ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) ও হল সংসদ নির্বাচন নিয়ে ক্যাম্পাসে বিরাজ করছে উৎসবের আমেজ। প্রায় ছয় বছর পর আরেকটি নির্বাচন দেখতে যাচ্ছেন শিক্ষার্থীরা। তবে এই উৎসবের আমেজের মধ্যেই ঘটছে কিছু অপ্রীতিকর ঘটনাও।
কারাগারে ডাকসু ভিপি প্রার্থী জালাল : ডাকসু ভিপি প্রার্থী জালাল আহমেদকে হত্যাচেষ্টা মামলায় কারাগারে পাঠানোর আদেশ দিয়েছেন আদালত। গতকাল ঢাকা মহানগর হাকিম মো. মিনহাজুর রহমানের আদালত এই আদেশ দেন।
এদিন মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ও শাহবাগ থানার উপপরিদর্শক মো. আসাদুল ইসলাম জালালকে আদালতে হাজির করে কারাগারে আটক রাখার আবেদন জানান। অপরদিকে জালালের পক্ষে জামিন চেয়ে শুনানি করেন আইনজীবী। উভয় পক্ষের শুনানি শেষে আদালত জালালের জামিন আবেদন নামঞ্জুর করে তাকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন।
এর আগে, মঙ্গলবার মধ্যরাতে আসামি জালালের বিরুদ্ধে তার রুমমেট মো. রবিউল হককে মারধর এবং ভাঙা টিউবলাইট দিয়ে আঘাত করে রক্তাক্ত করার অভিযোগ ওঠে। এ ঘটনায় জালালের বিরুদ্ধে হত্যাচেষ্টার অভিযোগ এনে হাজী মুহম্মদ মুহসীন হলের প্রাধ্যক্ষ মো. সিরাজুল ইসলাম বাদী হয়ে রাজধানীর শাহবাগ থানায় মামলা করেন।
এ ঘটনায় জালালকে হল থেকে বহিষ্কার করা হয়। হলের প্রাধ্যক্ষ সিরাজুল ইসলাম ঘোষণা দেন, জালালের ছাত্রত্ব বাতিলের জন্যেও প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবে হল কর্তৃপক্ষ। জালালের প্রার্থিতা বাতিল হবে কি-না এ বিষয়ে চিফ রিটার্নিং অফিসার জানান, ভিপি প্রার্থী জালালের বিরুদ্ধে এখন পর্যন্ত আনুষ্ঠানিক কোনো অভিযোগ আসেনি নির্বাচন কমিশনে। অভিযোগ এলে টাস্কফোর্স তদন্ত করে সিদ্ধান্ত নেবে তার প্রার্থিতা বাতিল হবে কি-না।
ব্যানার-ফেস্টুন অপসারণ প্রশাসনের : নির্বাচনি আচরণবিধি অমান্য করে ক্যাম্পাসজুড়ে প্রার্থীদের ব্যানার-ফেস্টুন টানানোর অভিযোগে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন পদক্ষেপ নিয়েছে। দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন এলাকা থেকে প্রক্টরিয়াল টিম ও টাস্কফোর্স সদস্যরা এসব সরিয়ে নেয়। বিশেষ করে টিএসসি ও আবাসিক হলগুলোর গেটে ‘ঐক্যবদ্ধ শিক্ষার্থী জোট’ এবং ‘স্বতন্ত্র শিক্ষার্থী ঐক্য’ প্যানেলের ব্যানার-ফেস্টুন প্রক্টরিয়াল গাড়িতে তুলতে দেখা যায়।
প্রধান নির্বাচন কমিশনার অধ্যাপক ড. মো. জসীম উদ্দিন জানান, আচরণবিধি অনুযায়ী কেবল সাদা-কালো পোস্টার, লিফলেট বা হ্যান্ডবিল ব্যবহার করা যাবে। কাপড় বা পিভিসির ব্যানার-ফেস্টুন নিষিদ্ধ। তবে ভুল বোঝাবুঝির কারণে অনেক প্রার্থী এগুলো ব্যবহার করেছিলেন।
ভোট গ্রহণ প্রক্রিয়া নিয়ে শঙ্কা আবিদুলের : বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল সমর্থিত ভিপি প্রার্থী আবিদুল ইসলাম খান ভোট গ্রহণ প্রক্রিয়া নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছেন। সিনেট ভবনে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, একজন ভোটারকে ডাকসু ও হল সংসদ মিলিয়ে ৪১টি ভোট দিতে হবে। প্রতিটি ভোটে ৮-১০ মিনিট সময় লাগতে পারে। এভাবে প্রতি ঘণ্টায় একটি কেন্দ্রে সর্বোচ্চ ১৬০ ভোট পড়বে, দিনে মোট ১২৮০ ভোট। অথচ প্রতিটি কেন্দ্রে ভোটার সংখ্যা ৪ হাজার ৫০০ এর বেশি।
তিনি আশঙ্কা প্রকাশ করেন, এত কম সময়ে বিপুলসংখ্যক ভোটারের ভোটাধিকার নিশ্চিত করা অসম্ভব হয়ে উঠতে পারে। পাশাপাশি অভিযোগ করেন, টিএসসিতে আলোকসজ্জা ও কনসার্টের আয়োজন করে এক প্রার্থী ইশতেহার ঘোষণা করেছেন, যা সরাসরি আচরণবিধি লঙ্ঘন।
রেজিস্ট্রার ভবন ডিজিটালাইজেশনের প্রতিশ্রুতি সাদিক কায়েমের : ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক জটিলতা ও শিক্ষার্থীদের ভোগান্তি দূর করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন শিবির সমর্থিত ‘ঐক্যবদ্ধ শিক্ষার্থী জোট’-এর ভিপি প্রার্থী আবু সাদিক কায়েম। প্রশাসনিক ভবনের সামনে সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, জয়ী হলে রেজিস্ট্রার ভবনকে পুরোপুরি পেপারলেস ও ডিজিটালাইজড করা হবে। তার দাবি, বর্তমানে ভর্তি থেকে শুরু করে যে কোনো প্রশাসনিক কাজে শিক্ষার্থীদের একাধিকবার কাগজপত্র জমা দিতে হয়, ব্যাংকে আলাদা লেনদেন করতে হয়, অথচ শেষমেশ রেজিস্ট্রার ভবনে এসে অযথা হয়রানির শিকার হতে হয়। তিনি বলেন, অনলাইনের মাধ্যমে সব আবেদন ও পেমেন্ট সম্পন্ন করার ব্যবস্থা করা হবে। পাশাপাশি উচ্চশিক্ষার জন্য আলাদা সেল গঠন ও শিক্ষার্থীদের পার্টটাইম চাকরির সুযোগ তৈরির ঘোষণাও দেন তিনি।
আচরণবিধি লঙ্ঘনের অভিযোগ আবদুল কাদেরের : গণতান্ত্রিক ছাত্রসংসদ সমর্থিত ‘বৈষম্যবিরোধী শিক্ষার্থী সংসদ’-এর ভিপি প্রার্থী আবদুল কাদের অভিযোগ করেন, নির্বাচনি প্রচারে আচরণবিধি ভাঙা এখন নিয়মে পরিণত হয়েছে। কমিশন দেখেও ব্যবস্থা নিচ্ছে না, ফলে সবাই আচরণবিধি লঙ্ঘনের প্রতিযোগিতায় নামছে। মধুর ক্যান্টিনে সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, ক্যাম্পাসে এক ধরনের অস্বস্তি ও ভয় কাজ করছে। শিক্ষার্থীদের মধ্যে শঙ্কা দেখা দিয়েছে- ১৯৯০ সালের ডাকসুর পর যে গেস্টরুম-গণরুম সংস্কৃতি চালু হয়েছিল, এবারও তা ফিরে আসতে পারে। তিনি আরও দাবি করেন, ৫ আগস্টের পর থেকে ক্যাম্পাসে মোরাল পুলিশিং বেড়েছে, যার ফলে শিক্ষার্থীরা আতঙ্কে রয়েছে।
আচরণবিধি সংক্রান্ত টাস্কফোর্স : ডাকসু ও হল সংসদ নির্বাচনের আচরণবিধি সংক্রান্ত অভিযোগ নিষ্পত্তির জন্য নির্বাচন কমিশনের সিদ্ধান্ত মোতাবেক আচরণবিধি সংক্রান্ত টাস্কফোর্স গঠন করা হয়েছে। এতে অধ্যাপক ড. গোলাম রব্বানীকে আহ্বায়ক করা হয়। অন্য সদস্যদের মধ্যে আছেন অধ্যাপক ড. শহীদুল ইসলাম (শহীদুল জাহীদ), সহযোগী অধ্যাপক শারমীন কবীর, সৈয়দ তানভীর রহমান, সহকারী প্রক্টর ড. মুহাম্মদ রফিকুল ইসলাম, জাহাঙ্গীর আলম ও রেজাউল করিম সোহাগ।
বন্ধ থাকবে মেট্রোরেলের টিএসসি স্টেশন : ডাকসু নির্বাচন উপলক্ষে নিরাপত্তার কথা চিন্তা করে দুই দিন মেট্রোরেলের টিএসসি স্টেশন মেট্রো স্টেশন বন্ধ রাখার উদ্যোগ নিয়েছে ঢাবি প্রশাসন। আগামী ৮ ও ৯ সেপ্টেম্বর স্টেশনটি বন্ধ থাকবে। এ বিষয়ে মেট্রোরেল সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে চিঠি দিয়ে জানানো হবে।