৩০ নভেম্বর, ২০২০ ১৫:০৬

পোল্যান্ডে বাড়ছে করোনার সংক্রমণ, সংক্রমিত হয়েও কাজের খোঁজে বাংলাদেশিরা

রাকিব হাসান রাফি

পোল্যান্ডে বাড়ছে করোনার সংক্রমণ, সংক্রমিত হয়েও কাজের খোঁজে বাংলাদেশিরা

বর্তমানে মহামারী করোনাভাইরাসের সংক্রমণের হার বিবেচনায় পোল্যান্ডকে ইউরোপের অন্যতম হটস্পট বললেও ভুল হবে না। এখন পর্যন্ত পোল্যান্ডে সর্বমোট করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন ৯,৮৫,০৭৫ জন। এছাড়াও প্রাণঘাতী করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে এখন পর্যন্ত পূর্ব ইউরোপের এ দেশটিতে মৃত্যুবরণ করেছেন ১৭,০২৯ জন এবং চিকিৎসা শেষে সুস্থ হয়ে বাসায় ফিরেছেন ৫,৫৯,৪২৯ জন।

গড়ে প্রতিদিন পোল্যান্ডে ১৫ হাজারের বেশি মানুষ করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হচ্ছেন এবং পাঁচশোর অধিক মানুষ মৃত্যুবরণ করছেন। অথচ প্রথম পর্যায়ে অর্থাৎ মার্চ থেকে শুরু করে জুন পর্যন্ত সময়ে দেশটিতে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত মোট রোগীর সংখ্যা ছিলো ৩৪,০০০ এর কিছু বেশি। বলাবাহুল্য শীতের আগমনের সাথে সাথে পোল্যান্ডে সেকেন্ড ওয়েভে আশঙ্কাজনকভাবে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। দেশটির গণমাধ্যমে প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী, গ্রীষ্মকালীন সময়ে অবকাশযাপনের কেন্দ্রগুলোতে এক সাথে অধিক মানুষের সমাগম ও স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার বিষয়ে দেশটির জনসাধারণের অসচেতনতা মূলত সেকেন্ড ওয়েভে দেশটি করোনা সংক্রমণ বিস্তারের প্রধান কারণ।

সঠিকভাবে উল্লেখ করা সম্ভব না হলেও পোল্যান্ডে সব মিলিয়ে তিন থেকে চার হাজার বাংলাদেশির বসবাস, যাদের বেশিরভাগই পোল্যান্ডে এসেছেন শিক্ষার্থী হিসেবে যদিও শেষ পর্যন্ত অনেকে পড়াশুনা শেষ না করে ওয়ার্ক পারমিটের মাধ্যমে তাদের ভিসার প্রকৃতি পরিবর্তন করেছেন। ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের অন্তর্ভুক্ত অন্য কোনও দেশের ভিসা বিশেষত স্টুডেন্ট ভিসা কিংবা টেম্পোরারি রেসিডেন্ট পারমিট নিয়েও পোল্যান্ডে এসে ওয়ার্ক পারমিটের মাধ্যমে অনেক বাংলাদেশি সে দেশে থেকে গিয়েছেন। ব্যবসায়িক সূত্রেও অনেকে বাংলাদেশ থেকে পোল্যান্ডে পাড়ি জমিয়েছেন। ইউরোপের অন্যান্য দেশের তুলনায় এক সময় পোল্যান্ডে অনেক সহজে রেস্টুরেন্ট কিংবা কাবাব শপ চালু করা যেতো। পোল্যান্ডে বসবাসরত প্রবাসী বাংলাদেশিদের বেশিরভাগই রেস্টুরেন্ট ব্যবসার সাথে জড়িত। এদের মাঝে কেউ কেউ রেস্টুরেন্ট কিংবা কাবাব শপের মালিক, কেউ আবার এ সকল রেস্টুরেন্ট কিংবা কাবাবশপে কর্মচারী হিসেবে কাজ করেন। ওয়ারশ, রক্লো এবং পোজনান পোল্যান্ডের এ তিনটি শহরে সবচেয়ে বেশিসংখ্যক বাংলাদেশি বসবাস করেন। 

