সমুদ্রপাড় বা সমুদ্রের কাছাকাছি বাস করা কেবল মানুষের মনই ভালো রাখে না, বরং দীর্ঘায়ু পেতেও সহায়ক হতে পারে বলে উঠে এসেছে সাম্প্রতিক এক গবেষণায়।
‘ওহাইও স্টেট ইউনিভার্সিটি’র গবেষকদের নতুন এক গবেষণা বলছে, যারা সমুদ্রতীর থেকে প্রায় ৫০ কিলোমিটারের মধ্যে বসবাস করেন তারা নদী বা হ্রদের কাছাকাছি শহরে বসবাসকারী মানুষের চেয়ে দীর্ঘায়ু পেতে পারেন।
এ গবেষণায় যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে ৬৬ হাজারেরও বেশি আদমশুমারির তথ্য বিশ্লেষণ করেছেন গবেষকরা। মানুষ কোন ধরনের জলাশয়ের আশপাশে বাস করছেন তার ওপর নির্ভর করে তাদের গড় আয়ু কীভাবে পরিবর্তিত হয়, এ গবেষণায় তা খতিয়ে দেখেছেন তারা। যেমন- সমুদ্র, নদী, হ্রদ বা অন্য কোনো জলপথ।
গবেষণা বলছে, যারা সমুদ্রপাড় বা উপসাগরের কাছাকাছি থাকেন তারা সাধারণত বেশি দিন বাঁচেন। গড় হিসেবে উপকূলীয় অঞ্চলের বাসিন্দারা যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় গড় আয়ু ৭৯ বছরের চেয়ে আরও এক বছর বেশি বাঁচেন।
অন্যদিকে, যারা বড় হ্রদ বা নদীর মতো জলাশয়ের পাশে থাকা শহরে বাস করেন সমুদ্রপারের মানুষদের চেয়ে গড়ে এক বছর কম বাঁচেন তারা। এ গবেষণার প্রধান লেখক ড. জিয়ানইয়ং ‘জেমি’ উ বলেছেন, আয়ুর এই পার্থক্য নানা বিষয়ের মিলিত প্রভাবে হতে পারে। সমুদ্রের কাছাকাছি বসবাসকারীরা সাধারণত কিছু সুবিধা ভোগ করেন। যেমন- ঠাণ্ডা ও স্থিতিশীল তাপমাত্রা, অপেক্ষাকৃত পরিচ্ছন্ন বাতাস এবং হাঁটা বা সাঁতার কাটার মতো শারীরিক কর্মকাণ্ডে অংশ নেওয়ার সহজ সুযোগ।
এছাড়াও সমুদ্রপাড়ের মানুষেরা বেশি আয় করেন, ভালো যাতায়াত সুবিধা পান- এসব বিষয়ও মানুষের সুস্থ থাকা ও দীর্ঘায়ু হওয়ার ক্ষেত্রে সহায়ক ভূমিকা রাখতে পারে বলে প্রতিবেদনে লিখেছে বিজ্ঞানভিত্তিক সাইট নোরিজ।
অন্যদিকে, নদী বা হ্রদের কাছাকাছি শহরাঞ্চলের মানুষেরা বেশি মাত্রায় দূষণ, দারিদ্র্য, নিরাপদ ব্যায়ামের জায়গার অভাব ও বন্যার ঝুঁকিতে থাকেন। এসব থেকে ইঙ্গিত মেলে, কেন স্থলবেষ্টিত জলাশয়ের পাশে থাকা মানুষেরা সমুদ্রপাড়ের মানুষের মতো স্বাস্থ্য উপকারিতা পান না।
গবেষণার আরেক গবেষক ইয়ানি কাও বলেছেন, তাপমাত্রার পার্থক্য এখানে গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়। সমুদ্রপাড়ের আবহাওয়া সাধারণত ঠাণ্ডা ও সহনীয় থাকে। ফলে মানুষের গরমজনিত স্বাস্থ্য সমস্যা যেমন হিট স্ট্রোক বা ক্লান্ত হওয়ার ঝুঁকি অনেকটা কমে যায়।
পানির কাছে বসবাস করাকে ‘ব্লু স্পেস’ বলে, যা শরীরের জন্য ভালো হতে পারে। তবে এ ধারণা নতুন কিছু নয়। আগের বিভিন্ন গবেষণা থেকেও ইঙ্গিত মিলেছে, যারা পানির কাছাকাছি থাকেন তারা সাধারণত বেশি সক্রিয় থাকেন। তাদের মোটা হওয়ার হার কম হয় ও হৃদযন্ত্র ভালো থাকে।
তবে এ গবেষণাতেই প্রথমবারের মতো স্পষ্ট ইঙ্গিত মিলেছে যে, মানুষ কী ধরনের পানির পাশে ও কেমন পরিবেশে বসবাস করেন তা তাদের আয়ুর ক্ষেত্রে খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। ড. উ বলেছেন, উপকূলীয় ও স্থলভাগের বাসিন্দাদের আয়ুর এত বড় পার্থক্য দেখে অবাক হয়েছেন তিনি।
তিনি জানান, “আমরা ভাবছিলাম সব ধরনের ব্লু স্পেস বা পানির আশপাশের এলাকা থেকে সুবিধা পাওয়া যাবে। তবে আমাদের গবেষণা বলছে, সমুদ্রপারের জীবন সত্যিই আলাদা।”
বিডি-প্রতিদিন/আব্দুল্লাহ