মিয়ানমার সীমান্তরক্ষী বাহিনীর হাতে অপহৃত বিজিবি সদস্য আবদুর রাজ্জাককে পাঁচ দিনেও মুক্ত করতে না পারার জন্য কূটনৈতিক ব্যর্থতাকে দায়ী করেছে বিএনপি। ব্যর্থতার দায় নিয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এইচ মাহমুদ আলীর পদত্যাগ করা উচিত বলে মনে করছে দলটি।
সোমবার এক সংবাদ সম্মেলনে দলটির মুখপাত্র ড. আসাদুজ্জামান রিপন বলেন, 'তিনি (এইচ মাহমুদ আলী) যদি কূটনৈতিক ক্ষেত্রে ব্যর্থ হয়ে থাকেন, তাহলে তার ওই পদ থেকে সরে যাওয়া উচিত। যিনি দায়িত্ব পালন করতে পারবেন তার জন্য পথ খুলে দেওয়া উচিত। তাতে করে এই সংকট সমাধান হতে পারে।'
রিপন প্রশ্ন তোলেন, ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বাংলাদেশ সফরে আগ বাড়িয়ে বলে ফেললেন বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার সঙ্গে কোনো বৈঠক হবে না। পরে বৈঠক হলো। ওই মন্তব্যের জন্য আমি তাকে উজবুক বলতে চাই না। কিন্তু আবদুর রাজ্জাককে মিয়ানমার সীমান্তরক্ষী বাহিনী ধরে নিয়ে যাওয়ার পর তিনি মুখে কুলুপ দিয়ে রেখেছেন কেন?
রিপন বলেন, 'আবদুর রাজ্জাকের পোশাকটি খুলে তার সঙ্গে যে অসম্মানজনক আচরণ করা হয়েছে, তা জাতির জন্য লজ্জাজনক নয় কি? নি:সন্দেহে জাতির জন্য লজ্জাজনক। তিনি স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব রক্ষার দায়িত্বে নিয়োজিত ছিলেন, তার হাতে যখন হাতকড়া, তখন গোটা জাতিই হাতে হাতকড়া পরেছে। তাকে যখন প্যান্ট খুলে লুঙ্গি পরানো হয়েছে, তখন গোটা জাতির প্যান্ট খুলে লুঙ্গি পরানো হয়েছে। আর সরকার নিরব থাকছে। পররাষ্ট্রমন্ত্রীর কোনো কথা শোনা যাচ্ছে না।'
গত বুধবার ভোরে টেকনাফের নাফ নদীর জাদিমুরা পয়েন্ট সীমান্তে বিজিবি সদস্যরা ইঞ্জিনচালিত নৌকায় করে টহল দেওয়ার সময় একটি ট্রলার থামিয়ে তল্লাশি চালাচ্ছিলেন। এ সময় পূর্ব দিক থেকে মিয়ানমার সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিজিপি তাদেরকে ইয়াবা পাচারকারী বা চোরাচালানকারী ভেবে গুলি বর্ষণ করে। বিজিবি সদস্যরাও পাল্টা গুলি করে। এতে বিজিবির সিপাহী বিপ্লব গুলিবিদ্ধ হন এবং নায়েক আবদুর রাজ্জাককে বিজিপি সদস্যরা ধরে নিয়ে যায়।
রাজ্জাককে ধরে নেওয়ার পরদিন বৃহস্পতিবার ঢাকায় মিয়ানমারের রাষ্ট্রদূতকে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে ডেকে নেওয়া হয়েছিল। তাকে দ্রুত ফেরত পাঠাতেও বলা হয় বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে। পতাকা বৈঠকের উদ্যোগ চলছে বলে বিজিবি টেকনাফ ৪২ ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল আবুজার আলজাহিদ শনিবারও জানিয়েছেন।
নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত ওই সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির মুখপাত্র আরো বলেন, 'আবদুর রাজ্জাককে ফিরিয়ে আনতে কূটনৈতিক ক্ষেত্রে কতটুকু অগ্রগতি ও আলোচনা হয়েছে, কি ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে পররাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে তা জানতে চাই। মিয়ানমারের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে তার কথা হয়েছে কিনা, পতাকা বৈঠক কেন হলো না, আবদুর রাজ্জাক কিভাবে ফেরত আসবেন- এগুলো জনগণের সামনে পরিষ্কার করা উচিত।'
পাঁচদিন পরও অপহৃত বিজিবি সদস্যকে ফিরিয়ে আনা সম্ভব না হওয়ায় হতাশা ব্যক্ত করে বিএনপির এই মুখপাত্র রিপন বলেন, বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের ডিজি আবদুল আজিজ কারণে অকারণে কথা বলে থাকেন। অতীতে রাজনীতিবিদদের ভাষায় তিনি কথা বলেছেন। তার কাছে আবদুর রাজ্জাকের অবস্থান সম্পর্কে জানতে চাই। যেহেতু তিনি এই বাহিনীর প্রধান, সেহেতু জনগণের কাছে তাকেই জানাতে হবে।'
এদিকে গতকাল রবিবার বেলা ১১টার দিকে একটি পুত্রসন্তানের বাবা হয়েছেন বিজিবি নায়েক আবদুর রাজ্জাক। নবজাতক ভূমিষ্ঠ হওয়ার পরও পুরো পরিবারে দেখা গেছে শোকের আবহ।
বিডি-প্রতিদিন/২২ জুন ২০১৫/ এস আহমেদ