প্রণব মঠ ঢাকার অধ্যক্ষ স্বামী সঙ্গীতানন্দ মহারাজ বলেছেন, ‘আইন সংস্কারের নামে মন্দির ভেঙে ও হিন্দু সম্প্রদায়ের বাড়িঘরে হামলা চালিয়ে ধর্মীয় উগ্রবাদ ছড়ানোর ষড়যন্ত্রে নেমেছেন ডেইলি স্টার সম্পাদক মাহফুজ আনাম ও শাহীন আনাম গং। এর মাধ্যমে তারা প্রধানমন্ত্রীকে হিন্দুদের নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থ প্রমাণ করতে চান। বাংলাদেশ যাতে আর কোনো মন্দির ভাঙা না হয় ও হিন্দু সম্প্রদায়ের বাড়িঘরে ভাঙচুর না করা হয় এ জন্য এখনই চক্রান্তকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতি অনুরোধ জানাচ্ছি। আমরা সবসময় প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সরকারের সাথে সুসম্পর্ক বজায় রাখতে চাই ও প্রধানমন্ত্রী মঙ্গল কামনা করি।’
হিন্দু ধর্মীয় আইন পরিবর্তন প্রচেষ্টার প্রতিবাদে রবিবার হিন্দু সম্প্রদায়ের সকল ধর্মীয় সংগঠনের সমন্বয়ে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে (ডিআরইউ) আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন তিনি।
স্বামী সঙ্গীতানন্দ মহারাজ বলেন, ‘মাহফুজ আনামরা সরকার ও হিন্দু সম্প্রদায়ের মধ্যে ফাটল ধরাতে তৎপর। তারা চায় হিন্দু সম্প্রদায়কে সরকারের প্রতিপক্ষ বানাতে। এজন্য তারা আইন সংস্কারের নামে চক্রান্তে নেমেছে। কিন্তু বাস্তবতা হল আমাদের সনাতন ধর্মে অন্য ধর্মের কেউ হাত দেওয়ার অধিকার নেই। এই সনাতন ধর্ম হাজার বছর ধরে নিজস্ব নিয়মে চলে আসছে। এখানে অন্য ধর্মের কেউ হাত দেওয়ার অধিকার নেই। আমরাও অন্য ধর্মে হাত দিতে চাই না। এটাই প্রাকৃতিক নিয়ম।’
তিনি বলেন, ‘প্রকৃতির নিয়মের বিরুদ্ধে গিয়ে আমাদের সনাতন ধর্মে হাত দেওয়ার অধিকার মাহফুজ আনামের নেই। হাজার হাজার বছর আমাদের হিন্দু ধর্ম নিজস্ব নিয়মকানুন মেনে সনাতন পদ্ধতিতে চলে আসতেছে। মাহফুজ আনামরা আমাদের ধর্মে নারীর অধিকারের কথা বললেও বাস্তবতা হল এ ধর্মে কারো অধিকার কখনো খর্ব হয় নাই। তারা সনাতন ধর্মের আইনের অপব্যাখ্যা করে দেশে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করতে চাচ্ছেন। হাজার হাজার বছর ধরে সুশৃংখলভাবে চলে আসা সনাতন ধর্মের বিরুদ্ধে মাহফুজ আনামরা চক্রান্তে নেমেছেন। তারা সরকার ও হিন্দু সম্প্রদায়ের মধ্যে চলমান সৌহাদ্যপূর্ণ সম্পর্কের মধ্যে ফাটল ধরাতে চাচ্ছেন।’
