ঢাকা-চট্টগ্রাম-দুবাইগামী বাংলাদেশ বিমানের একটি ফ্লাইটের ছিনতাইয়ের ঘটনায় সংসদে ৩০০ বিধিতে বিবৃতি দিয়েছেন বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন প্রতিমন্ত্রী মাহবুব আলী।
এসময় তিনি জানান, বেসরকারি বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ, পর্যটন মন্ত্রণয়ের পক্ষ থেকে একজন অতিরিক্ত সচিবের নেতৃত্বে ৫ সদস্যের তদন্ত টিম গঠন করা হয়েছে। এরপরই সর্বদলীয় সংসদীয় তদন্ত কমিটি গঠনের দাবি জানান বিরোধী দল জাতীয় পার্টির এমপি রুস্তম আলী ফরাজী।
স্পিকার ড. শিরীন চৌধুরীর সভাপতিত্বে সংসদে সোমবার বৈঠকে ৩০০ বিধিতে বিবৃতি দিয়ে বিমান প্রতিমন্ত্রী মন্ত্রণালয়ের অবস্থান সংসদকে অবহিত করেন।
বিমান প্রতিমন্ত্রী মাহবুব আলী বলেন, গতকাল ২৪ ফেব্রুয়ারি বিকেল ৫টা ১৩ মিনিটে ঢাকা-চট্টগ্রাম-দুবাইগামী বাংলাদেশ বিমানের বিজি-১৪৭ বিমানটি ঢাকা বিমানবন্দর ত্যাগ করে চট্টগ্রাম যায় এবং সেখান থেকে যাত্রী নিয়ে দুবাই যাত্রা করে।
পূর্ব সিডিউল অনুযায়ী বিমানটি ৫টা ৪২ মিনিটে চট্টগ্রাম বিমানবন্দরে অবতরণ করে। অবতরণের পূর্বে বিমানে যাত্রী বেশে একজন আকস্মিক ব্যক্তি যাত্রীদের ভয়-ভীতি প্রদর্শন এবং বিমান উড়িয়ে দেয়ার হুমকি ও চিৎকার করতে থাকে। তবে বিমানের কর্তব্যরত ক্যাপ্টেন অত্যন্ত বুদ্ধিমত্তা, পেশাদারিত্ব ও সাহসিকতার সঙ্গে দুষ্ককৃতিকারীকে কথপোকথনে ব্যস্ত রেখে কালক্ষেপণ করে, ইতোমধ্যে বিমানের ক্রুদের সহায়তায় সকল যাত্রীদের নিরাপদে বের করে নিযে আসা হয়।
তিনি আরও বলেন, ঘটনা চলাকালে বিমান বাহিনীর বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ, আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, ফায়ার সার্ভিসহ সকল সংস্থার তড়িৎ ব্যবস্থার ফলে যাত্রী ও ক্রুদের নিরাপদ স্থানে নিতে সক্ষম হয়। সেনাবাহিনীর কমান্ডো ও র্যাবের একটি চৌকস দল বিমানবন্দরে অস্থান করে। কমান্ডো দল বিমানের ভেতরে প্রবেশ করে এবং ঝটিকা আক্রমণ করে দুষ্কৃতিকারীকে নিষ্কৃয় করে। এক পর্যায়ে কমান্ডো বাহিনীর দুর্বার অভিযানে ছিনতাইকারী আহত হয়ে, পরে মৃত্যুবরণ করে। বিমানটিতে ১৪৮ জন যাত্রী ৭ জন ক্রু সকলেই নিরাপদে আছেন এবং বিমানটি অক্ষুত রয়েছে।
এরপর পয়েন্ট অব অর্ডারে দাঁড়িয়ে বিরোধী দল জাতীয় পার্টির মো. রুস্তম আলী ফরাজী বলেন, বাংলাদেশ বিমান জাতীয় সম্পদ। কিন্তু এই বিমান নিয়ে প্রায়ই দুর্ঘটনাগুলো ঘটছে। কখনো দেখি একটা পাখি ঢুকছে, কখনো দেখি চাকা একটা বন্ধ হয়ে গেছে।
গতকাল এই যে ব্যক্তিটি গেলেন, যেখানে ৪টি ধাপে চেক করে তারপর ভেতরে ঢুকতে হয়। সারা পৃথিবীতে এই নিয়ম। আমাদের দেশে তারপরেও একটা লোক সেখানে অস্ত্র নিয়ে কি করে গেল? তিনি বলেন, তদন্ত কমিটি একটা ফরমাল প্রসেস, কখনো তদন্ত রিপোর্টে বের হয়ে, কখনো বের হয় না। এটা দিয়ে আসল তথ্য বের হবে না। ঘটনাটা কেন ঘটছে? সিভিল এভিয়েশন, মন্ত্রণালয়ের কী দায়িত্ব পালন করেছে?
ডা. ফরাজী আরও বলেন, বিমানে কত মানুষ ছিল। এটা সহজভাবে নিতে পারি না। সাধারণভাবে তদন্ত করলে হবে না, যদি তদন্ত করতে হয়, সেইভাবে উচ্চ পর্যায়ে তদন্ত হওয়া দরকার। সংসদ সদস্যদের যুক্ত করে তদন্ত করে এই সংসদকে দ্রুত জানাতে হবে। প্রতিরক্ষার ব্যবস্থাটা আজকেই করতে হবে। যেহেতু অস্ত্র নিয়ে গেছে একটা ঘটনা ঘটতে পারত, যদি চট্টগ্রামে না নামত। সচিবের নিচে কারো দিয়ে তদন্ত কমিটি হতে পারে না। সংসদ সদস্যদের নিয়ে সর্বদলীয় সদস্য নিয়ে তদন্ত হওয়া উচিত। তদন্ত করে সংসদকে জানাতে হবে। এটা প্রতিষ্ঠিত হতে হবে যে ভবিষতে কখনো কোন দিনই এধরণের ঘটনা ঘটবে না। তানাহলে মানুষ আমাদের বিমানে উঠবে না।
বিডি প্রতিদিন/২৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৯/আরাফাত