ইতালির মিলানে বাংলাদেশ মিশনের কনস্যুলেট অফিসের কনসাল জেনারেল ইকবাল আহমেদের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ। তার দুর্নীতি নিয়ে যেই কথা বলেন, এমনকি সংবাদ প্রকাশ করেন, তাকে তিনি রাষ্ট্রবিরোধী বলে আখ্যা দেন বলে অভিযোগ।
জানা গেছে, ইতালি প্রবাসী একজন বাংলাদেশি সাংবাদিক তার দুর্নীতি নিয়ে সংবাদ করেছিলেন। এখন ওই সাংবাদিক ও তার দুই শিশু পুত্র-কন্যার পাসপোর্ট আটকে দিয়েছেন তিনি, যা আজ প্রায় এক বছর হলো।
অভিযোগ, ইকবাল আহমেদ নিজেকেই সরকার ভাবেন। তিনি দূতাবাস কেন্দ্রীক একটি দালাল গোষ্ঠীকে প্রশ্রয় দেন। তারা পাসপোর্ট, ট্রাভেল পাস, বাংলাদেশে পাওয়ার অব অ্যাটর্নি ইত্যাদি একটি সিন্ডিকেট চালান ইকবাল আহমেদের ছত্রচ্ছায়ায়! সেইসঙ্গে ইকবাল আহমেদ ইতালিতে যখন করোনা বিধিনিষেধের জন্য কোনো ধরনের সভা-সমিতি নিষিদ্ধ তখন ইতালির শহর তোরিনে একটি অনুষ্ঠান আয়োজন করেন, যেখানে কোভিড বিধি ভঙ্গ হয়। এতে তোরিন প্রশাসন বাংলাদেশ মিশনের এরকম কাণ্ডজ্ঞানহীন কাজের সমালোচনা করে।
নাম প্রকাশে একজন ইতালি প্রবাসী বাংলাদেশি বলেন, বিভিন্ন সময় দূতাবাসের মিশন অফিস থেকে প্রবাসীদের জন্য যে ক্যাম্প করা হয় সেখানেও সাধারণ প্রবাসীর সরাসরি যাওয়ার সুযোগ নেই। ইকবাল আহমেদ মনোনীত দালালদের মাধ্যমে ক্যাম্পে যেতে হয়। এমন সব বিষয় নিয়ে কথা বললেই তাকে সরকারবিরোধী বলে আখ্যা দেন তিনি। বাংলাদেশে পাসপোর্ট তদন্তে বাধাগ্রস্ত করেন। ক্ষমতার প্রভাব খাটিয়ে পাসপোর্ট আটকে রাখেন। সেইসঙ্গে দূতাবাসের কনসালের প্রভাব খাটিয়ে স্থানীয় পুলিশকেও অভিযোগ করেন অভিবাসী বাংলাদেশিদের বিরুদ্ধে।
সাংবাদিক সোহেল মজুমদার শিপন প্রায় ১০ মাস আগে পাসপোর্ট তিনটি নবায়নের জন্য মিলান কনস্যুলেট অফিসে জমা দিলেও এখন পর্যন্ত এ তিনজনের পাসপোর্ট ফেরত দেয়নি কনস্যুলেট অফিস। কারণ, সোহেল মজুমদার শিপন এসব বিষয় নিয়ে সংবাদ প্রকাশ করেছিলেন।
সাংবাদিক সোহেল মজুমদার শিপন বলেন, ‘পাসপোর্ট নবায়নের আবেদন করার ১০দিন পর একটি অনলাইন পত্রিকায় মিলান কনস্যুলেট অফিসের বিভিন্ন অনিয়ম ও দুর্নীতি নিয়ে আমার লেখা প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়। এরপর সেই প্রতিবেদনটি সরিয়ে নিতে স্থানীয় বিভিন্ন নেতাকর্মী আমাকে প্রলোভন দেখান। কিন্তু আমি ওই প্রতিবেদন সরাতে অস্বীকার করি। এর পরিপ্রেক্ষিতেই তারা আমার পরিবারের পাসপোর্ট আটকে রেখেছে।’
তিনি জানান, গত বছরের ১২ অগাস্ট নিজের এবং দুই সন্তান- সানজা মজুমদার ও শাবিব মজুমদারসহ মোট তিনটি পাসপোর্ট নবায়নের জন্য মিলান কনস্যুলেট অফিসে আবেদন করেন। তবে ১০ মাস পেরিয়ে গেলেও পাসপোর্টগুলো ফেরত দিচ্ছে না কনস্যুলেট অফিস।
এই অভিযুক্ত কর্মকর্তাকে গত ৬ ফেব্রুয়ারি বদলি আদেশ দেওয়া হয় আমেরিকার ফ্লোরিডার বাংলাদেশ কনস্যুলেট অফিসের কনসাল জেনারেল হিসেবে। বাচ্চার পড়াশোনার জন্য সেই বদলি ঠেকিয়ে রেখেছেন তিনি।
এসব অভিযোগের বিষয়ে কনসাল জেনারেল ইকবাল আহমেদকে ফোন করা হলে তিনি ফোন ধরেননি। হোয়াটসআপে অভিযোগগুলো সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি ম্যাসেজে লিখেন, মিলান দূতাবাস কেন্দ্রীক কোনো দালাল সিন্ডিকেট নেই। প্রকাশিত সব সংবাদ ও অভিযোগের কোনো সত্যতা নেই। সবই ব্যক্তিগত আক্রোশ! দীর্ঘদিন ধরেই আমি এসবের শিকার!
তিনি এই প্রতিবেদককে বলেন, ‘আমি আশ্চর্য হব না, যদি আপনিও আমার বিরুদ্ধে নিউজ করেন।’
বিডি প্রতিদিন/জুনাইদ আহমেদ