দেশে ফেরার অপেক্ষায় কাজের ভিসা নিয়ে সৌদিতে এসে নানা কারণে বাংলাদেশ দূতাবাস রিয়াদের সেফহোমে আশ্রয় নেয়া ১৫৪জন বাংলাদেশি নারী গৃহকর্মী। এছাড়া সৌদি আরবের বিভিন্ন মর্গে থাকা বাংলাদেশি কর্মীদের স্থানীয়ভাবে দাফন করার জন্য বলা হচ্ছে।
বাংলাদেশ দূতাবাস রিয়াদের শ্রম কল্যাণ কাউন্সিলর মোঃ মেহেদী হাসান বাংলাদেশ প্রতিদিনকে জানান, বর্তমানে আমাদের সেফহোমে ১৫৪জন বাংলাদেশি নারী গৃহকর্মী রয়েছেন। অনেক আগে থেকেই তাদেরকে দেশে প্রেরণের প্রক্রিয়া চলছিলো। আমাদের অনুরোধে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ সেফহোমে এসে ফিঙ্গারপ্রিন্ট (আঙ্গুলে ছাপ) নিয়েছেন।
তিনি আরও জানান, সকল আইনি জটিলতা কাটিয়ে ১৩৫জনের ফাইনাল এক্সিট ভিসা পাওয়া গেছে। বর্তমানে আন্তর্জাতিক ফ্লাইট বন্ধ আছে। বিশেষ ফ্লাইটের বিষয়ে আলোচনা হচ্ছে। ফ্লাইট শিডিউল পাওয়া গেলে ১৩৫জন দেশে পাঠাতে কোন আইনি বাঁধা নেই।
স্থানীয় গণমাধ্যমের খবরে বলা হয়েছে ১৩টি প্রদেশের ৩হাজার ৪৪৫টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে শ্রমিকদের বাসস্থান হিসাবে ব্যবহারের উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। বিভিন্ন শ্রমিক ক্যাম্পে গণবসতিতে থাকা বিদেশি শ্রমিকদের সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিত করতে এই উদ্যোগ বলেও জানায় স্থানীয় গণমাধ্যমগুলো।
দূতাবাসের একটি সূত্র জানায় সৌদি আরবের পুর্বাঞ্চলে (দূতাবাসের অধীক্ষেত্র) স্বাভাবিক মৃত্যুবরণকারী ৫০টির বেশি বাংলাদেশি কর্মীর লাশ বিভিন্ন মর্গে রয়েছে। এই লাশগুলো স্থানীয়ভাবে দাফনের জন্য সৌদি কতৃপক্ষ বার বার তাগিত দিচ্ছে। সূত্রটি জানায়, মৃত প্রবাসীর পরিবারের সম্মতি না পেলে স্থানীয়ভাবে দাফন করা সম্ভব নয়।
সূত্র আরও জানায়, একদিকে দাফনের জন্য চাপ, অন্যদিকে পরিবার থেকে সম্মতি না পাওয়ায় মৃত্যদেহগুলোর ব্যাপারে পদক্ষেপ নিতে বিপাকে আছেন দূতাবাসের সংশ্লিষ্ট শাখা। ঢাকা সিভিল এভিয়েশনের তথ্যমতে, আগামী ৩০এপ্রিলের আগে আন্তর্জাতিক ফ্লাইট চলাচলের সম্ভাবনা নেই।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে সৌদি আরবের পূর্বাঞ্চলে দায়িত্বপালনকারী দূতাবাসের আইন সহায়তাকারী বলেন, প্রতিদিনই বিভিন্ন অঞ্চল থেকে বাংলাদেশিদের স্বাভাবিক (করোনাভাইরাস নয়) মৃত্যু খবর আসছে। স্থানীয় পুলিশ প্রশাসন থেকে এসব মরদেহ দাফনের জন্য চাপ দিচ্ছে অন্যদিকে মৃত প্রবাসীদের পরিবার আরও দুইমাস অপেক্ষা করতে বলছে এ নিয়ে আমরা বেশ বেকায়দায় আছি।
এই আইনসহায়তাকারী বলেন, মৃতদের পরিবার থেকে স্থানীয়ভাবে দাফনের অনুমতি দিলে ধর্মীয় রীতিনীতি পালন করে মৃতদেহ দাফন করা হয়। যেহেতু এখনো পর্যন্ত করোনাভাইরাসের কারণে বন্ধ হওয়া ফ্লাইট কবে চালু হবে সেটা অনিশ্চিত। সেহেতু দীর্ঘদিন মরদেহ মর্গে ফেলে না রেখে স্থানীয়ভাবে দাফনের দাফন করে ফেলাই শরীয়ত সম্মত বলে মনে করেন তিনি।
শ্রম কল্যাণ কাউন্সিলর মেহেদী হাসান বলেন, মৃত প্রবাসী কর্মীর পরিবারকে স্থানীয়ভাবে মরদেহ দাফনের আবেদন করলে আমরা দ্রুত অনাপত্তিপত্র দিয়ে লাশ দাফনের ব্যবস্থা করি।
বর্তমান করোনা পরিস্থিতিতে বিশ্বজুড়ে এক অচলাবস্থা দেখা দিয়েছে। স্থবির হয়ে পড়েছে বৈশ্বিক অর্থনীতি। বেকার লাখ লাখ মানুষ। অনিশ্চিত এক পথে হাঁটছে পুরো পৃথিবী। ভাইরাসটির কোন চিকিৎসা আবিস্কার না হওয়ায় সামাজিক দূরন্ত বজায় এ থেকে মুক্তির অন্যতম পথ হওয়ায় ইতিমধ্যে বিশ্বের অনেক দেশ আন্তর্জাতিক যোগাযোগ বন্ধ করে দিয়েছে। দেশে দেশে লকডাউনের কারণে বন্ধ রয়েছে আভ্যন্তরীণ যোগাযোগ ব্যবস্থাও।
সৌদি সরকার এই মহামারী প্রতিরোধে নানা রকম পদক্ষেপ হাতে নিয়েছে। নাগরিক এবং অভিবাসীদের স্বাস্থ্য নিরাপত্তাকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিয়ে প্রণয়ন করা হচ্ছে নতুন নতুন আইন। ক্ষতি পোষাতে বিশেষ বিশেষ খাতগুলোতে দেয়া হচ্ছে আর্থিক প্রণোদনা।
বিডি প্রতিদিন/ সালাহ উদ্দীন