বাংলাদেশ ট্যাক্স ল’ইয়ার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিটিএলএ) এবং ঢাকা ট্যাক্সেস বার অ্যাসোসিয়েশন (ডিটিবিএ) যৌথ আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) বিলুপ্তির খসড়া অধ্যাদেশ বাতিলের দাবি জানিয়েছেন কর আইনজীবীরা।
সংবাদ সম্মেলনে বক্তারা বলেন, “জাতীয় রাজস্ব বোর্ড শত বছরের পুরোনো একটি প্রতিষ্ঠান। ১৯২৪ সালে ভারতীয় উপমহাদেশে ‘সেন্ট্রাল বোর্ড অব রেভিনিউ’ গঠনের ধারাবাহিকতায় ১৯৭২ সালে সদ্য স্বাধীন বাংলাদেশে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড গঠিত হয়।” তারা আরও বলেন, “আধুনিক রাষ্ট্র ব্যবস্থায় রাজস্ব সংগ্রহ ও প্রশাসনের জন্য একটি স্বাধীন, পেশাদার এবং জবাবদিহিমূলক প্রতিষ্ঠান অপরিহার্য। প্রায় সব দেশেই এ ধরনের স্বতন্ত্র সংস্থা রয়েছে।”
সম্প্রতি প্রণীত একটি খসড়া অধ্যাদেশে এনবিআর বিলুপ্তির প্রস্তাব নিয়ে উদ্বেগ জানিয়ে তারা বলেন, “এই অধ্যাদেশ কার্যকর হলে দেশের রাজস্ব ব্যবস্থায় গভীর শূন্যতা তৈরি হবে। অধ্যাদেশের ধারা ১৩, উপধারা (১)-এ বলা হয়েছে, অধ্যাদেশ কার্যকর হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ১৯৭২ সালের জাতীয় রাজস্ব বোর্ড সংক্রান্ত অধ্যাদেশ রহিত হবে এবং এনবিআর বিলুপ্ত হবে।”
বক্তারা বলেন, “এনবিআরকে বিলুপ্ত না করে এটি সংস্কার করে আরও কার্যকর করা দরকার। কিন্তু অন্তর্বর্তী সরকার উল্টো পথে হাঁটছে। এর ফল কখনোই দেশের জন্য মঙ্গলজনক হবে না।”
তারা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, “কর আইনজীবীরা রাজস্ব ব্যবস্থার অন্যতম প্রধান অংশীজন, অথচ কোনো ধরনের আলোচনা বা মতবিনিময় ছাড়াই এই অধ্যাদেশ উপদেষ্টা পরিষদে অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। গবেষণা ছাড়াই এত গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়ার পেছনে কারা রয়েছে, তা জাতিকে জানাতে হবে।”
কর আইনজীবীরা বলেন, “আমরা সংস্কারের পক্ষে, বিলুপ্তির পক্ষে নই। প্রয়োজনে আয়কর নীতি বিভাগ সংস্কার করে আরও শক্তিশালী করা যেতে পারে।”
তারা তুলে ধরেন, “১৯৭২-৭৩ অর্থবছরে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড মাত্র ১৬৬ কোটি টাকা রাজস্ব আহরণ করে যাত্রা শুরু করলেও, বার্ষিক গড়ে ১৪ শতাংশ প্রবৃদ্ধি ধরে ২০২৩-২৪ অর্থবছরে রাজস্ব আয় ৩,৬২,৭৯৮ কোটি টাকায় পৌঁছেছে।” তবে বক্তারা অভিযোগ করেন, “পূর্ববর্তী সরকার এনবিআরকে জিডিপিতে অতিমূল্যায়িত করায় কর-জিডিপি অনুপাত কাঙ্ক্ষিত মাত্রায় পৌঁছায়নি, যা বিভিন্ন প্রতিবেদনে উঠে এসেছে।”
কর আইনজীবীদের দাবি, “জাতীয় রাজস্ব বোর্ড ব্যর্থ নয়। এটি বিলুপ্ত না করে বরং রাজস্বনীতি প্রণয়ন, আইন সংস্কার, অটোমেশন, প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতা বৃদ্ধিসহ আধুনিকায়নের পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি।”
তারা সরকারের প্রতি আহ্বান জানান, “জাতীয় রাজস্ব বোর্ড বিলুপ্তির খসড়া অধ্যাদেশ অবিলম্বে বাতিল করতে হবে। এটি রাজস্ব প্রশাসনে বিশৃঙ্খলা তৈরি করবে এবং সামগ্রিক অর্থনীতিতে নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে।”
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট আহমেদ আযম খান, বাংলাদেশ ট্যাক্স ল’ ইয়ার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি রমিজ উদ্দিন আহমেদ, ঢাকা ট্যাক্সেস বার অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি এ এইচ এম মাহাবুবুস সালেকীন প্রমুখ।
বিডি প্রতিদিন/আশিক