গ্রিসে অনিয়মিতভাবে বসবাসরত বাংলাদেশি নাগরিকদের নিয়মিতকরণ প্রক্রিয়া সম্পর্কে বিস্তারিত তুলে ধরতে এক ব্রিফিং ও মতবিনিময় সভার আয়োজন করেছে বাংলাদেশ দূতাবাস। দূতাবাস প্রাঙ্গনে অনুষ্ঠিত সভায় বাংলাদেশ কমিউনিটির নেতৃবৃন্দসহ বিপুল সংখ্যক প্রবাসী বাংলাদেশি উপস্থিত হন। এসময় পাসপোর্ট সমস্যাসহ বিভিন্ন বিষয়ে প্রবাসীদের প্রশ্নের উত্তর ও সমস্যা সমাধানের আশ্বাস দেন দূতাবাস কর্মকর্তারা।
এসময় গ্রিসে নিযুক্ত বাংলাদেশ দূতাবাসের রাষ্ট্রদূত আসুদ আহমদ বলেন, বাংলাদেশ এবং গ্রিসের মধ্যে এবছরের ৯ ফেব্রুয়ারি যে সমঝোতা স্মারকটি স্বাক্ষরিত হয়েছে তার ফলে গ্রিসে অনিয়মিতভাবে বসবাসরত ১৫ হাজারেরও বেশি বাংলাদেশী নাগরিক নিয়মিত হওয়ার সুযোগ পাবেন এবং বাংলাদেশ থেকে প্রতি বছর ৪০০০ বাংলাদেশি কৃষি বা অন্যান্য ক্ষেত্রে চাকরির ভিসা নিয়ে গ্রিসে আসার সুযোগ পাবেন।
তিনি বলেন, ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইনের নন-রিফুলমেন্ট নিয়মের আওতায় অন্যান্য সমস্যা জর্জরিত দেশের সাথে বেশির ভাগ বাংলাদেশীরাও এদেশে আসা শুরু করেছেন এবং রিফুউজি কিংবা এসাইলাম স্ট্যাটাস নিয়ে বসবাস করে আসছেন। নন-রিফুলমেন্ট এর নিয়ম অনুযায়ী কোনো বিদেশি লোক তার নিজ দেশে অত্যাচার কিংবা নির্যাতনের শিকার হয়ে ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত কোনো দেশে প্রবেশ করে আশ্রয় প্রার্থনা করলে তাকে তার নিজ দেশে জোর করে ফেরত পাঠানো যাবে না যতক্ষণ না প্রচলিত আইনের আওতায় তার বৈধ কিংবা নিয়মিত প্রবাসী হিসেবে বসবাস করার অধিকার হারায়। কিন্তু এই দীর্ঘ এবং কঠিন আইনি প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে দিনাতিপাত করার সময় প্রবাসীরা যে মানবেতর জীবন-যাপন করে থাকেন তা খুবই বেদনাদায়ক। তাদের এই করুণ চিত্র আমরা মানোলাদা, লাপ্পা এবং অনুরুপ অন্যান্য এলাকায় দেখতে পাই। নাগরিক সুযোগ-সুবিধা বঞ্চিত এই সমস্ত হাজার হাজার প্রবাসী বাংলাদেশীদের নিয়মিতভাবেই অর্থলোভী দালাল চক্র নানাভাবে হয়রানি ও শোষণ করে চলেছে। তাদের গ্রিক মালিকেরাও তাদের বৈধ কাগজপত্রের অভাবে সর্বনিম্ন মজুরির চেয়ে অনেক কম বেতন দিচ্ছে এবং তারা নিয়মিতভাবেই শোষণ আর বঞ্চনার শিকার হচ্ছেন।
এই অনিয়মিতভাবে বসবাসরত আমাদের প্রবাসী বাংলাদেশীদের করুণ চালচিত্র সার্বিকভাবে দূতাবাসের একটি অন্যতম মর্মপীড়ার কারন ছিলো। তখন থেকেই আমরা গ্রিক সরকারের সাথে আলোচনা শুরু করেছি এবং তাদেরকে বোঝাতে সক্ষম হয়েছি যে, যেহেতু তাদের লোক দরকার হবে এবং বাংলাদেশিদেরকে তারা ইতোমধ্যেই কর্মঠ, সদালাপী এবং প্রচলিত আইনের প্রতি সবসময় শ্রদ্ধাশীল হিসেবে দেখেছে এবং জেনেছে, তাই যদি একটি সমঝোতা চুক্তি করে আইনী প্রক্রিয়ার আওতায় তাদেরকে আনা যায় তাহলে তারা যথাযথ নাগরিক সুযোগ-সুবিধা উপভোগ করতে পারবে এবং তাদের অর্থনৈতিক উন্নয়নের অংশীদার হতে পারবে।
এতে করে দুই দেশের জন্য একটা সম্পর্কের সৃষ্টি হবে এবং দুই দেশই সমানভাবে লাভবান হবে। শুধু তাই নয়, এর ফলে দালালদের দৌরাত্ব কমবে এবং অবৈধ ট্রাফিকিং রোধ হবে। আমাদের প্রস্তাবনা গ্রিক সরকারের কাছে যৌক্তিক মনে হয়েছে এবং তারা সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর করতে রাজি হয়েছে এবং এভাবে ক‚টনৈতিক আলোচনার সূচনা হয়েছে যার সফল পরিণতি হচ্ছে আজকের এই আমাদের বহুল আলোচিত এবং প্রতীক্ষিত চুক্তি।
পরে দূতাবাসের কাউন্সেলর মো. খালেদ এবং প্রথম সচিব (শ্রম) বিশ্বজিত কুমার পাল সভায় উপস্থিত প্রবাসীদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন।
বিডি প্রতিদিন/এএ