প্রতি বছরের মতো জার্মানির রাজধানী বার্লিনে বুধবার থেকে শুরু হওয়া আর্ন্তজাতিক পর্যটন মেলায় অংশ নিয়েছে বাংলাদেশ। তবে অংশ নিলেও বরাবরের মতই বাংলাদেশ স্টলের অবস্থা নাজুক। স্টল নির্মাণে সেকেলে চিন্তা-ভাবনা ও অপ্রতুল ম্যাটেরিয়ালস নিয়ে এবারের মেলাতেও অংশ নিল বাংলাদেশ।
বার্লিনের মেসে সেন্টারে বুধবার থেকে শুরু হওয়া এই পর্যটন মেলা চলবে ১০ মার্চ পর্যন্ত। মেলার প্রথম দিন থেকেই ছিল দর্শনার্থীদের উপচে পড়া ভিড়। বিশ্বের প্রায় সব দেশেই তাদের নিজেদের ঐতিহ্য ও সংস্কৃতি ও পর্যটন শিল্পের বিকাশে এই মেলাকে প্রাধান্য দিয়ে অংশ নিয়ে থাকে। তারই ধারাবাহিকতায় এবছরও আইটিবি বার্লিনে পৃথিবীর ১৮০ দেশের ১০ হাজারেরও বেশি পর্যটন শিল্পের সঙ্গে সম্পৃক্ত প্রতিষ্ঠান আকর্ষণীয় সব সুযোগ নিয়ে এই মেলায় অংশ নেন।
বিশ্বের সর্ববৃহৎ এই মেলায় বাংলাদেশের পর্যটন শিল্পের প্রসারে অংশ নেয় বাংলাদেশ ট্যুরিজম বোর্ড। বাংলাদেশ স্টলের উদ্বোধন করেন বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন প্রতিমন্ত্রী মাহবুব আলী। এসময় বাংলাদেশ ট্যুরিজম বোর্ডের প্রধান নির্বাহী কর্মকতা ভূবন চন্দ্র বিশ্বাস ও রাষ্ট্রদূত ইমতিয়াজ আহমেদ ও ঊর্ধ্বতন কর্মকতারা উপস্থিত ছিলেন।
পাঁচ দিনের এই মেলায় পৃথিবীর সব দেশই তাদের সর্বোচ্চ দিয়ে চেষ্টা করেছেন নিজেদের দেশের কৃষ্টি, সৌন্দর্য্য ও সভ্যতাকে তুলে ধরার। প্রায় সবগুলো দেশের স্টলই ছিল অপরূপ সৌন্দর্য্যমণ্ডিত। বাংলাদেশের স্টলকে বাদ দিলে প্রায় সবগুলো দেশের স্টলের ভিতর বাহির সাজানো হয়েছে তাদের নিজ নিজ দেশের পর্যটন শিল্পের অসীম সম্ভাবনাকে ভিত্তি করে।
এমন আর্ন্তজাতিক পরিমণ্ডলে বাংলাদেশের উপস্থিতি আশার সঞ্চার করলেও স্টল ব্রান্ডিং ও ব্যবস্থাপনা দেখে প্রায় দর্শনার্থীরা প্রকাশ করেছেন হতাশা। দেশের পর্যটন শিল্প বিকাশে ও পর্যটকদের আকৃষ্ট করতে ঠিক যেভাবে স্টল সাজানো দরকার তার ছিটেফোঁটাও ছিল না এই মেলায়। তাছাড়া আরও নানান বিষয়সহ দেশের বিভিন্ন দর্শনীয় স্থান সম্পর্কে তথ্য প্রদান বিষয়ে স্টলে দক্ষ কর্মী নিয়োগ বিষয়ে উদাসীনতাও অনেকের নজর এড়ায়নি।
স্টলের মাঝখানে দুটো সোফা দিয়ে তার ওপরে ৪০ ইঞ্চির একটি ডিসপ্লে টাঙ্গিয়ে সেখানে দেশের দর্শনীয় স্থানগুলোর ভিডিও ফুটেজ দেখানো ছাড়া বিশেষ আর কোন আয়োজনই চোখে পড়েনি। উদ্বোধনী দিনেও ছিল না কোন দেশীয় সাংস্কৃতিক আয়োজন।
অথচ প্রতিবেশী দেশ নেপাল, শ্রীলঙ্কা, ভুটান, ভারত, মিয়ানমার এমনকি মালদ্বীপের স্টলগুলোতে এটা লক্ষ্য দেখা গেছে। এসময় আশেপাশের স্টলগুলোতে আসা দর্শনার্থীদের বাংলাদেশের স্টল সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলে তারা বলেন, এটা মাল্টিমিডিয়ার যুগ আর এই যুগে এমন দুর্বল ব্রান্ডিং আর অতি সাধারণ উপস্থাপনা পর্যটন শিল্প বিকাশের অন্তরায়। আর সব দেশের মতো বাংলাদেশেরও রয়েছে আবহমানকালের ঐতিহ্য ও সংস্কৃতি, যার টানে বিদেশী পর্যটকরা হয়ত ছুটে যাবে বাংলাদেশে।
এসময় রিভারেইন ট্যুর এর প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা সৈয়দ মাহবুবুল আসলাম বুলু জানান, বেসরকারিভাবে দেশকে তুলে ধরতে আমাদের চেষ্টার কোন কমতি নেই তবে সরকারকেই আন্তরিকতার সঙ্গে এগিয়ে আসতে হবে সবার আগে।
এ ব্যাপারে জার্মান সফররত বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন প্রতিমন্ত্রী মাহবুব আলী বলেন, সময় স্বল্পতার জন্য স্টল ব্র্যান্ডিংয়ে কিছুটা ঘাটতি রয়ে গেছে। তবে আগামীতে এমনটি হবে না বলেও আশ্বাস দেন হবিগঞ্জ-৪ আসন থেকে নির্বাচিত এই জনপ্রতিনিধি।
মেলায় এবারও বাংলাদেশের বেশকটি পর্যটন ব্যবস্থাপনা প্রতিষ্ঠান অংশ নিয়েছে।
বিডি প্রতিদিন/০৯ মার্চ ২০১৯/ফারজানা/আরাফাত