সঙ্গীতানন্দ মহারাজ বলেন, ‘এদেশে মুসলমান-হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান সু-সম্পর্ক বজায় রেখে চলছে। এটা তাদের সহ্য হচ্ছে না। তাই মাহফুজ আনামরা চক্রান্তে নেমেছেন সে সম্পর্কে যাতে নষ্ট হয়ে যায়।’
তিনি বলেন, ‘জননেত্রীর বাংলাদেশ আমরা অত্যন্ত সুন্দরভাবে জীবন যাপন করে আসছি।সরকারের এজন্য তাদের গা জ্বালাপোড়া করছে। তাই আইন সংস্কারের নামে সরকারের সাথে আমাদের সম্পর্ক নষ্ট করতে চাচ্ছে তারা। আমরা বলতে চাই যদি সংস্কার করতে হয় সনাতন ধর্মের রীতি অনুযায়ী হবে। যদিও এ ধরনের কোনো কিছুরই আমাদের দরকার নেই।’
এতে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন বাংলাদেশ জাতীয় হিন্দু মহাজোটের মহিলাবিষয়ক সম্পাদক অ্যাডভােকেট প্রতিভা বাকচী। উপস্থিত ছিলেন হিন্দু মহাজোটের সভাপতি অ্যাডবোকেট বিধান বিহারী গোস্বামী, সহ-সভাপতি প্রদীপ কুমার পাল, মহাসচিব অ্যাডভােকেট গােবিন্দ চন্দ্র প্রামাণিক, যুগ্ম মহাসচিব সুজন দে, অ্যাডবোকেট লাকী বাছার, আন্তর্জাতিকবিষয়ক সম্পাদক নরেশ চন্দ্র হালদার, প্রকাশনা সম্পাদক সাগরিকা মণ্ডল, হিন্দু মহাজোট ঢাকা মহানগরের সভাপতি ডিকে সমির, বাংলাদেশ মতুয়া মহাসংঘের মহাসচিব সাগর সাধু ঠাকুর, হিন্দু আইন সংশােধন প্রতিরােধ কমিটির আহ্বায়ক অ্যাডভােকেট জে.কে পাল, হিন্দু সমাজ সংস্কার সমিতির সভাপতি অধ্যাপক হীরেন্দ্রনাথ বিশ্বাস, প্রণব মঠ ঢাকা’র অধ্যক্ষ স্বামী সঙ্গীতানন্দ মহারাজ, ব্রাহ্মণ সংসদের সভাপতি কর্নেল (অব.) নিরঞ্জন ভট্টাচার্য, মহাসচিব বিজয় কৃষ্ণ ভট্টাচার্য, ইসকনের ফুড ফর লাইফের পরিচালক রূপানুগ গৌরদাস ব্রহ্মচারী, সত্সংঘ বাংলাদেশের সভাপতি ড. রবীন্দ্রনাথ সরকার, সানতন বিদ্যার্থী পরিষদের সভাপতি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক কুশল চক্রবর্তী, বৈদিক সমাজ বাংলাদেশ সভাপতি স্বামী চিদানন্দ সরস্বতী, বৈদিক কৃষ্টি সংরক্ষন প্রক্রিয়ার প্রধান আচার্য রবীন্দ্রনাথ দেবনাথ, যােগী অরুণ জ্যোতি, বিশ্ব হিন্দু পরিষদ বাংলাদেশ চ্যাপ্টারের সভাপতি ইঞ্জিনিয়ার সহদেব বৈদ্য, হরিগুরু সেবা সংঘের সভাপতি নির্মল ঠাকুর, হিন্দু ল ইয়ার্স অর্গানাইজেশনের সভাপতি সিনিয়র এ্যাডভােকেট নারায়ন চন্দ্র দাস, সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভােকেট শঙ্কর দাস, বাংলাদেশ হিন্দু পরিষদ সাধারণ সম্পাদক সাজন মিশ্র, হিন্দু মহিলা মহাজোটের সহ-সভাপতি কাকলী নাগ, দেবী হালদার, সাধারণ সম্পাদক মুক্তা বিশ্বাস, বাংলাদেশ সেবা সংঘের বাবুল হাওলাদার সহ শতাধিক বিশিষ্ট ব্যক্তি।