রাষ্ট্রপতির ভাষণ সম্পর্কিত ধন্যবাদ প্রস্তাবের ওপর আলোচনায় অংশ নিয়ে সরকার দলীয় এমপিরা বলেছেন, আওয়ামী লীগ বিজয়ী না হলে দেশের সকল উন্নয়ন ও সমৃদ্ধির ধারাকে বিএনপি ধ্বংস করে দিত, দেশকে আবারও অন্ধকারের দিকে নিয়ে যেত। একাদশ জাতীয় নির্বাচনে বিএনপি প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে নয়, প্রশ্নবিদ্ধ করার ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবে নির্বাচনে এসেছিল। কিন্তু দেশের মানুষ সঠিক সিদ্ধান্তের কারণে তাদের সব ষড়যন্ত্র ভেস্তে গেছে। কিন্তু তা এখনও শেষ হয়নি।
তবে সংসদের বিরোধী দলের সদস্য ব্যাংক খাতে দুর্নীতির সমালোচনা করে বলেন, ব্যাংক খাতে দুর্নীতি ক্যান্সারের মতো ছড়িয়ে পড়েছে। বর্তমানে ৯৯ হাজার ৩৭০ কোটি টাকা ঋণখেলাপী।
স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে আজ সোমবার সংসদের বৈঠকে রাষ্ট্রপতি ভাষণ ওপর আনীত ধন্যবাদ প্রস্তাবের ওপর সাধারণ আলোচনায় অংশ নেন ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাভেদ, সরকারি দলের সদস্য মৃণাল কান্তি দাস, কাজী কেরামত আলী, নারী নেত্রী আরমা দত্ত, আফতাব উদ্দিন সরকার, বিরোধী দল জাতীয় পার্টির মো. মুজিবুল হক চন্নু, মো: শাহিদুজ্জামান প্রমুখ।
একাদশ জতীয় সংসদের প্রথম অধিবেশনে দেওয়া রাষ্টপতির ভাষণকে একপেশে উল্লেখ করে বিরোধীদলীয় সদস্য মুজিবুল হক চুন্নু বলেন, রাষ্ট্রপতির ভাষণটি আমি ভালোভাবে পড়েছি। কিন্তু ভাষণটিকে স্বতস্ফূর্তভাবে সমর্থন করতে পারছি না। কারণ আমার মনে হয়েছে রাষ্ট্রপতির ভাষণটি একপেশে। সরকারের উন্নয়ন কর্মকাণ্ড সমর্থন করে ভাষণে তুলে ধরা হয়েছে। কিন্তু দেশে অনেক সমস্যা আছে সেগুলোর কথা বলা হয়নি। এই সমস্যাগুলো তুলে ধরে তা কীভাবে সমাধান করা যায় তার একটা রোডম্যাপ রাষ্ট্রপতির ভাষণে থাকলে আমরা বিরোধী দল সর্বসম্মতভাবে সমর্থন করতে পারতাম।
তিনি বলেন, দেশে লাখ লাখ বেকার তরুণ রয়েছে। এদের বেকারত্ব দূর করতে কি করা যায় সে বিষয়ে যদি রাষ্ট্রপতির ভাষণে দিক-নির্দেশনা থাকতো তাহলে ভালো হতো। বিরোধী দলের এই সদস্য ব্যাংক খাতে দুর্নীতির সমালোচনা করে বলেন, দেশের রক্তক্ষরণের নাম হচ্ছে ব্যাংকিং খাত। ব্যাংকখাতে দুর্নীতি ক্যান্সারের মতো ছড়িয়ে পড়েছে। ব্যাংকগুলোতে বর্তমানে ৯৯ হাজার ৩৭০ কোটি টাকা ঋণখেলাপী। গত ১০ বছরে ব্যাংকখাতে দুর্নীতি হয়েছে সাড়ে ১০ হাজার কোটি টাকার মতো। ব্যাংক সুদের হার এক শতাংশের নিচে নামিয়ে আনার কথা দিলেও বেশিরভাগ ব্যাংক তা বাস্তবায়ন করেনি। ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদের যোগসাজশ ছাড়া এতো দুর্নীতি কখনো হতে পারে না।
ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাভেদ বলেন, একাদশ নির্বাচনকে প্রশ্নবিদ্ধ করতে যে ষড়যন্ত্র শুরু হয়েছিল, তা এখনও শেষ হয়নি। একাদশ জাতীয় নির্বাচনটা ছিল গণতন্ত্র রক্ষা, উন্নয়ন-সমৃদ্ধি ধরে রাখার নির্বাচন। আর এ নির্বাচনে দেশের জনগণ সঠিক সিদ্ধান্তই নিয়েছে। নইলে সরকারের বিশাল এ উন্নয়ন ধ্বংস হয়ে যেত। আসলে নির্বাচনকে প্রশ্নবিদ্ধ করতেই বিএনপি নির্বাচনে এসেছিল, প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে নয়।
তিনি আরো বলেন, দেশের জনগণ বারবার কিন্তু আওয়ামী লীগকেই ভোট দিয়েছে, কিন্তু নীলনকশার নির্বাচনের মাধ্যমে ১৯৯১ ও ২০০১ সালে আওয়ামী লীগকে হারানো হয়েছে।
মৃণাল কান্তি দাস বলেন, এতিমের টাকা আত্মসাতের দায়ে খালেদা জিয়া বর্তমানে কারাগারে। তার পুত্র তারেক রহমান একজন শীর্ষ সন্ত্রাসী ও দণ্ডিত দুর্নীতিবাজ। লুটেরা এই জিয়া পরিবারের সকল অপকর্মের ও কদর্য মুখোশ উন্মোচন করতে হবে। প্রধানমন্ত্রীর মতো প্রাজ্ঞ নেতৃত্বে যে দেশে রয়েছে, সেই দেশটি কোনদিন পেছনে পড়ে থাকতে পারে না। তবে আমাদের সবাইকে আত্মঅহমিকা কিংবা ক্ষমতার দাপট না দেখিয়ে প্রধানমন্ত্রীকে সর্বাত্মক সহযোগিতার মাধ্যমে দেশের মানুষের মনকে আরও জয় করতে হবে।
তিনি বলেন, কোন প্রভাবশালীর প্রভাবে নদীর অবৈধ দখল উচ্ছেদ প্রক্রিয়া কোনভাবেই থামানো যাবে না। আগামী প্রজন্মের জন্য রাজধানীকে বাসযোগ্য করে যেতেই হবে।
সাবেক প্রতিমন্ত্রী কাজী কেরামত আলী বলেন, দীর্ঘ ১০ বছরে বর্তমান সরকার সারাদেশে ব্যাপক উন্নয়ন করেছে। নির্বাচনের সময় আমরা ভোটারদের দ্বারে দ্বারে গিয়ে ভোট ভিক্ষা চেয়েছি। কিন্তু বিএনপি নির্বাচনে ভোটই চায়নি। এলাকায় না গিয়ে ঢাকায় বসে নির্বাচনকে প্রশ্নবিদ্ধ করার চেষ্টা করেছে। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এলেই দেশের উন্নয়ন হয়। তাই দেশবাসী এবারের নির্বাচনেও আওয়ামী লীগের পক্ষে গণরায় দিয়েছেন।
বিডি প্রতিদিন/ফারজানা