২৫ মার্চ, ২০২৩ ২১:২২

মুক্তিযুদ্ধে স্বাধীনতায় বাংলা নাটক

ফৌজিয়া নিজাম তামান্না

মুক্তিযুদ্ধে স্বাধীনতায় বাংলা নাটক

ফৌজিয়া নিজাম তামান্না

নাটক একটি দৃশ্যমান কলা। আমাদের দেশে নাটক তথা মঞ্চনাটক সত্যিকার অর্থে বিকাশ লাভ করে স্বাধীনতার সময়ে। নতুন দেশ গড়ার স্বপ্ন ও মুক্তির চেতনা থেকে মঞ্চনাটকে আন্দোলনের সূত্রপাত হয়। 

‘এম এল সোনার বাংলা’ বাংলাদেশে মুক্তিযুদ্ধের ওপর লেখা প্রথম মঞ্চনাটক, রূপক ও প্রতীকী এই নাটকের নাট্যকার শহীদুল আমীন।  

সময়ের বিবর্তনে মঞ্চ বিনোদন যান্ত্রিক বিনোদনে পরিবর্তন লাভ করে। তারই ধারাবাহিকতায় পাকিস্তান আমলে প্রেসিডেন্ট আইয়ুব খানের মাধ্যমে টেলিভিশন আনা হয়। তিনি ১৯৬৪ সালের ২৬ নভেম্বর পাকিস্তানের লাহোরে প্রথম টেলিভিশন সেন্টার উদ্বোধন করেন, দ্বিতীয় টেলিভিশন সেন্টার করা হয় বাংলাদেশে (তৎকালীন পূর্বপাকিস্তান) বর্তমান রাজউক ভবনে।

মুক্তিযুদ্ধের পরবর্তী সময়ে টেলিভিশনের নাম পরিবর্তন করে রাখা হয় বাংলাদেশ টেলিভিশন (বিটিভি) এবং এর রাষ্ট্রীয়করণ করা হয়। ১৯৭৫ সালে রামপুরায় টেলিভিশনের নিজস্ব ভবন তৈরি করা হয়।

এম এল সোনার বাংলা নাটকটি ২৬ মার্চ টেলিভিশনে প্রচারের জন্য প্রস্তাব হয়। তখনও বাংলাদেশ স্বাধীন হয়নি। সময়টি ছিল বিক্ষোভে উত্তাল। ২৫ মার্চ বিকালে নাটকটির চূড়ান্ত মহড়া ডিআইটি ভবনের নিচ তলায় অনুষ্ঠিত হয়েছিল। কারণ, পরদিন নাটকটির রেকর্ডিং হওয়ার তারিখ। 

২৬ মার্চ সকাল ১০টায় টেলিভিশন স্টুডিওতে উপস্থিত হওয়ার কথা কলাকুশলীদের। কিন্তু ২৫ মার্চ মধ্যরাতে পাকিস্তানি সামরিক বাহিনী গণহত্যা শুরু করে। 

১৯৭১ সালে শহীদুল্লাহ্ কায়সারের উপন্যাস ‘সংশপ্তক’ থেকে ধারাবাহিক নাটক সংশপ্তক নির্মাণ শুরু হয়েছিল। কিন্তু চার পর্ব প্রচারের পর সেই বছর মার্চে মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে এর নির্মাণ ও প্রচার বন্ধ হয়ে যায়। পরে অবশ্য আবার চালু হয়। 

মোট কথা বলতে চাই, বিষয়ভিত্তিক নাটকের প্রচলন যুগ যুগ ধরে চলে আসছে। তবে আমি মনে করি, অন্য সব বিষয়ের চেয়ে বাংলাদেশের জন্য গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে এই দেশের মুক্তিসংগ্রাম ও স্বাধীনতায় বিজয় অর্জন। আমাদের টিভি নাটকে মুক্তিযুদ্ধ ও মুক্তিযোদ্ধাদের ত্যাগের কাহিনি উঠে এসেছে। ১৯৭১ সালে ১৬ ডিসেম্বর চূড়ান্ত বিজয় লাভের পর বাংলাদেশ টেলিভিশনের প্রচারিত প্রথম মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক নাটক ‘বাংলা আমার বাংলা’। এই নাটকটি লিখেছিলেন ড. ইনামুল হক আর প্রযোজনা করেছিলেন আবদুল্লাহ আল মামুন। 

আমাদের প্রজন্মের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস ও স্বাধীনতার চেতনাকে লালন ও ধারণ করতে মঞ্চনাটক ও টিভি উভয় প্লাটফর্মে ব্যাপক ভূমিকা পালন করা জরুরি। আমি মনে করি, থিয়েটার ও টিভি নাটকে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসের পাশাপাশি নতুন প্রজন্মের কাছে মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে ফুটিয়ে তুলতে হবে। 

আমরা শুধু স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবসগুলোকে ঘিরে নাটক নির্মাণ না করে সারাবছর নির্মাণ করার চেষ্টা করতে পারি। তাহলে বর্তমান জেনারেশন মুক্তিযুদ্ধের ও স্বাধীনতার মহান চেতনা অন্তরে সুগভীরভাবে ধারণ করার সুযোগ পাবে।

লেখক : শিক্ষক ও গবেষক 

বিডি প্রতিদিন/জুনাইদ আহমেদ

সর্বশেষ খবর