মহামান্য রাষ্ট্রপতি এ্যাডঃ মোঃ আব্দুল হামিদ বলেছেন, রবীন্দ্রনাথ কেবল তার সময়ের কবি নন, তিনি ছিলেন সর্বকালের কবি। তিনি বাংলা সাহিত্যকে পূর্ণতা দিয়েছেন, দিয়েছেন বিশ্ব সমাজে উচ্চ প্রতিষ্ঠা ও মর্যাদা। তিনি ছিলেন একাধারে কবি, সঙ্গীতজ্ঞ, কথা সাহিত্যিক, নাট্যকার, চিত্রশিল্পী, প্রাবন্ধিক, দার্শনিক, শিক্ষাবিদ ও সমাজ সংস্কারক। বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ছিলেন বাংলা সাহিত্যের একজন দিকপাল ও উজ্জল নক্ষত্র। তার সাহিত্য সম্ভার একদিকে যেমন বিশাল তেমনই আপন মহিমায় তা বর্ণাঢ্য। তার কালজয়ী লেখায় একদিকে বাংলাভাষা ও সাহিত্য যেমন শুদ্ধ হয়েছে তেমনই বিশ্ব সাহিত্যের অপরিহার্য উপাদানে পরিনত হয়েছে আপন বৈভব, আঙ্গিক, বহুমাত্রিকতা আর সার্বজনিনতায়।
রাষ্ট্রপতি বলেছেন, রবীন্দ্রনাথ সুবিধাবঞ্চিত বাঙালির প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করেছিলেন। তাদের কল্যাণ সাধনে ও সুশিক্ষিত করে তোলার জন্য লেখালেখির পাশাপাশি সমাজকর্মী ও সমাজ সংস্কারক হিসেবে কাজ করে গেছেন। তিনি সংকীর্ন জাতীয়তাবাদ নয়, তিনি বাঙালীকে বিশ্ববাদে দিক্ষা দিতে চেয়েছেন। দরিদ্র প্রজাদের ভাগ্যোন্নয়নের জন্য কৃষি ব্যাংক, সমবায় ব্যাংক, সমবায়নীতি ও কল্যাণবৃত্তি চালু করেছিলেন। কবি ছিলেন দার্শনিক, সমাজ ভাবুক এবং পল্লী সংস্কারক। গ্রামকে অবজ্ঞা করে নগর নির্ভরতা, শিক্ষিত শ্রেণি-নির্ভরতা ‘ভদ্রলোকের ভারতবর্ষ’ গড়ার বিরোধী ছিলেন তিনি। আজও রবীন্দ্রনাথ আমাদের ব্যক্তি ও সামাজিক জীবনধারায় প্রত্যয়ে ও প্রত্যাশায় সমভাবে প্রাসঙ্গিক। স্বদেশপ্রেম, মানবতাবাদ, বাঙালী জাতীয়তাবাদ ও বিশ্ব বোধ প্রতিষ্ঠায় তার রচনাবলী এবং কর্মধারা নিঃসন্দেহে প্রেরণার অসীম উৎস। তাই রবীন্দ্রনাথের বিশালতা এবং তার সৃষ্টির অপূর্ব মাধুর্যকে অন্তরাত্মা দিয়ে উপলব্ধি করতে হলে রবীন্দ্র চর্চার কোন বিকল্প নাই। তিনি বিকাল ৩টায় রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের স্মৃতি বিজড়িত নওগাঁর পতিসরে কবির ১৫৬তম জন্ম জয়ন্তী উপলক্ষে কেন্দ্রীয় কর্মসূচীর আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে একথা বলেছেন।
সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রনালয় কর্তৃক পতিসর কাছারী বাড়ি সংলগ্ন দেবেন্দ্র মঞ্চে আয়োজিত আলোচনা সভায় সভাপতিত্ব করেন সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রী আসাদুজ্জমান নুর এমপি। এ অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন বস্ত্র ও পাট মন্ত্রী মুহাঃ ইমাজ উদ্দিন প্রামানিক এমপি এবং স্থানীয় সংসদ সদস্য মোঃ ইসরাফিল আলম। এ সময় অন্যান্যের মধ্যে সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের ভারপ্রাপ্ত সচিব ইব্রাহীম হোসেন খান বক্তব্য রাখেন। অধ্যাপক ড. হায়াৎ মামুদ আলোচনা সভায় স্মারক বক্তব্য উপস্থাপন করেন। নওগাঁর জেলা প্রশাসক ড. মোঃ আমিনুর রহমান ধন্যবাদ জ্ঞাপন করে বক্তব্য রাখেন। এ সময় জাতীয় সংসদের হুইপ এ্যাড. শহিদুজ্জমান সরকার এমপি, জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মোঃ আব্দুল মালেক এমপি, ছলিম উদ্দিন তরফদার এমপি, রাজশাহী বিভাগীয় কমিশনার নুর উর রহমান, রাজশাহী রেঞ্জের পুলিশের ডিআইজি এম খুরশিদ হোসেন, জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ফজলে রাব্বী বকু, নওগাঁর পুলিশ সুপার মোজাম্মেল হকসহ বিভিন্ন পর্যায়ের সরকারী কর্মকর্তা, রাজনৈতিক ব্যক্তিবর্গ এবং বিশিষ্ট ব্যক্তিরা উপস্থিত ছিলেন।
পরে দেবেন্দ্র মঞ্চে ঢাকা শিল্পকলা একাডেমী, নওগাঁ জেলা শিল্পকলা একাডেমী, রানীনগর শিল্পকলা একাডেমী এবং আত্রাই উপজেলা শিল্পকলা একাডেমীর শিল্পীরা সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান পরিবশেন করেন।