১৭ জুলাই, ২০১৯ ০৯:০৩
জাতিসংঘে স্পিকার শিরীন শারমিন

'আসুন কাঁচের দেওয়াল ভেঙে লিঙ্গসমতা অর্জনের পথ মজবুত করি'

এনআরবি নিউজ, নিউইয়র্ক থেকে:

'আসুন কাঁচের দেওয়াল ভেঙে লিঙ্গসমতা অর্জনের পথ মজবুত করি'

জাতিসংঘ সদরদপ্তরে বাংলাদেশের জাতীয় সংসদের স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী বলেছেন, “বৈশ্বিকভাবে লিঙ্গসমতা নিশ্চিতকল্পে গৃহীত প্ল্যাটফর্ম ‘প্ল্যানেট ৫০-৫০’ অর্জনের জন্য নারীর ক্ষমতায়নের পূর্ণ বাস্তবায়ন অপরিহার্য।”

তিনি লিঙ্গসমতা অর্জনে বিশ্বনেতাদের করণীয় সমন্ধে আলোকপাত করে বলেন, “ক্ষমতা-কাঠামো পরিবর্তন করতে হবে। এজন্য সংসদ সদস্য হিসেবে আমাদের যে ক্ষমতা রয়েছে তা ব্যবহার এবং ইতিপূর্বে যে কথা বলা হয়ে ওঠেনি তা বলতে হবে। আর সে সময় এখনই। আসুন, আমাদের প্রতিশ্রুতিসমূহকে বাস্তবে রূপ দেই। আসুন, বাধা হিসেবে যে কাঁচের দেওয়াল রয়েছে তা ভেঙে ফেলে লিঙ্গসমতা অর্জনের পথ মজবুত করি। আসুন, প্ল্যানেট ৫০-৫০ অর্জন করি যা আজ সময়ের দাবী”।

সোমবার জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের সভাপতি মারিয়া ফার্নান্দে এসপিনোসা গার্সেজের আহ্বানে ‘টেকসই বিশ্বের জন্য লিঙ্গসমতা ও নারী নেতৃত্ব’ শিরোনামে অনুষ্ঠিত লিঙ্গসমতা বিষয়ক বৈশ্বিক নেতাদের অনানুষ্ঠানিক সভায় ‘টেকসই উন্নয়নের জন্য লিঙ্গসমতা ও একীভূত সমাজ’ শীর্ষক প্যানেল আলোচনায় অংশ নিয়ে তিনি এসব কথা বলেন। 

এসময় ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী আরো বলেন, “বাংলাদেশ জাতীয় সংসদ নারী ক্ষমতায়নের প্রকৃষ্ট উদাহরণ। সংসদ নেতা ও বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী নারী। স্পিকার, ডেপুটি স্পিকার, সংসদ উপনেতা ও বিরোধীদলীয় উপনেতাও নারী। নারীদের জন্য সংরক্ষিত রয়েছে ৫০টি আসন। আর ২৩ জন নারী সংসদ সরাসরি ভোটে নির্বাচিত। সামরিক বাহিনী, প্রশাসন, পুলিশ, আইন ও বিচার বিভাগীয় প্রতিষ্ঠানসহ সকল ক্ষেত্রেই রয়েছে নারীর ক্ষমতায়ন। জাতিসংঘ শান্তিরক্ষী মিশনে বাংলাদেশের নারীরা কাজ করছেন। দেশে ৪০ লাখেরও বেশি নারী তৈরি পোশাক শিল্পে কাজ করছে যা লিঙ্গসমতার উজ্জ্বল উদাহরণ।”

স্পিকার বলেন, “নারীরা এগিয়ে যাচ্ছেন। আমাদের প্রথাগত ধারণা থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। আর তাহলেই লিঙ্গসমতা আনা সম্ভব”। নারীদের প্রতি সহিংসতা রোধে এবং নারী ক্ষমতায়নের ক্ষেত্রে বৈশ্বিক পদক্ষেপসমূহকে আরও শক্তিশালী করার উপর জোর দেন বাংলাদেশের স্পিকার।

সকালে সভার উদ্বোধনীতে ভাষণ দেন জাতিসংঘের ৭৩তম সাধারণ পরিষদের সভাপতি মারিয়া ফার্নান্দে এসপিনোসা গার্সেজ, জাতিসংঘের ডেপুটি সেক্রেটারি জেনারেল আমিনা জে. মোহাম্মদ ও ইকোসকের ভাইস প্রেসিডেন্ট মোনা জুল।

