদৃঢ় করবে।''
অপর এক স্ট্যাটাসে লেখেন, ''সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে, আমরা অতীতের অমীমাংসিত বিষয় সাফল্যের সঙ্গে কাটিয়ে উঠেছি। এটি আমাদের সম্পর্কের ক্ষেত্রে নতুন দিগন্ত সৃষ্টি করবে।''
এদিকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিমানের সিঁড়ি পর্যন্ত এগিয়ে দেন ভারতের প্রধানমন্ত্রীকে, হাতে তুলে দেন ফুলের তোড়া।
বাণিজ্যমন্ত্রী আমির হোসেন আমু, অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত, আইনমন্ত্রী আসিনুল হক, ভারতে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত সৈয়দ মোয়াজ্জেম আলী, ঢাকায় ভারতের হাইকমিশনার পঙ্কজ সরণ, মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ মোশাররাফ হোসাইন ভূইঞা, পররাষ্ট্র সচিব শহিদুল হক এসময় উপস্থিত ছিলেন।
বিমান বন্দরে সুসজ্জিত একটি সেনাদল ভারতের প্রধানমন্ত্রীকে অভিবাদন জানানোর সময় তিন বাহিনী প্রধান এবং আইজিপিও ছিলেন সেখানে।
বিদায় নেওয়ার আগে সফরের শেষ দিনে 'নতুন প্রজন্ম-নয়া দিশা' শিরোনামের যৌথ ঘোষণা দেওয়া হয়।
আগের দিন শীর্ষ বৈঠকের পর দুই প্রধানমন্ত্রীর যৌথ বিবৃতিতেও আন্তঃযোগাযোগ বাড়ানোর মধ্য দিয়ে বন্ধন আরও মজবুত করার অঙ্গীকার করা হয়।
দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের সব দিক তুলে ৬৫ দফার যৌথ ঘোষণায় একটি নতুন যুগের সূচনার প্রত্যাশা করা হয়েছে। পাশাপাশি বিভিন্ন খাতে পূর্ণ শক্তি-সামর্থ্য একযোগে কাজে লাগানোর লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে।
দুই দিনের সফরে শনিবার সকালে ঢাকা আসেন মোদি। নানা কর্মসূচিতে ব্যস্ততার মধ্যে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে এক অনুষ্ঠানে বক্তব্য শেষে ঢাকা ছাড়েন তিনি।
সফরের প্রথম দিন শেখ হাসিনা ও নরেন্দ্র মোদির নেতৃত্বে দুই দেশের শীর্ষ বৈঠক হয়। এতে অবকাঠামো, তথ্য-প্রযুক্তি, স্বাস্থ্য ও শিক্ষাসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে সহযোগিতার ১৯টি চুক্তি, সমঝোতা স্মারক ও সম্মতিপত্র সই হয়।
দুই দেশের প্রধানমন্ত্রীর উপস্থিতিতে ছিটমহল বিনিময়ে স্থল সীমান্ত চুক্তি অনুসমর্থনের দলিল বিনিময় করে ভারত ও বাংলাদেশ, যাতে দশকের পর দশক অবরুদ্ধ জীবন কাটানো অর্ধ লক্ষাধিক মানুষের মুক্তির পথ খোলে।
পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে সঙ্গে নিয়ে কলকাতা-ঢাকা-আগরতলা এবং ঢাকা-শিলং-গুয়াহাটি রুটে নতুন বাস সার্ভিস চালু করেন শেখ হাসিনা ও নরেন্দ্র মোদি।
যৌথ ঘোষণায় যে কোনো ধরনের সন্ত্রাসবাদ ও উগ্রপন্থার বিরুদ্ধে 'জিরো টলারেন্স' ঘোষণা করে নিরাপত্তা সহযোগিতায় একসঙ্গে কাজ করার প্রতিশ্রুতি প্রকাশ করা হয়েছে।
যত শিগগির সম্ভব তিস্তা ও ফেনী নদীর পানি বণ্টন চুক্তি সইয়ের জন্য কাজ করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন মোদি। এরইমধ্যে অংশীদারদের সঙ্গে আলোচনা শুরু করেছেন তিনি।
আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক ফোরামে একসঙ্গে কাজ করারও অঙ্গীকার করেছেন দুই প্রধানমন্ত্রী হাসিনা ও মোদি।
যৌথ ঘোষণায় জানানো হয়, শেখ হাসিনার সঙ্গে বৈঠকে কলকাতার ব্রিগেড ময়দানে ১৯৭২ সালের ৬ ফেব্রুয়ারির ভাষণের একটি অডিও, স্থল সীমান্ত বিল নিয়ে ভারতের পার্লামেন্টে বিতর্কের ভিডিও, রণতরী বিক্রান্ত'র হুইল, মংলা মন্দরের জন্য দেওয়া ড্রেজারের রেপ্লিকা, স্বয়ংক্রিয় আবহাওয়া কেন্দ্রের একটি রেপ্লিকা দেন মোদি।
অন্যদিকে শেখ হাসিনা ১৯৭১ সালে বাংলাদেশ-ভারত যৌথবাহিনীর কাছে পাকিস্তানি বাহিনীর পরাজয়ের দলিল স্বাক্ষর অনুষ্ঠানের একটি ছবি, ভারতের জন্য নির্বাচিত বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলের একটি মানচিত্র, রামপালে দুই দেশের যৌথ উদ্যোগে প্রতিষ্ঠিত মৈত্রী বিদ্যুৎ কেন্দ্রের একটি মডেল নরেন্দ্র মোদির হাতে তুলে ধরেন।
যাওয়ার আগে শেখ হাসিনাকে ভারত সফরের আমন্ত্রণ জানিয়ে উড়োজাহাজের সিড়িতে পা রাখেন নরেন্দ্র মোদি।
বিডি-প্রতিদিন/০৭ জুন ২০১৫/ এস আহমেদ