করোনাভাইরাস মোকাবেলায় গত ১৪ মার্চ থেকে স্পেনে জরুরি রাষ্ট্রীয় সতর্কতা জারি করা হয়। প্রথম দফায় ২৬ মার্চ পর্যন্ত মেয়াদ থাকলেও অবস্থা বিবেচনা করে দ্বিতীয় দফায় জরুরি অবস্থা ৯ মে পর্যন্ত বর্ধিত করা হয়। এর ফলও পেতে থাকে স্পেন।
করোনাভাইরাসের প্রকোপ নিয়ন্ত্রণে আনতে তৃতীয় দফায় আরও ১৫ দিন জরুরি অবস্থা বৃদ্ধির জন্য কংগ্রেসে প্রস্তাব আনবেন দেশটির সরকার প্রধান প্রধানমন্ত্রী পেদ্র সানচেজ।
আজ বুধবার কংগ্রেসে এ সংক্রান্ত বিষয়ে ‘হ্যাঁ’ ও ‘না’ ভোট প্রদান অনুষ্ঠিত হবে। জরুরি অবস্থা কিংবা লকডাউনের মেয়াদ বৃদ্ধি পাবে কি না, আজ সিদ্ধান্ত আসবে কংগ্রেস থেকেই।
স্পেনে করোনাভাইরাসের প্রকোপ সন্তোষজনক হারে কমেছে। চলতি মাসের শুরু থেকেই মৃত্যুর সংখ্যা কমতে শুরু করে। ওয়ার্ল্ডোমির্টাস ডট ইনফো এর তথ্য অনুসারে স্পেনে জরুরি অবস্থা শুরুর পর থেকে অর্থাৎ ১৪ মার্চের পর করোনাভাইরাসে আক্রান্তে হয়ে ৩ ও ৪ মে সর্বোনিম্ন ১৬৪ জন মৃত্যুবরণ করেছেন।
জরুরি অবস্থা কিংবা লকডাউনের ফলে আক্রান্ত ও মৃত্যুর হার কমানো সম্ভব হয়েছে বলে দেশটির সরকারি দল সোস্যালিস্ট পার্টি দাবি করেছে। পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে আনতে জরুরি অবস্থার অনেক বিষয় শিথিল করে হলেও আরও ১৫ দিন বৃদ্ধি করার প্রস্তাব কংগ্রেসে আনবেন প্রধানমন্ত্রী পেদ্র সানচেজ। শরিক দল পদেমস এর ‘হ্যাঁ’ ভোট একত্রিত করেও এ বিষয়ে পুরোপুরি সমর্থন পাচ্ছেন না পেদ্র সানচেজ। তবে সমর্থন আদায়ে চলছে আলোচনা।
ইতিমধ্যে কট্টর ডানপন্থী দল ভক্স, কাতালান পার্টি খুনতোস পর কাতালোনিয়া, এসকেররা রিপাবলিকানা দে কাতালোনিয়া, কান্ডিডাটুরা দে উনিদাদ পপুলার স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছে যে, তারা জরুরি অবস্থার মেয়াদ বাড়ানোর বিপক্ষে ভোট দেবে। যদি প্রধান বিরোধী দল পার্তিদো পপুলার (পপুলার পার্টি) এ জোটের সাথে একত্রিত হয়, তবে ৩৫০ ভোটের মধ্যে ১৬৪টি ভোট যাবে ‘না’ এর পক্ষে। এদিকে অন্য ডানপন্থি দল সিউদাদানোস এখনো কোন পক্ষকে সমর্থন করবে, তা জানা যায়নি।
চলমান জরুরি অবস্থার অনেকগুলো বিষয়ে শিথিলতা এনে সরকার ৪ ধাপের একটি পরিকল্পনা ইতিমধ্যে ঘোষণা করেছে। ২৬ এপ্রিল থেকে শিশু কিশোরদের একটি নির্দিষ্ট সময়ে ঘর থেকে বের হওয়ার সুযোগ দেয়ার পর ২ মে থেকে বয়স্কদেরও ঘর থেকে বের হওয়ার সুযোগ দিয়েছে সরকার। পাশাপাশি সরকারের ৪ ধাপের পরিকল্পনার সঠিক বাস্তবায়ন এবং তা ফলপ্রসু হলে জুন মাসের শেষের দিকে করোনাভাইরাস থেকে মুক্ত হয়ে স্বাভাবিক জীবন যাত্রায় ফিরে যাবে স্পেন- এমন আশার কথা গত ২৮ এপ্রিল সংবাদ সম্মেলনে ব্যক্ত করেছেন স্পেনের প্রধানমন্ত্রী পেদ্র সানচেজ। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী কংগ্রেসে ‘হ্যাঁ’ এর পক্ষে সমর্থন আদায়ে ব্যর্থ হলে করোনাভাইরাস মোকাবেলায় সরকারের গৃহীত পদক্ষেপগুলো বন্ধ হয়ে যাবে বলে একটি প্রতিবেদনে আশঙ্কা প্রকাশ করেছে দেশটির সংবাদপত্র ‘এল পাইস’।
প্রতিবেদনটিতে স্পেনের লা লেগুনা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের অধ্যাপক জেরার্দো পেরেজ এর মন্তব্য তুলে ধরে বলা হয়েছে- কংগ্রেসে ‘না’ সমর্থন জয়ী হলে জরুরি অবস্থার কার্যক্রমগুলো বন্ধ হয়ে যাবে এবং সরকার জনগণের উপর ইতিমধ্যে গৃহীত পদক্ষেপগুলো চাপাতে পারবে না।
তবে করোনাভাইরাসের প্রকোপ মোকাবেলায় সরকারের পদক্ষেপগুলো স্পেনের সাধারণ জনগণের মাঝে সমাদৃত হয়েছে- এমন জনসমর্থন ভোটের জরিপের ফল দেখিয়েছে স্থানীয় টিভি লা সেক্সথা। এখন দেখার বিষয় আজ বুধবার কংগ্রেসে সাংসদদের সমর্থন আদায় করতে পারে কি না পেদ্র সানচেজের দল।
প্রসঙ্গত, বৈশ্বিক মহামারি করোনাভাইরাসের প্রকোপে বিশ্বের দ্বিতীয় ক্ষতিগ্রস্ত দেশ হচ্ছে স্পেন। ইতিমধ্যে দেশটিতে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন আড়াই লাখের উপর মানুষ। মৃত্যুবরণ করেছেন ২৫ হাজার ৬শ’র উপর। আর সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন ১ লাখ ৫৪ হাজার ৭শ’র উপর।
বিডি প্রতিদিন/এনায়েত করিম