তথ্য ও সম্প্রচার উপদেষ্টা মো. মাহফুজ আলম বলেছেন, আওয়ামী লীগের আমলে যে গণমাধ্যমগুলোর লাইসেন্স দেওয়া হয়েছিল, আমরা খুব শিগগিরই সেগুলোর তদন্ত করব। কখন, কীভাবে এদের অনুমোদন দেওয়া হয়েছে এবং এই অনুমোদনের ভিত্তিতে এরা বাংলাদেশের জনগণের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে, ভুয়া সাংবাদিক তৈরি করেছে, সেটি তদন্ত করে দেখা হবে।
সোমবার রাজধানীর তথ্য ভবনে চলচ্চিত্র ও প্রকাশনা অধিদফতরের সভাকক্ষে আয়োজিত ‘ফ্যাসিবাদী শাসনামলে সাংবাদিক হত্যা-নিপিড়ন’ শীর্ষক এক সেমিনারে তিনি এসব কথা বলেন। বিশ্ব মুক্ত গণমাধ্যম দিবস- ২০২৫ উপলক্ষ্যে এ সেমিনার আয়োজন করে বাংলাদেশ সাংবাদিক কল্যাণ ট্রাস্ট।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে তথ্য উপদেষ্টা বলেন, আমরা চাই না আপনারা (সাংবাদিক) এ সরকারের (অর্ন্তবর্তীকালীন সরকার) পক্ষে লিখুন। সরকারকে প্রশ্ন করুন। আমি ব্যক্তিগতভাবে মনে করি সরকারকে প্রশ্ন করলে সরকার আরো বেশি কাজ করে, সরকার আরও দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করে। এ প্রশ্ন করার অধিকার আর সাহস সবার থাকা উচিত। সাংবাদিকরা বলুক, সরকার আরো দায়িত্বশীল আচরণ করবে। কিন্তু পেশাদারিত্বে জায়গা থেকে প্রশ্ন করা এক জিনিস, আর সাংবাদিকতাকে একটি দলের আদর্শের প্রোপাগান্ডা আকারে ব্যবহার করা অন্য জিনিস।
তিনি বলেন, কয়েকটি পত্রিকা জুলাই অভ্যুত্থান লেখে না, এরা লেখে জুলাই আন্দোলন। তারা জুলাই গণঅভ্যুত্থানের সরকার বলে না, তারা বলে ক্ষমতার পট পরিবর্তন। এটা ইন্ডিয়ান ন্যারেটিভ। যারা অর্থ এখানে একটা চক্রান্ত হয়েছিল, হাসিনাকে উৎখাত করা হয়েছে। এটা কোনো সংবাদমাধ্যম করতে পারে না, যদি তার মধ্যে এতটুকুও নৈতিকতা থাকে। কিন্তু আমরা এ সংবাদমাধ্যমকে বন্ধ করিনি। আমরা কিছু করব না। জনগণ আপনাদের দেখে নেবে। শহীদ পরিবার আপনাদের দেখে নেবে।
তিনি আরও বলেন, শেখ মুজিবুর রহমানের ৭২-৭৫ এবং শেখ হাসিনার ২০০৯-২০২৪ এ দুই শাসনামলকে বাংলাদেশের অন্য কোনো শাসনামলের সঙ্গে তুলনা করা অসমচীন। তাজউদ্দীন আহমদকে মাইনাস করে যেভাবে শেখ মুজিব তার পরিবারের হাতে দল এবং রাষ্ট্রকে সমর্পিত করেছে, তার মেয়ে এটাকে অনুসরণ করেছে। আমি মনে করি, এটা একেবারে ইউনিক ঘটনা বাংলাদেশে। একটি পরিবার একটি দলকে ধ্বংস করেছে।
মাহফুজ আলম বলেন, আওয়ামী লীগের বিচার এবং দলটিকে নিষিদ্ধ করার প্রশ্নে যখন আমরা আসি, তখন আওয়ামী লীগের তৃণমূলের কর্মীকে প্রশ্ন করতে হবে তিনি পলাতক কেন? এর জন্য দায়ী শেখ হাসিনা এবং শেখ পরিবার। ৫ আগস্টের আগেই শেখ পরিবারের অধিকাংশ লোক এ দেশ থেকে পালিয়ে চলে গেছে। শেখ হাসিনা ছিলেন সর্বশেষ লোক যিনি শেখ পরিবার থেকে পালিয়ে গেছেন। একটি পরিবার একটি দলকে ধ্বংস করল।
সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বাংলাদেশ সাংবাদিক কল্যাণ ট্রাস্টের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মুহাম্মদ আবদুল্লাহ। এতে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন জাতীয় গণমাধ্যম সংস্কার কমিশনের প্রধান কামাল আহমেদ ও তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের সচিব মাহবুবা ফারজানা।
আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন দৈনিক আমার দেশের সম্পাদক ড. মাহমুদুর রহমান, দৈনিক সংগ্রামের সাবেক সম্পাদক আবুল আসাদ, দৈনিক যায় যায় দিনের সম্পাদক শফিক রেহমান, শীর্ষ নিউজের সম্পাদক একরামুল হক, বিএফইউজের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ওবায়দুর রহমান শাহীন, বিএফইউজের সহ-সভাপতি খায়রুল বাশার ও বিএফইউজের সদস্য শাহীন হাসনাত।
এছাড়া আরও উপস্থিত ছিলেন জুলাই গণঅভ্যুত্থানে শহীদ সাংবাদিক হাসান মেহেদীর স্ত্রী ফারহানা ইসলাম পপি, শহীদ সাংবাদিক প্রিয়র মা শামছি আরা জামান, নির্যাতিত সাংবাদিক আখতারুজ্জামান, বাংলানিউজ২৪ডটকমের জামালপুর প্রতিনিধি নিহত গোলাম রব্বানী নাদিমের স্ত্রী মনিরা বেগম।
বিডি প্রতিদিন/কেএ