মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক বলেছেন, মহান মুক্তিযুদ্ধে রাজনৈতিক ও সিভিলিয়ান মুক্তিযোদ্ধাদের বীরত্বের মূল্যায়ন করে খেতাব না দেওয়া হলে মুক্তিযুদ্ধ সামরিক মুক্তিযুদ্ধে পরিণত হবে। এ ব্যাপারে উদ্যোগ নিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দৃষ্টি আকর্ষণ করা হয়েছে বলে তিনি সংসদকে জানান।
সংসদের দ্বাদশ অধিবেশনে বৃহস্পতিবারের প্রশ্নোত্তর পর্বে সরকার দলীয় সদস্য মেজর জেনারেল (অব) সুবিদ আলী ভূইয়ার এক সম্পূরক প্রশ্নের উত্তরে মন্ত্রী এ কথা বলেন। বিকাল ৫-১৫ মিনিটে স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে সংসদের অধিবেশন শুরু হয়। এরআগে সুবিদ আলী ভুইয়ার লিখিত প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী বলেন, মুক্তিযুদ্ধে বিশেষ অবদান রাখার জন্য অনেককে গ্যালেন্টারি অ্যাওয়ার্ড দেওয়া হয়েছিল। তবে অনেকে বঞ্চিত হন। গ্যালেন্টারি অ্যাওয়ার্ড পুনরায় চালুর বিষয়টি সরকারের সক্রিয় বিবেচনায় রয়েছে। অপর এক সম্পূরক প্রশ্নের জবাবে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী বলেন, মুক্তিযুদ্ধে দুই ধরনের শহীদ রয়েছেন। যারা সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধে সম্মুখযুদ্ধে শহীদ হয়েছেন তারা ‘শহীদ মুক্তিযোদ্ধা’। এর বাইরে যারা পাক হানাদার বাহিনী বা তাদের দোসরদের হাতে নিহত হয়েছেন তারা ‘মুক্তিযুদ্ধের শহিদ’। এ বিষয়ে আ খ ম জাহাঙ্গীর হোসাইন (পটুয়াখালী-৩) এর লিখিত প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী বলেন, এ বিষয়ে প্রাপ্ত আবেদনসমূহ উপজেলা পর্যায়ে বাছাই-যাচাই কমিটির মাধ্যমে মুক্তিযোদ্ধাদের উপস্থিততে সরেজমিনে যাচাই বাছাইপূর্বক অচিরেই প্রকৃত তালিকা প্রণয়নের ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
অসচ্ছ্বল মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য ১০ হাজার বাসস্থান
মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক বলেছেন, দেশের শ্রেষ্ঠ সন্তান মুক্তিযোদ্ধাদের পুর্নবাসনের জন্য মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে ‘ভূমিহীন ও অসচ্ছল মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য বাসস্থান নির্মাণ’ করা হচ্ছে। ২২৭ কোটি ৯৭ লাখ টাকা ব্যয়ে এ প্রকল্প বাস্তবায়নের কাজ চলমান রয়েছে। এছাড়াও প্রতিটি জেলা/উপজেলায় মুক্তিযোদ্ধার সংখ্যানুপাতে মুক্তিযোদ্ধাদের আবাসনের নিমিত্তে ১০ হাজার ফ্ল্যাট নির্মাণ প্রকল্প প্রণয়নের কাজ হাতে নেয়া হয়েছে। প্রশ্নোত্তর পর্বে মনিরুল ইসলামের (যশোর-২)তারকা চিহ্নিত প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী একথা বলেন।
এসময় মন্ত্রী আরও জানান, বীর মুক্তিযোদ্ধাদের কল্যাণার্থে প্রধানমন্ত্রীর প্রতিশ্রুত গুরুত্বপূর্ণ এ প্রকল্পটিতে দেশের সব উপজেলায় মোট ২ হাজার ৯৭১ টি ইউনিট বাসস্থান নির্মাণের সংস্থান আছে। এ যাবত ২ হাজার ৫৪১টি ইউনিট নির্মানের অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। এ পর্যন্ত ১ হাজার ৭৫৫টি বাসস্থানের নির্মাণ কাজ শেষ হয়েছে। ৭২৪টি বাসস্থানের নির্মাণ কাজ চলমান রয়েছে এবং ৬২টি বাসস্থান নির্মানের জন্য দরপত্র বিজ্ঞপ্তি জারির বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।
মুক্তিবার্তার তালিকায় মুক্তিযোদ্ধার সংখ্যা ১,৫১,৮৬১ জন
মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক বলেছেন, মুক্তিবার্তা বা লাল বইয়ে অন্তর্ভুক্ত মহান মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণকারী মুক্তিযোদ্ধার সংখ্যা এক লাখ ৫১ হাজার ৮৬১ জন। মহিলা এমপি বেগম আখতার জাহানের তারকা চিহ্নিত এক প্রশ্নের জবাবে এ তথ্য জানান মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী।
একাত্তরে সম্মুখ যুদ্ধের রণাঙ্গনের স্থানে স্মৃতিসৌধ নির্মিত হবে
মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক বলেছেন, বর্তমান সরকার সারাদেশে ১৯৭১ সালে সম্মুখ যুদ্ধের রণাঙ্গণের স্থান ও বধ্যভূমিতে মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিসৌধ নির্মাণ কারার উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। এছাড়া সারাদেশে যুদ্ধকালীন বধ্যভূমিতেও মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিসৌধ নির্মাণ করা হবে। এজন্য মুক্তিযুদ্ধের ঐতিহাসিক স্থানসমূহ সংরক্ষণ শীর্ষক প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে। প্রকল্পগুলো অনুমোদনের পর্যায়ে রয়েছে। মহিলা এমপি দিলারা বেগমের তারকা চিহ্নিত প্রশ্নের জবাবে একথা বলেন তিনি।
বিডি-প্রতিদিন/ ২৯ সেপ্টেম্বর, ২০১৬/ আফরোজ