‘দুর্গনগরী’ গল ভীষণ পরিচিত মুশফিকুর রহিমের। স্মৃতিতে উজ্জ্বল এক নাম। গত এক যুগে সাবেক অধিনায়ক ২টি টেস্ট খেলেছেন ভারত মহাসাগর লাগোয়া ক্রিকেট স্টেডিয়ামটিতে। এবার ক্যারিয়ারের তৃতীয় টেস্ট খেলবেন। আগের দুই টেস্টে ব্যাট হাতে উজ্জ্বল মুশফিক এবার বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের অন্যতম ভরসা। তাকে কেন্দ্র করে চূড়ান্ত করা হয় টাইগার ব্যাটিং লাইনআপ। গলে খেলা আগের ২ টেস্টের ৩ ইনিংসে এক ডাবল সেঞ্চুরি ও এক হাফ সেঞ্চুরিতে ৩১৯ রান করা মুশফিক গতকাল অনুশীলনের ফাঁকে উইকেট খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখেন। বুঝার চেষ্টা করেন উইকেটের আচরণ। গলে বাংলাদেশের প্রথম ক্রিকেটার হিসেবে টেস্ট ক্রিকেটে ডাবল সেঞ্চুরি করেন মুশফিক। তার ২০০ রানের ইনিংসে টেস্ট ড্র করেছিল বাংলাদেশ। অবশ্য গলে সর্বোচ্চ ব্যক্তিগত রানের ইনিংস কারিবীয় ক্রিকেট তারকা ক্রিস গেইলের, ৩৩৩।
এক যুগ আগে, ২০১৩ সালের টেস্ট ম্যাচের তৃতীয় দিন শেষে মোহাম্মদ আশরাফুল অপরাজিত ছিলেন ১৮৯ ও মুশফিকুর রহিম ১৫২ রানে। দুজনের সামনেই ছিল ডাবল সেঞ্চুরির হাতছানি। টিম হোটেলে রাতের ডিনারে টেস্ট ক্রিকেটের সর্বকনিষ্ঠ সেঞ্চুরিয়ান আশরাফুলকে অনেকে আগাম অভিনন্দনও জানিয়েছিলেন। আর ১১ রান করলেই বাংলাদেশের টেস্ট ক্রিকেট ইতিহাসে প্রথম ক্রিকেটার হিসেবে ডাবল সেঞ্চুরির বিরল ক্লাবে নাম লেখাতেন। হয়তো সর্বকনিষ্ঠ সেঞ্চুরিয়ানও স্বপ্ন দেখেছিলেন। কিন্তু স্বপ্ন আর বাস্তবতার ব্যবধান যে অনেক, টেস্টের চতুর্থ দিন হাড়ে হাড়ে টের পান আশরাফুল। এক রান যোগ করে ব্যক্তিগত ১৯০ রানে সাজঘরে ফেরেন। তার আউটে হতাশার কালো মেঘে ছেয়ে যায় বাংলাদেশের ক্রিকেটপ্রেমীদের মন। তবে দিন শেষে ক্রিকেটপ্রেমীদের হতাশা কাটিয়ে উচ্ছ্বলতায় ভাসিয়ে দেন মুশফিক। বাংলাদেশের প্রথম ক্রিকেটার হিসেবে ডাবল সেঞ্চুরির বিরল রেকর্ডটি নিজের নামের পাশে লিখে নেন। ক্যারিয়ারে মোট ৩টি ডাবল সেঞ্চুরি করেছেন উইকেটরক্ষক ব্যাটার। কিন্তু ২০১৩ সালের সেঞ্চুরির মাহাত্ম্যই আলাদা। মুশফিকের ডাবল সেঞ্চুরিতে বাংলাদেশ-শ্রীলঙ্কা টেস্টটি ড্র হয়েছিল। দ্বীপরাষ্ট্রের মাটিতে ওটাই টাইগারদের প্রথম টেস্ট ড্র। তার ডাবল সেঞ্চুরিটি ছিল আবার টেস্টে বাংলাদেশের ক্রিকেটারদের প্রথম।
ভারত মহাসাগরের দ্বীপরাষ্ট্র শ্রীলঙ্কায় সপ্তমবারের মতো সিরিজ খেলতে গেছে বাংলাদেশ। সর্বশেষ সফরে গিয়েছিল ২০২১ সালে। গলে ২টি টেস্ট খেলেছে বাংলাদেশ। ২০১৩ সালে ড্র এবং ২০১৭ সালে হেরেছিল ২৫৯ রানে। এক যুগ আগে ড্র টেস্টের টাইগার অধিনায়ক ছিলেন মুশফিক।
এক যুগ আগে মুশফিক ২০০ রানে ইনিংস খেলেছিলেন ৩২১ বলে ২২ চার ও ১ ছক্কায়। আশরাফুল ছাড়া আরও একজন সেঞ্চুরি করেছিলেন সেবার। নাসির হোসেন করেছিলেন ১০০ রান। স্বাগতিকদের ৪ উইকেটে ৫৭০ রানের জবাবে মুশফিক বাহিনীর সংগ্রহ ছিল ১৯৬ ওভারে ৬৩৮। আশরাফুল ও মুশফিক পঞ্চম উইকেট জুটিতে যোগ করেছিলেন ৮৬.২ ওভার বা ৫১৮ বলে ২৭৭ রান। ষষ্ঠ উইকেট জুটিতে মুশফিক ও নাসির যোগ করেছিলেন ১০৪ রান। টেস্টটি ড্র হলেও মুশফিক ও বাংলাদেশের জন্য স্মৃতিময়। ২০১৭ সালে এই মাঠে আরও একটি টেস্ট খেলে দুই দেশ। টেস্টটি বাংলাদেশ হেরেছিল ২৫৯ রানে পর্বতসমান ব্যবধানে। দল হারলেও ব্যাটিংয়ে উজ্জ্বল ছিলেন মুশফিক। প্রথম ইনিংসে ৮৫ রানের পর দ্বিতীয় ইনিংসে ৩৪ রান করেছিলেন। টাইগারদের এবারের সিরিজে সবচেয়ে অভিজ্ঞ মুশফিক শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে সফল একজন ব্যাটার। দ্বীপরাষ্ট্রের বিপক্ষে ১৭ টেস্টে রান করেন ১৩৪৬।
বাংলাদেশ-শ্রীলঙ্কা ২ ম্যাচ টেস্ট সিরিজ দিয়ে শুরু হচ্ছে ২০২৫-২৭ মৌসুমের আইসিসি টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের চতুর্থ চক্র। আজ শুরু টেস্টটি বৃষ্টিবাধায় পড়তে পারে। গল আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে, ঝড়বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে। এ টেস্টে একাদশ সাজাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে নাজমুল বাহিনীকে। দলের সহ অধিনায়ক মেহেদি হাসান মিরাজ এখনো জ্বরে ভুগছেন। তিনি খেলবেন কি না এখনো নিশ্চিত নয় বলেন টাইগার অধিনায়ক।
তিনি বলেন, ‘এখনো মিরাজের শরীরটা খারাপ আছে। তবে উন্নতি করছে। ওর খেলা না খেলার ওপরে অনেক কিছু নির্ভর করছে। ওই জায়গাটা যদি ঠিক থাকে, তাহলে আমরা একটা ভালো কম্বিনেশন নিয়ে নামতে পারব।’
দুই দেশ এখন পর্যন্ত পরস্পরের বিপক্ষে টেস্ট খেলেছে ২৬টি। জয় সাকল্যে একটি, ২০১৭ সালে কলম্বোয় ৪ উইকেটে।