পোল্যান্ডে অবস্থিত আন্তর্জাতিক শিক্ষা বিষয়ক পরামর্শদাতা এডুএক্সপ্লোরের সিইও প্রকৌশলী আহমেদ রাজ বিন আইয়ুবের সাথে কথা বলে জানা গেছে, দেশটিতে সেকেন্ড ওয়েভে অনেক বাংলাদেশি করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হচ্ছেন। এমনকি কয়েক দিন পূর্বে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে দেশটির অন্যতম শহর রাক্লোতে চল্লিশোর্ধ্ব এক বাংলাদেশির মৃত্যুও হয়েছে বলে তিনি উল্লেখ করেছেন। রাজ নিজেও করোনাভাইরাসে সংক্রমিত হয়েছিলেন। তার সাথে থাকা আরও দুই বাংলাদেশিও একই সময়ে করোনাভাইরাসে আকান্ত হয়েছিলেন বলে তিনি জানিয়েছেন। যদিও প্রায় এক মাস অসুস্থ থাকার পর তিনি কয়েক দিন পূর্বে সুস্থ হয়ে উঠেছেন তবে করোনা পরবর্তী বিভিন্ন জটিলতা এখনও তাকে ভোগাচ্ছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক দেশটিতে বসবাস করা আরও এক বাংলাদেশি জানান সেকেন্ড ওয়েভে এসেও দেশটিতে বসবাসরত বাংলাদেশিদের মাঝে করোনা নিয়ে তেমন একটা সচেতনতা কাজ করছে না। অনেকের শরীরে করোনার উপসর্গ থাকার পরেও তারা বিষয়টিকে তেমন একটা গুরুত্ব সহকারে দেখছেন না, এমনকি নিকটস্থ হাসপাতালে গিয়েও করোনার টেস্ট করাচ্ছেন না। সেকেন্ড ওয়েভে করোনাভাইরাস প্রতিরোধে দেশটির সরকার সকল বার রেস্টুরেন্ট ও কফিশপ বন্ধের নির্দেশ দিয়েছে। তবে সরকারের নির্দেশনা অনুযায়ী কোনও রেস্টুরেন্ট চাইলে পার্সেল খাবার বিক্রি করতে পারবে। এ সুযোগে অনেক বাংলাদেশির শরীরে করোনা উপসর্গ থাকার পরও তারা যথার্থ চিকিৎসা গ্রহণ না করে রেস্টুরেন্ট কিংবা কাবাবের শপগুলোতে ছুটে যাচ্ছেন কাজের জন্য।

পোল্যান্ডে বাংলাদেশ কমিউনিটি খুব একটা শক্তিশালী না হওয়ায় এ রকম পরিস্থিতিতে কেউ চাইলেও অন্যের সাথে সেভাবে যোগাযোগ রক্ষা করতে পারছেন না;  অন্যদিকে দেশটিতে বসবাসরত প্রবাসী বাংলাদেশিরা সামাজিক ও অর্থনৈতিক দিক থেকেও ইউরোপের এ সকল দেশে বসবাসরত বাংলাদেশিদের মতো তেমন একটা সুদৃঢ় অবস্থান না থাকায় একে অন্যের পাশে দাঁড়াতে পারছেন না। তাই এ অবস্থায় তিনি করোনার এ দুর্যোগ মোকাবেলায় দেশটির সকল বাংলাদেশিকে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করার পাশপাশি সবাইকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার বিষয়ে সতর্ক থাকার জন্য আহবান জানিয়েছেন এবং একই সাথে পোল্যান্ডের বাংলাদেশ দূতাবাসকে এ পরিস্থিতিতে দেশটিতে বসবাসরত প্রবাসী বাংলাদেশিদের পাশে থেকে কার্যকরি সহায়তা প্রদানের জন্য অনুরোধ জানিয়েছেন।  

বিডি প্রতিদিন/ফারজানা

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর