২৯ এপ্রিল, ২০২৩ ১৮:৪৫

ষড়যন্ত্রে ব্যর্থ ও বিপর্যস্ত বিএনপি, এখন দুষছে বিদেশীদের

ড. সেলিম মাহমুদ

ষড়যন্ত্রে ব্যর্থ ও বিপর্যস্ত বিএনপি, এখন দুষছে বিদেশীদের

ড. সেলিম মাহমুদ

দেশের বিরুদ্ধে একের পর এক ষড়যন্ত্র করে প্রত্যেক ক্ষেত্রেই ব্যর্থ হয়ে বিএনপি এখন শুধু হতাশই নয়, অনেক ক্লান্ত ও বিপর্যস্ত। প্রতিটি ষড়যন্ত্রেই রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনার কাছে নিদারুণভাবে পরাজিত হয়েছে তারা। তাদের প্রতিটি ষড়যন্ত্র নানা মেয়াদভিত্তিক ও স্বতন্ত্র হলেও তাদের সকল ষড়যন্ত্রের মূল বিষয় ছিল বিদেশী শক্তির মাধ্যমে শেখ হাসিনার সরকারকে ক্ষমতাচ্যুত করা। তাদের ধারণা ছিল ভালোবাসা ও বন্ধুত্বের প্রতিদান হিসেবে একটি রাষ্ট্র তাদেরকে ক্ষমতায় বসিয়ে দেবে। সে লক্ষ্যে গত কয়েক বছর তারা দেশের রাজনীতির সকল পর্যায় থেকে নিজেদের প্রত্যাহার করে সেই বিদেশী রাষ্ট্র ও তার মিত্রদের দূতাবাসে দিনরাত ধর্না দিয়ে আসছে। 

এক যুগেরও বেশি সময় ধরে দেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবে বিদেশে লবিস্টদের মাধ্যমে মিলিয়ন মিলিয়ন ডলার খরচ করেছে। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে সেই রাষ্ট্র ও তাদের মিত্রদের মনোভাব ও নানা পদক্ষেপ দেখে বিএনপি চরম হতাশ হয়েছে। ‌বিদেশি শক্তির মাধ্যমে তাদের ক্ষমতায় আসার স্বপ্ন ধূলিসাৎ হয়েছে। 

গত দুইদিন বিএনপি নেতৃবৃন্দ ও তাদের পক্ষের সুশীলদের বক্তব্যে এখন বিদেশীদেরই দোষারোপ করা হচ্ছে। তাদের বক্তব্যে ঘুরে ফিরে একটি বিষয় স্পষ্ট যে, দিনশেষে বিদেশী রাষ্ট্রসমূহ তাদের ব্যবসায়িক স্বার্থের বাইরে যাবে না। তাদের বক্তব্য, বিদেশি রাষ্ট্রসমূহ নিজেদের স্বার্থেই বাংলাদেশ সরকারের বিরুদ্ধে অবস্থান নেবে না। তাদের বক্তব্যে সুস্পষ্টভাবে তাদের স্ববিরোধী অবস্থান ফুটে উঠেছে। ‌শুধু তাই নয়, তাদের দীর্ঘদিনের রাজনীতির পথপ্ররিক্রমাকে নিজেরাই প্রশ্নবিদ্ধ করেছে। তাদের এই বক্তব্য কেবল স্ববিরোধী কিংবা তাদের জন্য বুমেরাং নয়, তারা যে এতদিন দেশবিরোধী কর্মকাণ্ডে যুক্ত ছিল, তাদের বক্তব্য সেটিই প্রমাণ করে। 

বিএনপি'র নেতৃবৃন্দ ও তাদের সুশীলদের আরেকটি বিষয় লক্ষণীয়। এদের কোন লজ্জাবোধ নেই। দেশ ও জাতির স্বার্থ, নীতি-নৈতিকতা, লাজ লজ্জা, শালীনতা উপেক্ষা করে যে কোন বিষয়ে মন্তব্য করতে তারা বিব্রত হয় না। দেশবিরোধী যে কোন মন্তব্য করতে তারা কুণ্ঠিত হয় না। তারা যে দেশের স্বার্থ বিকিয়ে দিতে বদ্ধপরিকর সেটি নিয়ে এখন আর তাদের কোন রাগঢাক নেই। আরেকটি বিষয় লক্ষণীয়, বিএনপি যে রাজনৈতিক নেতৃত্বশূন্য একটি দল এবং নানা স্বার্থান্বেষী ও মাফিয়া গোষ্ঠী এই দল পরিচালনা করছে- এটি বিএনপি বারবার প্রমাণ করছে। 

সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বিশেষ করে ২০১৮ এর নির্বাচনের পর বিএনপি-জামায়াত গোষ্ঠী একটার পর একটা দেশবিরোধী ষড়যন্ত্র করে যাচ্ছিল। প্রতিটি ষড়যন্ত্রই রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা মোকাবেলা করে ভণ্ডুল করে দিয়েছেন। ‌‌ডিজিটাল বাংলাদেশের সুবিধা নিয়ে দেশবিরোধী তথ্য সন্ত্রাস, করোনা মহামারিতে সরকার বিরোধী অপপ্রচার চালিয়ে মহামারি মোকাবেলা ও ত্রান কার্যক্রমকে বাধাগ্রস্ত করার উদ্যোগ, মহামারিতে লাখ লাখ মানুষ মারা যাবে এ ধরনের আতঙ্ক ছড়ানো, দেশের হাসপাতাল ও চিকিৎসা ব্যবস্থার বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালিয়ে দেশের কোটি কোটি মানুষের জন্য চিকিৎসা সেবা কার্যক্রমকে বাধাগ্রস্ত করার চেষ্টা, সরকারের টিকা সংগ্রহ ও টিকা প্রদান কার্যক্রম নিয়ে নানা অপপ্রচার চালিয়ে কার্যক্রমকে ব্যাহত করা, বাংলাদেশের বিরুদ্ধে মার্কিন ও পশ্চিমা স্যাংশন আরোপের জন্য বিদেশে দেশবিরোধী ষড়যন্ত্র করা, মহামারি ও যুদ্ধের প্রভাবে সারা পৃথিবীতে অর্থনৈতিক সংকট শুরু হওয়ার পর বাংলাদেশের অর্থনীতি ধ্বংসের জন্য দেশে-বিদেশে ষড়যন্ত্রসহ তথ্য সন্ত্রাসে মেতে উঠা, বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে বিদেশী রাষ্ট্রের হস্তক্ষেপের অনুরোধ, নির্বাচনকে সামনে রেখে প্রকাশ্যে বিদেশি রাষ্ট্রের হস্তক্ষেপ চেয়ে নানা উদ্যোগ গ্রহণ- এ সকল দেশবিরোধী ষড়যন্ত্র ২০১৮ এর নির্বাচনের পর থেকে বিএনপি-জামায়াত করে আসছে। 

এই সকল ষড়যন্ত্রের প্রতিটিই জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শক্তভাবে মোকাবেলা করেছেন এবং ভণ্ডল করে দিয়েছেন। বিএনপির দেশবিরোধী এই সকল ষড়যন্ত্রের কোন একটি ষড়যন্ত্র সফল হলে এদেশের অনেক অপরনীয় ক্ষতি হতো। জাতীয় স্বার্থ বিপন্ন হতো। দেশ ও জনগণের স্বার্থে শেখ হাসিনা তাদের প্রতিটি ষড়যন্ত্রই নস্যাৎ করে দিয়েছেন। বিদেশ নির্ভরতা ও বিদেশী ষড়যন্ত্রের উপর নির্ভর করেই যারা রাজনীতির নামে অপরাজনীতিতে লিপ্ত, তাদের মুখে যখন শোনা যায় যে, সরকার ক্ষমতায় থাকতে বিদেশীদের কাছে ধর্না দিচ্ছে, তখন আর বুঝতে বাকি নেই বিএনপি রাজনৈতিক দেউলিয়াত্বের দ্বারপ্রান্তে পৌঁছে গেছে। ‌

লেখক: আইনজ্ঞ এবং তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর