২ ফেব্রুয়ারি, ২০১৯ ১৭:১৩

ধর্ষকদের সাজা দিতে গিয়ে হত্যা- এ কোন অশনি সংকেত

হাসিনা আকতার নিগার

ধর্ষকদের সাজা দিতে গিয়ে হত্যা- এ কোন অশনি সংকেত

নারীর প্রতি ধর্ষণ নামের পাশবিকতার অত্যাচার চলছে প্রতিদিন। ধর্ষণ - শব্দটি এখন দেশের প্রতিটি পরিবারের কাছে আতংক। বিগত কিছুদিন ধরে অভিনব কায়দাতে ধর্ষণ বা গণধর্ষণের খবর আসছে গণমাধ্যমে। এমনকি নারী শিশুর উপর পাশবিক আচরণ করে হত্যা করেছে এমন খবরে শিহরিত হচ্ছে মানুষ। কন্যা সন্তানদের নিরাপত্তা দেবার নিশ্চয়তা কার কাছে চাইবে এমন প্রশ্ন পরিবারের।

বাংলাদেশের নারী সমাজ এগিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু পারছে না ধর্ষণ মুক্ত একটি সমাজ গড়তে। ঘটনার পর পরই ধর্ষিত নারীর জন্য 'বিচার চাই'- দাবীতে  সরগরম হয় নারী সংগঠন।।মানববন্ধন, পোস্টার ফেষ্টুন সমন্বিত নারী নেত্রীদের সেলফিতে সীমাবদ্ধ থাকে বিচারের দাবী। কালক্ষেপনে নির্যাতিত নারীটি  বিচার পাচ্ছে কিনা তার খবর কেউ রাখে না। 

আইনী প্রক্রিয়ার জটিলতাতে ধর্ষক নামের নরপশুটি  অনেক সময়ই পার পেয়ে মাথা উঁচু করে হেঁটে বেড়ায়।আর যত কালিমা লেপন হয় সে নারীটির জীবনে ধর্ষিতা হিসাবে । সময় আর এ সমাজ তাকে ভুলতে দেয় না  কিছুই। 

সাম্প্রতিক সময়ে ধর্ষণের বিচারের দায়ভার কে বা কারা নিজেদের হাতে তুলে নিচ্ছে তা চিন্তনীয়। পিরোজপুর আর ঝালকাঠির ধর্ষকদের হত্যা করাকে বিচ্ছিন্ন কোন ঘটনা বলা যায় না। আইনকে নিজের হাতে তুলে নেয়া অন্যায়। ধর্ষণের মামলার চিহ্নিত আসামিকে হত্যা করে বলা হয়, ধর্ষক বলেই এ হত্যা।। এমন ঘটনা যারাই করুক না কেন তাতে প্রশ্ন বিদ্ধ হয়েছে দেশের আইন ও বিচার ব্যবস্থা। আইনকে নিজের হাতে তুলে নিয়ে জন্ম দিচ্ছে আর একটি অন্যায়ের। সুবিচার না পাবার ক্ষোভে নাকি ধর্ষণের ঘটনা বাড়ছে বলে এমন হত্যা তা খতিয়ে দেখা প্রয়োজন। আপাত দৃষ্টিতে সাধারন মানুষ মনে করে, একজন ধর্ষকের জন্য এটাই উচিত শিক্ষা। কেননা নিত্য দিনের এ ঘটনাতে সমাজের অধঃপতনের চিত্রই যে দৃশ্যমান।               

প্রচলিত আইনে নারী নির্যাতনের সাজা কঠোর। কিন্তু আইন যতই কঠোর হোক ধর্ষকদের দমন করা সম্ভব হচ্ছে না। কারণ নৈতিকতা, মানবিকবোধ সহ সামাজিক অবক্ষয় এর জন্য দায়ী। মানুষ নামের কিছু পুরুষ  কখনো শত্রুতা মূলক,কখনো নেশার তাড়নায় কিংবা শারীরিক উন্মাদনায় একজন নারীর শুধু শরীর নয় জীবন ও কেড়ে নিয়ে কলুষিত ও বিপন্ন করে সমগ্র সমাজকে।

এখানে যে বিষয়টি আইনীভাবে লক্ষ্যনীয় তা হলো, ধর্ষণ মামলাতে রয়েছে  দ্রুত এবং দৃষ্টান্তমূলক বিচারের অভাব। আবার নানাভাবে  প্রভাব বিস্তার করে  অনেকে মামলাকে অংকুরেই বিনাশ করে দেয়। এরপর অপরাধী তার পৌরুষ্যত্ব নিয়ে দাপটের সাথে চলাফেরা করে। আর অন্যায় করে পার পেয়ে যাবার উদাহরণ সৃষ্টি হয় সমাজে। 

সুতরাং চলন্ত বাসে গণধর্ষণ কিংবা শিশু কন্যাকে ধর্ষণের পর হত্যা এমন সব খবরে যখন দিন শুরু হয় তখন অসহায়ত্ব বোধ হয়। মনে হয় দেশের আইন যতই কঠোর হোক তা ব্যর্থ। তা না হলে কি করে একটি অবুঝ শিশুকে পাশবিক নির্যাতন করে হত্যা করে। এ বর্বরতা আর অমানবিকতাকে বিষন্ন হয় মন। তারপর ধর্ষকের সাজা হিসাবে হত্যার খবরে এক মুহুর্তে মনে হয় এটাই তো প্রাপ্য। আবার ভাবিত হতে হয় এই ভেবে, "নারী নির্যাতনের প্রতিবাদে আইনের ব্যর্থতায় এ কোন অশনি সংকেত রক্তের হোলিখেলার।"      

লেখক: কলামিস্ট

বিডি-প্রতিদিন/সালাহ উদ্দীন

সর্বশেষ খবর