‘টেকসই উন্নয়নের জন্য লিঙ্গসমতা ও একীভূত সমাজ’ শীর্ষক প্যানেল আলোচনার প্যানেলিষ্টদের মধ্যে ছিলেন অ্যঙ্গোলার ফার্স্ট লেডি অ্যানা আফোনসো ডায়াস লাওরেনকো, আইএলও’র মহাপরিচালক গাই রাইডার, মেক্সিকোর ভাইস ফরেন মিনিস্টার মার্থা ডেলগোডো। প্যানেল আলোচনা পরিচালনা করেন জাতিসংঘে রুয়ান্ডার স্থায়ী প্রতিনিধি  ভ্যালেন্টাইন রূগওয়াবিজা। 

একইদিন বিকালে স্পিকার জাতিসংঘ সদরদপ্তরে এইচএলপিএফ এর পার্লামেন্টারি ফোরাম আয়োজিত “ক্রমবর্ধমান অসমতা ও সরকারের প্রতি আস্থাহীনতা: হীন চক্র ভেঙ্গে ফেলা শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠানে বলেন “অসমতার দুষ্টচক্র ভেঙে ফেলতে হলে টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যসমূহ অর্জন করতে হবে। অসমতা দূর করার ক্ষেত্রে সংসদ সদস্যদের দায়বদ্ধতা রয়েছে।” 

বিশ্বের বিভিন্ন দেশের প্রান্তিক এলাকাসমূহের মানুষের যে সকল অসমতা রয়েছে তা দূর করার উপর জোর দেন স্পিকার। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ সরকার গত প্রায় দু’দশক ধরে নিজস্ব রাজস্ব বাজেট থেকে অতিদারিদ্র মানুষের জন্য নিরাপত্তা বেষ্টনী সৃষ্টি, বয়স্ক ও বিধবা ভাতা, প্রতিবন্ধী ভাতা, প্রসূতি ও দুগ্ধদানকারী নারীদের ভাতা, ভিজিএফ, দশ টাকায় ব্যাংক অ্যকাউন্ট খোলাসহ নানা কর্মসূচি বাস্তবায়ন করে যাচ্ছে যা প্রান্তিক মানুষের অসমতা দূর করার ক্ষেত্রে যুগান্তকারী ভূমিকা রেখেছে। এর ফলে দারিদ্র্যের হার ৪০ শতাংশ থেকে ২১ শতাংশে এবং অতিদারিদ্র্যের হার ২৫ শতাংশ থেকে ১১ শতাংশে নেমে এসেছে। বিশ্বব্যাপী অসমতা হ্রাস ও সরকারি ব্যবস্থার উপর আস্থাহীনতা দূর করতে তিনি শিক্ষা ও প্রযুক্তিগত ব্যবধান হ্রাস করার উপর জোর দেন। এসকল ক্ষেত্রে নিজ নিজ এলাকার অসমতা চিহ্নিত করে তা দূর করতে সংসদ সদস্যদেরকে আরও কার্যকর ভূমিকা রাখার আহ্বান জানান স্পিকার। পার্লামেন্টারি কমিটিসমূহেরও এক্ষেত্রে বিশেষ ভূমিকা রয়েছে মর্মে উল্লেখ করেন স্পিকার।

ইন্টার পার্লামেন্টারি ইউনিয়ন (আইপিইউ) এর সভাপতি গ্যাব্রিয়েলা কুইভাস ব্যারন এ সভায় উদ্বোধনী বক্তব্য প্রদান করেন। অন্যান্য আলোচকরা হলেন ইউএনডিপির মানব উন্নয়ন রিপোর্ট অফিসের পরিচালক পেড্রো কনসিওকাও এবং হাঙ্গেরির সংসদ সদস্য ড. এরসিবেত স্কমুখ।

দিনব্যাপী এই আলোচনা অনুষ্ঠানসমূহে অন্যান্যের মাঝে ছিলেন জাতিসংঘে  বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি ও রাষ্ট্রদূত মাসুদ বিন মোমেন এবং জাতীয় সংসদের সিনিয়র সচিব ড. জাফর আহমেদ খান।


বিডি প্রতিদিন/হিমেল

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর