দুর্নীতির ‘রাঘব-বোয়াল’রা ধরা না পড়ায় শুদ্ধি অভিযান ‘আইওয়াশ’ কিনা জনমনে প্রশ্ন উঠেছে বলে মন্তব্য করেছেন রুহুল কবির রিজভী। সোমবার নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব এই মন্তব্য করেন।
তিনি বলেন, ‘‘চারিদিকে ডুবে গেছে লুটপাট, খুন, ধর্ষণ, মদ, জুয়া, ক্যাসিনো, চাঁদাবাজি, অনাচারে। ক্ষমতাসীন সন্ত্রাসীরা চাঁদাবাজ, টেন্ডারবাজ হরিলুটে গোটা দেশটা ফাঁপা ফোকলা হয়ে গেছে। এই অবস্থায় একটি ইতিবাচক আলোচনায় থাকতে দুর্নীতি-অনাচারের বিরুদ্ধে আকস্মিক এই অভিযান আইওয়াশ কিনা এ নিয়ে জনমনে প্রশ্ন তৈরি হয়েছে। এই অভিযানে যাদের নাম মুখে মুখে তারা কিন্তু এখনো গ্রেপ্তার হয়নি। কারণ লোক দেখানো এই অভিযানে অধরাই থেকে যাচ্ছেন মাদক ও দুর্নীতিবাজদের গডফাদাররা। প্রশ্ন হলো-অঙ্গসংগঠনের চুনোপুঁটি শামীম (জি কে শামীম) যদি ৯ হাজার কোটি টাকার সরকারি কাজ করে, অফিসে পাওয়া যায় শত শত কোটি টাকা, তাহলে মূল সংগঠনের নেতাদের অবস্থা কি? বড় বড় রাঘব-বোয়াল, রুই-কাতলা-মৃগেলদের কী দশা? মন্ত্রী ও তার উপরের কী অবস্থা, রাষ্ট্র কী আসলে আছে-এটা জনগনের প্রশ্ন।”
রিজভী অভিযোগ করে বলেন, ‘‘বাংলাদেশের ব্যাংকগুলো এখন দেউলিয়া করে আওয়ামী লীগ, যুবলীগ নেতাদের ঘরে ঘরে এখন ব্যাংক, টাকশাল বানানো হয়েছে। বিদেশে লাখ লাখ কোটি টাকা পাচার করছে, পাচারের পর উদ্ধৃত্ত টাকা থেকে যাচ্ছে ঘরে। দেশটাকে দেউলিয়া করে দিচ্ছে বর্তমান প্রধানমন্ত্রীর পিতার আক্ষেপের সেই ‘চাটার দল’। সরকারি দলের অঙ্গসংগঠনের টুনোপুঁটি নেতারা আঙ্গুল ফুলে একেকটা বটগাছ হয়ে গেছে। ক্ষমতাসীন যুবলীগের নেতারা ঢাকায় চালাচ্ছে ৬০টি ক্যাসিনো, ঢাকার বাইরেও রয়েছে আরো অসংখ্য ক্যাসিনো। যেখানে প্রতি রাতে শত শত কোটি টাকা উড়ছে জুয়ার টেবিলে। মাদক ব্যবসা চলছে দেদারছে। এর পাশাপাশি অবৈধ নাইট ক্লাব, পানশালা, বাগানবাড়ি এমনকি তাদের ঘরে জুয়া ও মাদকের আসর বসছে। আমরা ছোটবেলা শুনেছি ঢাকা হচ্ছে মসজিদের শহর আর এই শহরকে আওয়ামী লীগ সরকার পরিণত করেছে ক্যাসিনো শহরে।”
তিনি বলেন, ''চুটোপুঁটিরা লুটপাটের ছিটেফোঁটা পেয়ে যদি শত শত কোটি টাকার মালিক হয়, তবে বড় নেতারা যে লুটের কুমির তা বুঝতে আর দেশবাসীর বাকি নেই।”
ক্যাসিনো ব্যবসা নিয়ে সরকারের মন্ত্রীদের বক্তব্যের জবাবে রিজভী বলেন, ‘‘আওয়ামী লীগ-যুব লীগের দুর্নীতি, লুটপাট, অবৈধ অস্ত্র, সন্ত্রাস, টর্চার সেল, নির্যাতন, দখল, চাঁদাবাজি, ক্যাসিনোসহ গুরুতর সব অপরাধের থলের বেড়াল বেরিয়ে আসার কারণে হিতাহিত জ্ঞানশূণ্য হয়ে পড়েছেন সরকারি দলের নেতরা। তারা বলছেন, শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান নাকি দেশে প্রথম জুয়া চালু করেছেন, ঢাকাকে ক্যাসিনো শহর বানিয়েছে নাকি বিএনপি। এই কথা শুনে একটি প্রবাদের কথা মনে পড়ছে-দুর্জনের ছলের প্রয়োজন হয়, দুবৃর্ত্তের প্রয়োজন হয় মিথ্যার। দেশে ক্ষমতাসীনরা কোন কালে কেলেঙ্কারি করলে যখন আর সামাল দিতে পারে না তখন তারা জনগণের দৃষ্টি ভিন্নখাতে নিতে দোষ উদর পিণ্ডি বুদোর ঘাড়ে চাপায়। রাষ্ট্রপতি জিয়ার আমলে ক্যাসিনো, মাদক, ইয়াবার নাম মানুষ শুনেছে কিনা তখনও তো আমরা স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ি। আমরা কখনো শুনিনি, শহীদ জিয়ার আমলে ক্যাসিনোর মানেই মানুষ জানতো না। অথচ ক্ষমতাসীনরা অবলীলায় মিথ্যা কথা বলে নিজেদের পাপ, নিজের অপকর্ম অন্যের ঘাড়ে চাপাতে লজ্জা করেনি তাদের, লজ্জার জায়গাটা আওয়ামী লীগ নেতারা খুলে ফেলে দিয়েছে। তারা ফেঁসে গেলে সব দোষ হবে বিএনপির।”
রিজভী বলেন, ‘‘জিয়াউর রহমান এদেশের বহুদলীয় গণতন্ত্রের প্রবর্তক আর আওয়ামী লীগ গণতন্ত্র হত্যা করে একদলীয় বাকশালের প্রবর্তক। সুতরাং জিয়াউর রহমান ও বিএনপির সাথে আওয়ামী লীগের মৌলিক পার্থক্য আছে। বিএনপি মানে বহুদলীয় গণতন্ত্র, বিএনপি মানেই জবাবদিহিতা। আওয়ামী লীগ মানে ক্যাসিনো, আওয়ামী লীগ মানে শত শত, লক্ষ লক্ষ কোটি টাকা দেশ থেকে পাচার। দুর্নীতির ডাক নাম হচ্ছে আওয়ামী লীগ।”
সংবাদ সম্মেলনে দলের ভাইস চেয়ারম্যান খায়রুল কবির খোকন, যুগ্ম মহাসচিব খায়রুল কবির খোকন, কেন্দ্রীয় নেতা আবদুস সালাম আজাদ, আসাদুল করিম শাহিন, মুনির হোসেন প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
বিডি-প্রতিদিন/মাহবুব