একাত্তরের রণাঙ্গনে কাদেরিয়া বাহিনীর বীর মুক্তিযোদ্ধা, বিজ্ঞানী, রাজনীতিক এবং একুশে পদকপ্রাপ্ত লেখক ড. নূরুন নবীর লেখা ৪টি বই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় পাবলিক লাইব্রেরিতে রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। বইগুলো হচ্ছে জাপানিদের চোখে বাঙালি বীর, মুক্তিযুদ্ধে ভারত, অন্তরঙ্গ জানালায় বঙ্গবন্ধু ও ‘দ্য রুল অব নিক্সন-কিসিঞ্জার ইন দ্য ১৯৭১ পাকিস্তানি ওয়ার ক্রাইমস এগেইনস্ট বাংলাদেশ’।
উল্লেখ্য, যুক্তরাষ্ট্র বঙ্গবন্ধু পরিষদের সভাপতি এবং নিউজার্সির একটি সিটির কাউন্সিলম্যান (ডেমক্র্যাট) ড. নূরুন নবী এ যাবত ১৮টি গ্রন্থ রচনা করেছেন।
গ্রন্থগুলোর মধ্যে বেশ কটি ভারতসহ আমেরিকার বিভিন্ন গ্রন্থাগারে সংগৃহিত হয়েছে। এসব গ্রন্থে একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের অজানা অনেক ইতিহাস সন্নিবেশিত হওয়ায় নতুন প্রজন্মের পাঠকের কৌতূহল মেটাতে সক্ষম হচ্ছে এবং একইসাথে আন্তর্জাতিক অঙ্গনেও সমাদৃত হচ্ছে।
ড. নবী সদা মানবতার কল্যাণে নিজেকে নিয়োজিত রেখেছেন নানা প্রতিকূলতা সত্বেও। তার জন্ম বাংলাদেশের টাঙ্গাইলে। বেড়ে ওঠেছেন টাঙ্গাইলের প্রত্যন্ত অঞ্চলে। ময়মনসিংহের আনন্দমোহন কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পাশ করার পর তিনি ভর্তি হয়েছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণ রসায়ন বিভাগে। এটি সেই সময়ের কথা, যখন বাংলাদেশে শুরু হয়েছিল মুক্তিযুদ্ধ। ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধ নতুন এক নূরুন নবীর জন্ম দেয়। সেই সময়ে তিনি সাধারণ শিক্ষার্থী থেকে হয়ে উঠেন একজন অসাধারণ, সাহসী এবং বিচক্ষণ মুক্তিযোদ্ধা। মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন ৩ বার ভারতে গিয়েছেন এবং বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের রণকৌশল, বিশেষ করে টাঙ্গাইলের মুক্তিযুদ্ধ সম্পর্কে ভারতের সেনাবাহিনীর উচ্চপদস্থ সেনা কর্মকর্তাদের অবগত করেন। সেই সময় নৌ-পথে ভারত থেকে বিপুল পরিমাণ অস্ত্র ও গোলা বারুদ এনে টাঙ্গাইলের মুক্তিযোদ্ধাদের হাতে তুলে দেন, যা পাকিস্তানিদের পরাজিত করতে এবং ঢাকাকে শত্রুমুক্ত করতে বিশেষ অবদান রেখেছিল।
১৬ ডিসেম্বর বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর ড. নবী গবেষণার জন্য জাপানে যান। ১৯৭৫ সালে গবেষণা শেষে জাপান থেকে বাংলাদেশে তার ফিরে যাবার কথা ছিল। কিন্তু ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট সপরিবারে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে হত্যা এবং হত্যা পরবর্তী বাংলাদেশের রাজনৈতিক অবস্থার কারণে তিনি বাংলাদেশে ফিরতে পারেননি। জাপান থেকে আমেরিকায় চলে আসেন। এরপর দীর্ঘ সংগ্রাম এবং অধ্যবসায়ের ফলে আমেরিকায় একজন বিজ্ঞানী হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেন। কোলগেট টুথপেস্টসহ প্রায় ১০০টি পণ্যের পেটেন্ট রয়েছে তার। কর্মজীবন থেকে অবসর নিলেও মার্কিন রাজনীতিতে সক্রিয় রয়েছেন। পাশাপাশি তিনি যুদ্ধ ও জীবনের অভিজ্ঞতা প্রকাশ করার জন্য লিখছেন একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ এবং বঙ্গবন্ধুর অসাধারণ নেতৃত্বের ঘটনাবলি। যা মূলত: বাংলা ভাষায় লেখা।
সাম্প্রতিক সময়ে আমেরিকায় জন্ম ও বেড়ে ওঠা বাংলাদেশি প্রজন্ম ও আমেরিকানদের বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ সম্পর্কে সঠিক ধারণা দেওয়ার জন্য ইংরেজি ভাষায় অনুবাদ করা হয়েছে ড. নূরুন নবীর বেশ কয়েকটি বই। যা প্রকাশিত হয়েছে বাংলাদেশ এবং আমেরিকা থেকে। কিছুদিন আগে ডা. নবীর লেখা মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক বইগুলো পাঠ ও গবেষণার জন্য নির্বাচিত হয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঠাগারে। এর আগে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ে গবেষণার জন্য ভারতের ন্যাশনাল লাইব্রেরিতে ইতিহাস ও ঐতিহ্য বিভাগে নির্বাচিত হয়েছে এই বাংলাদেশি লেখক ও বিজ্ঞানীর লেখা দুটি বই।
প্রায় ৩শ’ বছরের পুরনো এবং পৃথিবীর বৃহত্তম গ্রন্থাগার হিসেবে পরিচিত ভারতের ন্যাশনাল লাইব্রেরি। ড. নবীর লেখা ‘বাংলাদেশে পাকিস্তানিদের যুদ্ধাপরাধ ও প্রেসিডেন্ট নিক্সন-ড. কিসিঞ্জারের দায়’ এবং ‘মুক্তিযুদ্ধে ভারত’ বই দুটি গবেষণার জন্য নির্বাচিত হয়েছে ভারতের ন্যাশনাল লাইব্রেরিতে।
লেখক তার যুদ্ধ জীবনের পর্যবেক্ষণ তুলে ধরেছেন বই দুটিতে। মুক্তিযুদ্ধ, বাংলাদেশ ও বঙ্গবন্ধু বিষয়ে লেখক ড. নবীর এ পর্যন্ত ১৭টি বই প্রকাশিত হয়েছে। তার মধ্যে বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য-অনিবার্য মুক্তিযুদ্ধ, জন্ম ঝড়ের বাংলাদেশ, বাংলাদেশে পাকিস্তানের যুদ্ধাপরাধ ও প্রেসিডেন্ট নিক্সন-কিসিঞ্জারের দায়, জাপানিদের চোখে বাঙালি বীর, স্মৃতিময় নিপ্পন, আমার একাত্তর, জন্মেছি এই বাংলায়, আমেরিকায় জাহানারা ইমামের শেষ দিনগুলি, শামসুর রাহমান-স্বাধীনতার কবি, অন্তরঙ্গ আলোচনায় বঙ্গবন্ধু, বঙ্গবন্ধু ও বিশ্ববন্ধু, Born in Bangla, Bangabandhu and Turbulet Bangladesh, BULLETS of A Freedom Fighter'y Story.