ভারতের কলকাতার পার্ক স্ট্রিটের বেডফোর্ড লেনের ভাড়া বাড়িতে আলি আহমেদ নামে থাকতেন বঙ্গবন্ধুর খুনি আবদুল মাজেদ। গত শনিবার রাতে ঢাকায় খুনি মাজেদের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হওয়ার পর গতকাল সোমবার কলকাতার বর্তমান পত্রিকা ‘ঘাতকের ডেরা’ শীর্ষক এক ধারাবাহিক প্রতিবেদন প্রকাশ শুরু করেছে। প্রথম প্রতিবেদনের শিরোনাম ‘বঙ্গবন্ধুর ঘাতক মাস্টারমশাই! বিশ্বাস হচ্ছে না পার্ক স্ট্রিটের সেই মহল্লার।’
প্রতিবেদনে কলকাতার পার্ক স্ট্রিটের বেডফোর্ড লেনে ঘাতক মাজেদের আত্মগোপনের দিনগুলোর বর্ণনা করা হয়েছে। বলা হয়েছে, মহল্লা তাঁকে কখনো উচ্চস্বরে কথা বলতে দেখেনি। লোকটা পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়তেন নিয়ম করে। সেই তাদের মাস্টারমশাই নাকি বঙ্গবন্ধুর খুনি! এখনো ঠিক বিশ্বাস করে উঠতে পারছে না লকডাউনের পার্ক স্ট্রিট। এই পার্ক স্ট্রিটের বেডফোর্ড লেনের ভাড়া বাড়িতে থাকতেন বঙ্গবন্ধুর ঘাতক আবদুল মাজেদ।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত ৭ এপ্রিল বাংলাদেশের মিরপুরে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের খুনি আবদুল মাজেদ গ্রেফতারের পর সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত ছবি দেখে রীতিমতো অবাক বেডফোর্ড লেনের বাসিন্দারা!
কিন্তু আবদুল মাজেদ নয়! পার্ক স্ট্রিট তাঁকে চেনে আলি আহমেদ ওরফে ইংরেজির মাস্টারমশাই হিসেবে। এলাকার লোকে জানত, সেন্ট জেভিয়ার্স কলেজে থেকে পাশ করেছেন মাস্টারমশাই। টিউশন পড়িয়ে সংসার চালাতেন তিনি। প্রথমে তালতলার ভাড়া বাড়িতে একাই থাকতেন মাজেদ। পরে পার্ক স্ট্রিটে চলে আসেন।
২০১১ সালে তাঁর থেকে ৩২ বছরের ছোট উলুবেড়িয়ার সেলিনা বেগমকে বিয়ে করেন তিনি। তাঁদের ৬ বছরের এক মেয়ে রয়েছে। বেশ কিছুদিন ধরেই ৭২ বছর বয়সী মাজেদের শরীরটা ভালো যাচ্ছিল না। চলতি বছরের জানুয়ারি মাসে পিজি হাসপাতালে একপ্রস্থ পরীক্ষা-নিরীক্ষাও হয়।
২২ ফেব্রুয়ারি পিজি হাসপাতাল থেকে সেই রিপোর্ট আনতে বাড়ি থেকে বের হন তিনি। সেটাই শেষ, আর বাড়ি ফেরা হয়নি মাজেদের। স্বভাবতই উদ্বিগ্ন স্ত্রী রাতে পার্ক স্ট্রিট থানায় নিঁখোজের ডায়েরি করেন। তদন্তে শুরু করে পার্ক স্ট্রিট থানা। পিজি হাসপাতালের সিসিটিভি ফুটেজ ঘাটলেও হদিশ মেলে না মাজেদের।
এরপর পুলিশ মাজেদের ভাড়া বাড়ি থেকে একটি ব্যাগ পায়। সেই ব্যাগে তল্লাশি চালিয়ে সিম কার্ড, আধার কার্ড, ভোটার আইডি, ভারতীয় পাসপোর্ট এবং এক মহিলাসহ তিনজন শিশুর ছবি পাওয়া যায়। স্ত্রী সেলিনা পুলিশকে জানায়, ব্যাগের মতো তাঁর অন্যান্য ব্যক্তিগত জিনিসে কাউকে হাত দিতে দিতেন না মাজেদ।
মহল্লায় খুব একটা মেলামেশা করতেন না তিনি। টিউশনির পাশাপাশি বড়জোর এলাকার এক চায়ের দোকান, রেশন দোকান এবং এক বিল্ডার্সের দোকানে আড্ডা দিতেন মাজেদ। বাড়ির দরজায় সব সময় তালা লাগানো থাকত। বাইরের কাউকে বাড়িতে ঢুকতে দেওয়া হতো না। এক আধ বছর নয়, এভাবেই আঠারো-উনিশ বছর কলকাতায় আত্মগোপন করেছিলেন আবদুল মাজেদ।
সূত্র: বর্তমান
বিডি প্রতিদিন/ ওয়াসিফ