প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, স্বাধীন বাংলাদেশের ইতিহাসের সঙ্গে আওয়ামী লীগের নাম ওতোপ্রতোভাবে জড়িত। দেশের স্বাধীনতা ও মানুষের সেবা করার জন্য আওয়ামী লীগের জন্ম। বঙ্গবন্ধুর আদর্শে গড়া এ দেশ এগিয়ে যাচ্ছে, এগিয়ে যাবে, কেউ রুখতে পারবে না।
তিনি বলেন, বহু প্রতিকূলতা সত্ত্বেও আওয়ামী লীগ দেশের হয়ে কাজ করেছে। দলকে ধ্বংস করার জন্য বহু চেষ্টা করা হয়েছে। কিন্তু তারা ব্যর্থ হয়েছে। জনগণ কখনো বিভ্রান্ত হয়নি। তারা বরাববরই এ দলটির প্রতি আস্থা রেখেছে। তাই বারে বারে এ দলকে নিশ্চিহ্ন করার চেষ্টা করা সত্ত্বেও আওয়ামী লীগ তার আদর্শ নিয়ে দেশ সেবা করে যাচ্ছে। জনগণ ও জাতিকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে। দেশের বড় বড় অর্জন এ দলের হাত দিয়েই হয়েছে।
আওয়ামী লীগের ৬৬তম প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী উপলক্ষে জাতীয় সংসদের বাজেট অধিবেশনের গতকালের বৈঠকে অনির্ধারিত আলোচনায় সংসদ নেতা ও আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ হাসিনা এসব কথা বলেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, দীর্ঘ সময়ের আন্দোলন সংগ্রাম, ত্যাগ ও তিতিক্ষার মাধ্যমে আওয়ামী লীগ দেশবাসীর আস্থা ও বিশ্বাস লাভ করেছে। গ্রামে গঞ্জে আওয়ামী লীগের যে নেতা কর্মীরা আছেন, তারা একটি আদর্শ নিয়ে কাজ করেন। তারা দেশ সেবার একটি আদর্শ নিয়ে ব্রত নিয়ে নৌকাকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে। আদর্শের উপর দাড়িয়ে যে দল গড়ে ওঠে তাকে কেউ রুখতে পারে না।
শেখ হাসিনা বলেন, বঙ্গবন্ধু আদর্শে গড়া এ দেশ এগিয়ে যাচ্ছে, এগিয়ে যাবে, কেউ রুখতে পারবে না। দেশের স্বাধীনতা ও মানুষের সেবা করার জন্য আওয়ামী লীগের জম্ম। ৫২’র ভাষা আন্দোলন, ৬৪’র শিক্ষা আন্দোলন, ৬৬’র ৬ দফা ৬৯’র ১১ দফা ৭১’র মহান স্বাধীনতা যুদ্ধের মধ্য দিয়ে আওয়ামী লীগ দেশের স্বাধীনতার জন্য লড়াই করেছে। দেশকে স্বাধীন করেছে। আর এ ইতিহাসের মহানায়ক বঙ্গবন্ধুর ২৬ মার্চের ভাষণ থেকে দেশ ও জাতি আজো স্বাধীনতার দিক নির্দেশনা পায়।
তিনি বলেন, এখন আর বাংলাদেশ দরিদ্র দেশ নেই। আমরা এখন বিশ্বের কাছে প্রমান করেছি বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে- এগিয়ে যাবে। শুধু অর্থনীতিতে নয়, খেলাধুলায়ও আমরা এগিয়ে যাচ্ছি। ইনশাল্লাহ আমরা দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাব। বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলাদেশ গড়ে তুলতে তিনি দেশের সকল নাগরিককে দেশগড়ার কাজে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান।
শেখ হাসিনা বলেন, বঙ্গবন্ধু বলতেন যে জাতি আত্মমর্যাদায় নির্ভরশীল হয়েছে, ত্যাগ স্বীকার করেছে, সে জাতির ত্যাগ কখনো বৃথা যায় না। মহৎ অর্জনের জন্য মহৎ ত্যাগের প্রয়োজন। আওয়ামী লীগ সেই ত্যাগ করেছে। ত্যাগ করেছে বলেই বাংলাদেশের সকল অর্জন আওয়ামী লীগের হাত দিয়েই এসেছে।
তিনি বলেন, ১৯৭৫'র পর এই দলটিকে শেষ করার চেষ্টা করা হয়েছে। কিন্তু আওয়ামী লীগের তৃণমূলের নেতা কর্মীরাই এই দলটিকে সুসংগঠিত রেখেছে। ১৯৭৫ থেকে ৯৬ পর্যন্ত সাধারণ মানুষ কি পেয়েছে? তাদের কোনো অধিকার ছিল না। কিন্তু আওয়ামী লীগ আজীবন মানুষের অধিকারের জন্য সংগ্রাম করেছে। ৯৬ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর ২১ বছর পর জনগণ উপলব্ধি করতে পেরেছিল আওয়ামী লীগ জনগণের সেবক। ২০০৮ সালে আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করার সময় বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক মন্দা থাকা সত্ত্বেও এ দেশ এগিয়ে গেছে। আওয়ামী লীগকে ধ্বংস করার বহু ষড়যন্ত্র হয়েছে কেউ সফল হয়নি। আগামীতেও কেউ সফল হবে না। উপমহাদেশে যতগুলো পুরনো দল আছে তার মধ্যে আওয়ামী লীগ অন্যতম।
আওয়ামী লীগ সভানেত্রী বলেন, আওয়ামী লীগের প্রতীক নৌকা। জন্মলগ্ন থেকে আওয়ামী লীগ উজানে নৌকা ঠেলে ঠেলেই এগিয়ে যাচ্ছে। আদর্শে গড়া দলকে কেউ নিশ্চিহ্ন করতে পারে না, পারবে না। আওয়ামী লীগের পুরো ইতিহাসটি বাঙালি জাতির ত্যাগ তিতিক্ষার ইতিহাস। প্রতিটি আন্দোলন সংগ্রামে নেতৃত্ব দিয়েছে আওয়ামী লীগ। ঘাত-প্রতিঘাতের মধ্যে দিয়ে আওয়ামী লীগ প্রতিষ্ঠিত। স্বাধীনতা আওয়ামী লীগের হাত দিয়েই হয়েছে। অনেক ত্যাগ তিতিক্ষার ইতিহাস রয়েছে আওয়ামী লীগের। ত্যাগের কারণেই দেশের মানুষের আস্থা বিশ্বাস অর্জন করেছে আওয়ামী লীগ। শুরু থেকেই দেশের প্রতিটি মানুষ আওয়ামী লীগের পাশে ছিল, আছে, থাকবে।
তিনি বলেন, আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা শুরু হওয়ার ৬ মাস আগে তাকে (বঙ্গবন্ধু) কোথায় রেখেছিল তা আমরা পরিবারের কেউ জানতাম না। বঙ্গবন্ধুর আগে থেকেই পরিকল্পনা ছিলো বাংলাদেশকে স্বাধীন করবেন উনি। স্বাধীন বাংলাদেশ বিশ্বে আত্মমর্যাদা লাভ করবে, এটাই ছিলো বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন। স্বাধীনতার পর মাত্র দেড় বছরের মাথায় বঙ্গবন্ধু যে সংবিধান দিয়েছে এতো সুন্দর বিশ্বের কোথাও নেই। দেশ গঠন এবং জাতিকে এগিয়ে নেওয়ার সব কাজ বঙ্গবন্ধু করেছেন। সমুদ্রসীমা, স্থল সীমানা সব আইন বঙ্গবন্ধু করে গিয়েছিলেন। সেগুলো শুধু বাস্তবায়ন বাদ ছিল।
শেখ হাসিনা বলেন, ১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর আওয়ামী লীগ নিধন শুরু হয়। যেমনটি ১৯৭১ সালে শুরু করেছিল ইয়াহিয়া খান। বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করে ৭৫’ পরবর্তী যারা ক্ষমতায় আসে তারাও সেভাবেই আওয়ামী লীগের উপর অত্যাচার চালিয়েছে। আদর্শের উপর যে রাজনীতি দল গড়ে ওঠে, সে দলকে শেষ করা এতো সহজ না। আওয়ামী লীগ একটি আদর্শ নিয়ে গড়ে ওঠা দল। এ দলকে এতো সহজে নিশ্চিন করা যাবে না। বঙ্গবন্ধু হত্যার পর ২১ বছর পরে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এলে দেশের মানুষ বুঝতে পারে সরকার মানে সেবক। ১৯৯৬-২০০১ আওয়ামী লীগ সরকার আমল ছিল স্বর্ণযুগ। এরপর ২০০১ সালে ক্ষমতা ছাড়ার পর আবার আঘাত আসে। যারা মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে ঠাট্টা করেছে তারাই এখন বলছে বাংলাদেশ এগিয়ে চলছে। বঙ্গবন্ধুর আদর্শে গড়া দেশ এগিয়ে যাচ্ছে, এগিয়ে যাব, পিছিয়ে থাকতে পারে না।
তিনি বলেন, ক্রিকেট খেলায় এভাবে জয়ী হচ্ছে তা অনুসরণীয়। বিশ্বকাপ জয়ী দলকে হারাতে পারে রয়েল বেঙ্গল টাইগাররা। রয়েল বেঙ্গল টাইগাররা আবারও প্রমাণ করেছে বাঙালি একটু সুযোগ পেলে সব করতে পারে।
আওয়ামী লীগের ৬৭তম প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী উপলক্ষে সংসদের অনির্ধারিত আলোচনায় অংশ নেন বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ, শিল্পমন্ত্রী আমির হোসেন আমু।
বিডি-প্রতিদিন/ ২৩ জুন, ২০১৫/ রশিদা