ড্রেসিং রুমের পাশে দাঁড়িয়ে শোনা গেল বাংলাদেশের ফুটবলারদের সমস্বরে অট্টহাসির শব্দ। কপালে থাকা চিন্তার গভীর ভাঁজগুলো মিশে গেল কী! বঙ্গবন্ধু সাফ চ্যাম্পিয়নশিপে নিজেদের প্রথম ম্যাচে লেবাননের বিপক্ষে পয়েন্ট পাওয়ার আশা জাগিয়ে হেরে যাওয়া দলটার মধ্যে গতকাল সকালেও ছিল দুশ্চিন্তার কালো ছায়া। ফাহিম, তারিক কাজীর মন ছিল আরও বেশি ভার। তবে গতকাল হালকা অনুশীলনের পর ফুটবলারদের মনও যেন অনেকটা হালকা হয়ে গেল। পেছনের ভুল পেছনেই পড়ে থাক। সামনের দিনগুলো সুন্দর হোক। এ প্রত্যয় নিয়ে অপেক্ষায় আছে লাল-সবুজের জার্সিধারীরা।
গতকাল এইচএএল স্পোর্টস ক্লাবের ভাইচুঙ ভুটিয়া ফুটবল স্কুল অ্যারিনায় অনুশীলন সারল বাংলাদেশ জাতীয় ফুটবল দল। অনুশীলনের শুরুতেই মাঠের একপাশে থাকা ছোট্ট গ্যালারিতে দলকে জড়ো করে বক্তৃতা দিলেন কোচ হাভিয়ের কাবরেরা। কী বললেন! পেছনের দিকে তাকিও না। সামনের দিকে তাকাও। ভুল থেকে শিক্ষা নাও। অনুশীলনের পর কয়েকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেল কোচের বক্তব্য। অধিনায়ক জামাল ভূঁইয়াও ব্যক্তিগতভাবে কথা বলেছেন ফাহিম ও তারিকের সঙ্গে। এ দুজনই তো লেবানন ম্যাচে বড় দুটি ভুল করেছেন! ফাহিম গোলরক্ষককে একা পেয়েও গোল করতে পারেননি। তারিক কাজী মাঝ মাঠের কাছাকাছি থেকেও বল ক্লিয়ার করতে পারেননি। এ দুই না পারার মধ্যেই লুকিয়ে আছে বাংলাদেশের ২-০ গোলে পরাজয়ের গ্লানি। তবে জামাল ভূঁইয়া বললেন, ‘দেখুন, আমরা দল হিসেবে খেলি। দল হিসেবে জিতি। আবার দল হিসেবেই হারি।’ কোচ আর সতীর্থদের কাছ থেকে সহানুভূতি পাওয়া গেলে কী হবে! তারিক কাজী যে নিজেই নিজেকে ক্ষমা করতে পারছেন না। তার প্রমাণও মিলল। গতকাল অনুশীলন শেষ করে বাংলাদেশ দলের সবাই ড্রেসিং রুমে চলে গেলেন। অন্যদিকে তারিক কাজী বল নিয়ে অনুশীলন করতেই থাকলেন। বেশ খানিকক্ষণ একক অনুশীলনের পর ড্রেসিংরুমে ফিরলেন তিনি। হয়তো ঠিক করলেন মনে মনে, ভুল শোধরানোর একটা সুযোগ পেলেই হয়!
বাংলাদেশ দলের কেউই এখন আর পেছন ফিরে তাকাতে রাজি নন। জিজ্ঞেস করলেই বলে, আর পেছনে নয়। সামনের দিকে তাকিয়ে আছি। সোহেল রানা যেমনটা বললেন, ‘আমাদের মালদ্বীপ ম্যাচে জিততেই হবে। ফাইনালই বলতে পারেন।’ ফাইনালই বটে। এখন বাংলাদেশের প্রতিটা ম্যাচই ফাইনাল। ‘বি’ গ্রুপে নিজেদের প্রথম ম্যাচ জিতে তিনটি করে পয়েন্ট সংগ্রহ করেছে লেবানন ও মালদ্বীপ। নিজেদের পরের ম্যাচে দুই দল জিতলে এই গ্রুপ থেকে তারাই খেলবে সেমিফাইনাল। সেক্ষেত্রে বাংলাদেশ আর ভুটানকে খেলতে হবে কেবল আনুষ্ঠানিকতার ম্যাচ! তবে কি সাফের স্বপ্ন অনেকটাই ফিকে হয়ে গেল? কোচ হাভিয়ের কাবরেরা এখনো আশা ছাড়ছেন না। তিনি বলছেন, ‘আমরা ঠিক পথেই এগিয়ে চলেছি। গেম প্ল্যান অনুযায়ীই সবকিছু চলছে।’ এমনকি লেবানন ম্যাচে বদলি নামানোর সিদ্ধান্তগুলোও নাকি ঠিকই ছিল। যখন ডিফেন্সিভ হওয়ার প্রয়োজন ছিল তখন তিনি অফেন্সিভ হয়েছেন। এসব বিষয় নিয়ে এখন আর খুব বেশি কথা বলতে রাজি নন কোচ। এখন ফোকাস করতে চান সামনের ম্যাচে। মালদ্বীপকে হারানোই লক্ষ্য। কিন্তু তা কী সম্ভব! মালদ্বীপের আক্রমণভাগে আছেন হামজা আর হাসানদের মতো ফুটবলার। তারা সুযোগ পেলে গোল করতে ভুল করেন না। বিষয়টি নিয়ে ভেবে রেখেছেন কোচ কাবরেরা। তিনি বলেন, ‘আমরা জানি, মালদ্বীপে বেশ ভালো কজন ফুটবলার আছে। তারা কী কী করতে পারে তাও আমরা জানি। সেভাবেই প্রস্তুতি নেব। এখন তো আর আমাদের জয়ের কোনো বিকল্প নেই।’
বাংলাদেশ ২০০৩ সালে সাফ চ্যাম্পিয়নশিপ জয় করেছে। এরপর থেকেই অপেক্ষা। আবার কবে পারবে বাংলাদেশ! প্রতিবারই স্বপ্নভঙ্গ হয়। কথা দিয়ে কথা রাখতে পারেন না কোচ ও ফুটবলাররা। এবার কী পারবেন তারা! নাকি আবারও স্বপ্নভঙ্গের বেদনা নিয়েই বাড়ি ফিরবেন!