যুক্তরাজ্যের সবচেয়ে ব্যস্ততম বিমানবন্দর হিথ্রো সম্প্রসারণে ৪৯ বিলিয়ন পাউন্ড বিনিয়োগের পরিকল্পনা ঘিরে শুরু হয়েছে ব্যাপক আলোচনা ও বিতর্ক। একদিকে বাণিজ্যিক সংযোগ ও চাকরির সুযোগ তৈরির আশাবাদ, অন্যদিকে পরিবেশগত ক্ষতি ও স্থানীয়দের উদ্বেগ।
এই প্রকল্প বাস্তবায়নে সরকার ও বেসরকারি খাত উভয়ের সমর্থন থাকলেও পরিবেশবাদীদের তীব্র আপত্তি রয়েছে। এরই মাঝে হিথ্রো বিমানবন্দর আধুনিকীকরণ ও সম্প্রসারণে ৪৯ বিলিয়ন পাউন্ড খরচের পরিকল্পনা প্রকাশ করেছে কর্তৃপক্ষ।
বিমানবন্দরটির প্রধান নির্বাহী টমাস উল্ডবাই বলেন, “বর্তমানে হিথ্রো সক্ষমতার পুরোটা ঘিরেই কাজ করছে, যা বাণিজ্য ও যোগাযোগে নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে। এজন্য সম্প্রসারণ এখন জরুরি।” তিনি জানান, সম্পূর্ণ প্রকল্পটি বেসরকারি অর্থায়নে বাস্তবায়ন হবে।
দেশটির সরকার ইতোমধ্যে তৃতীয় রানওয়ের পরিকল্পনার প্রতি সমর্থন জানিয়েছে। অর্থমন্ত্রী র্যাচেল রিভস বলেন, এই প্রকল্প যুক্তরাজ্যকে “বিশ্বের সবচেয়ে সংযুক্ত বাণিজ্যিক কেন্দ্র” হিসেবে গড়ে তুলবে।
তবে পরিবেশবাদী গোষ্ঠী, স্থানীয় বাসিন্দা ও রাজনীতিকদের একাংশ এর বিরোধিতা করছেন। লন্ডনের মেয়র সাদিক খান বলেন, “এই সম্প্রসারণ প্রকল্পে শব্দদূষণ, বায়ুদূষণ এবং জলবায়ু লক্ষ্য অর্জনে ব্যাপক নেতিবাচক প্রভাব পড়বে।”
সম্প্রসারণ পরিকল্পনার মূল বিষয়গুলো
- উত্তর-পশ্চিম রানওয়ে: ৩,৫০০ মিটার দীর্ঘ নতুন রানওয়ে নির্মাণ। বার্ষিক ফ্লাইট সক্ষমতা ৭৫৬,০০০ ও যাত্রী সংখ্যা ১৫ কোটি (বর্তমানে প্রায় ৮.৪ কোটি)।
- নতুন টার্মিনাল T5X ও ৩টি স্যাটেলাইট টার্মিনাল, টার্মিনাল ৩ বন্ধ হবে।
- স্থানীয় রেল যোগাযোগ, হাঁটা ও সাইকেল পথ উন্নয়ন।
- M25 সড়কে নতুন টানেল নির্মাণ ও সম্প্রসারণ।
- দুটি হিথ্রো পার্কওয়ে স্টেশন ও বাস-স্টেশন উন্নয়ন।
- তৃতীয় রানওয়ে নির্মাণে ব্যয় ধরা হয়েছে ২১ বিলিয়ন পাউন্ড, নতুন টার্মিনাল ১২ বিলিয়ন এবং বাকি ১৫ বিলিয়ন পাউন্ড বর্তমান অবকাঠামো আধুনিকীকরণে ব্যয় হবে।
ব্যবসায়ীদের সমর্থন
ব্রিটিশ চেম্বার, ফেডারেশন অব স্মল বিজনেস, ইনস্টিটিউট অব ডিরেক্টরসসহ এক যৌথ বিবৃতিতে বলা হয়েছে, “এই প্রকল্প জাতির ভবিষ্যতের জন্য বিনিয়োগ। এটি নতুন বাজারে প্রবেশ, সংযোগ বৃদ্ধি এবং লাখো মানুষের কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি করবে।”
পরিবেশগত উদ্বেগ
টমাস উল্ডবাই আশ্বাস দিয়ে বলেন, “আমরা ২০৫০ সালের মধ্যে কার্বন নিঃসরণ শূন্যে নামিয়ে আনতে চাই। হিথ্রো এখন টেকসই জ্বালানির সবচেয়ে বড় ব্যবহারকারী বিমানবন্দর।”
তবে এর বিরোধিতা করে গ্রিনপিস ইউকের নীতিনির্ধারক ডগলাস পার বলেন, “এটা পরিবেশ রক্ষার জন্য নয়, বরং কিছু ভ্রমণকারীদেরকে বাড়তি সুবিধা দেওয়ার নামেই এই পরিকল্পনা।” তিনি ‘ফ্রিকোয়েন্ট ফ্লায়ার লেভি’ বা (ঘন ঘন বিমানে ভ্রমণকারী যাত্রীদের ওপর অতিরিক্ত কর বা ফি) চালুর আহ্বান জানান।
লিবারেল ডেমোক্র্যাট ও গ্রিন পার্টির নেতারাও এর বিরোধিতা করে বলেন, "হিথ্রো আগে থেকেই যুক্তরাজ্যের সবচেয়ে বড় দূষণকারী। এই সম্প্রসারণ জলবায়ু লক্ষ্য অর্জনে প্রতিবন্ধকতা তৈরি করবে।"
প্রতিদ্বন্দ্বী প্রস্তাব
তবে দেশটির হোটেল ব্যবসায়ী সুরিন্দর অরোরা-র মালিকানাধীন অরোরা গ্রুপ বিকল্প পরিকল্পনা দিয়েছে, যেখানে রানওয়ের দৈর্ঘ্য ২,৮০০ মিটার এবং M25 সড়ক পুনর্গঠনের প্রয়োজন নেই। তাদের দাবি, এই পরিকল্পনায় ব্যয় হবে ২৫ বিলিয়নের কম এবং ২০৩৫ সালের মধ্যে তা চালু করা সম্ভব।
পরবর্তী ধাপ
পরিবহনমন্ত্রী হেইডি আলেকজান্ডার বলেন, “দুইটি প্রস্তাবই আমাদের অবকাঠামোগত প্রবৃদ্ধির সম্ভাবনা বাড়ায়। সামনের গ্রীষ্মে যাচাই-বাছাই করে জাতীয় বিমানবন্দর নীতি পুনর্মূল্যায়নের কাজ শুরু হবে।”
সূত্র: বিবিসি
বিডি প্রতিদিন/আশিক