ট্রাম্প ক্ষমতায় না থাকলেও বঙ্গবন্ধুর খুনি রাশেদ চৌধুরীকে বাংলাদেশে ফেরত পাঠানোর প্রক্রিয়া থামবে না। তবে এজন্য দরকার জোরদার লবিং। যুক্তরাষ্ট্রের বিচার বিভাগের এক শীর্ষ কর্মকর্তা নাম গোপন রাখার শর্তে বাংলাদেশ প্রতিদিনকে জানান, বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অনুরোধে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের আগ্রহে রাশেদ চৌধুরীর এসাইলামের (আশ্রয়) ফাইল ওপেন করা হয়েছে। সেটি সক্রিয় রয়েছে। বিষয়টি ব্যক্তি-বিশেষের পর্যায়ে দেখা হচ্ছে না। আগামী ২০ জানুয়ারির মধ্যেও যদি কোনো সিদ্ধান্ত না পাওয়া যায়, তবুও তা থেমে থাকবে না এবং ফাইল চাপা পড়ে থাকারও অবকাশ নেই।
এই কর্মকর্তা অবশ্য বলেছেন যে, ট্রাম্প দায়িত্ব হস্তান্তরের আগেই যদি জোরদার তদবির চলে তাহলে ভালো হবে। নির্দেশ অনুযায়ী সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা পঁচাত্তরের ১৫ আগস্ট ও তার পরবর্তী সময়ে রাশেদ চৌধুরীর ভূমিকা খতিয়ে দেখছেন। একইসঙ্গে এসাইলামের পিটিশনে দেওয়া বক্তব্য যাচাই করা হচ্ছে। একটি দেশের প্রতিষ্ঠাতা প্রেসিডেন্টকে নৃশংসভাবে হত্যার সঙ্গে রাশেদ চৌধুরীর সম্পৃক্ততা এবং সে জন্য বাংলাদেশের আদালত তাকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়ার বিবরণীও পরীক্ষা করা হচ্ছে। ওই কর্মকর্তা দৃঢ়তার সঙ্গে উল্লেখ করেন যে, এমন আচরণে লিপ্তরা কখনোই যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসের সুযোগ পান না।
এদিকে, রাশেদ চৌধুরীর ফাইল ওপেন-প্রক্রিয়া ত্বরান্বিত করার আহ্বানে ইতোমধ্যেই বঙ্গবন্ধু ফাউন্ডেশনের যুক্তরাষ্ট্র শাখার সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা ড. খন্দকার মনসুর এবং সেক্রেটারি আব্দুল কাদের মিয়া দেশটির অ্যাটর্নি জেনারেল বিল বার সমীপে স্মারকলিপি পাঠিয়েছেন। এরপর গণস্বাক্ষর অভিযান চলছে সেক্টর কমান্ডারস ফোরাম, বঙ্গবন্ধু ফাউন্ডেশন, বাংলাদেশ লিবারেশন ওয়্যার ভেটার্নস’৭১ নামক সংগঠনের পক্ষ থেকে। সেটি শিগগিরই অ্যাটর্নি জেনারেল বরাবরে পাঠানো হবে বলে জানা গেছে।
রাষ্ট্রের পক্ষ থেকে এ ব্যাপারে জোরদার তদবিরের প্রয়োজন বলে সুধীজন মনে করছেন। এজন্য ওয়াশিংটনে একজন কর্মক্ষম রাষ্ট্রদূত দরকার। গত ৬ বছরের অধিক সময় যাবত যিনি রয়েছেন তার কাছ থেকে তেমন ভূমিকা পাবার আশা করেন না যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা। কারণ, মোহাম্মদ জিয়াউদ্দিন রাষ্ট্রদূত হিসেবে যোগদানের পরই কম্যুনিটি থেকে বাংলাদেশ দূতাবাসকে বিচ্ছিন্ন করার মতো ঘটনা ঘটেছে বলে অভিযোগ। একটি অনুষ্ঠানে সাংগঠনিক বিরোধে লিপ্ত দুই পক্ষকে আমন্ত্রণ জানিয়ে মারপিটের অবতারণা করা হয়। বিষয়টি সরকারের শীর্ষ পর্যায়ে অবহিত করে ক্ষমতাসীন দলের লোকজনকেও দূতাবাসে আমন্ত্রণ জানাতে সীমাহীন কার্পণ্য করার অভিযোগ রয়েছে।
প্রবাসীরা আরও অভিযোগ করেছেন, রাশেদ চৌধুরীকে বাংলাদেশে ফিরিয়ে নেওয়ার লক্ষ্যে মূল কাজটিও বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনাকেই করতে হয়েছে। অথচ এ দায়িত্বটি পালনের কথা রাষ্ট্রদূতের। কয়েক বছর আগে বাংলাদেশ জিএসপি সুবিধা হারায়। মিলেনিয়াম চ্যালেঞ্জ ফান্ডে কালো তালিকাভুক্ত হয়। আরও কিছু ক্ষেত্রে বাংলাদেশের ইমেজ প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে। তবুও দীর্ঘ সময় মোহাম্মদ জিয়াউদ্দিনকে ওয়াশিংটন ডিসিতে রাখার ঘটনায় কমিউনিটিতে নানা গুঞ্জন চলছে। সম্প্রতি ওয়াশিংটনে নতুন একজনকে নিয়োগের সংবাদ প্রকাশ পেলেও করোনার অজুহাতে সেটি ঝুলিয়ে রাখার মধ্য দিয়ে নিজের অবস্থানকে আরও দীর্ঘতর করার ফন্দি আঁটা হয়েছে বলে দূতাবাসের একাধিক কূটনীতিক জানিয়েছেন।
বিডি প্রতিদিন/জুনাইদ আহমেদ