বাংলাদেশের ক্রিকেটে পঞ্চ পাণ্ডবের একজন তামিম ইকবাল। নানা আলোচনা-সমালোচনায় ক্রিকেট মাঠ থেকে দূরে ছিলেন দীর্ঘ সাত মাস। এই সাত মাসে অনেক কিছুই বদলে গেছে বাংলাদেশে। গত ৫ আগস্ট স্বৈরতন্ত্রের পতনে মুক্তির স্বাদ পেয়েছে সাধারণ মানুষ। ক্রিকেটেও এসেছে বড় ধরনের পরিবর্তন। সাকিব আল হাসান যুগের পরিসমাপ্তি ঘটেছে। ক্রিকেট বোর্ডে নাজমুল হাসান পাপনের স্থান নিয়েছেন ফারুক আহমেদ। নতুন প্রত্যয়ে নতুন বাংলাদেশে পথ চলছে ক্রিকেট। তামিম ইকবালও যেন নতুন করে ক্রিকেট জীবনটা শুরু করলেন। কিছুদিন পরই শুরু হচ্ছে বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগ (বিপিএল)। সেখানে ফরচুন বরিশালের অধিনায়ক হিসেবে খেলবেন তামিম। বিপিএলের প্রস্তুতিটাই নিচ্ছেন এনসিএল টি-২০ লিগে। এ টুর্নামেন্টে নিজের প্রথম ম্যাচটা ভালো হয়নি। তবে দ্বিতীয় ম্যাচেই স্বরূপে ফিরলেন তামিম। মাত্র ৩৩ বলে ৬৫ রানের ইনিংস খেলে ম্যাচসেরার পুরস্কারও জয় করলেন।
ঢাকা প্রিমিয়ার ডিভিশন ক্রিকেট লিগে গত ৩০ এপ্রিল ৭৪ বলে ৭৬ রান করে প্রাইম ব্যাংক ক্রিকেট ক্লাবকে জয় উপহার দিয়েছিলেন তামিম ইকবাল। সেই ম্যাচে সেরা ক্রিকেটারের পুরস্কার জয় করেন তিনি। এরপর কয়েকটা ম্যাচ খেললেও নিজের নামের প্রতি সুবিচার করতে পারেননি। অবশেষে তামিমকে দেখা গেল ‘তামিম’ রূপে। গতকালের ম্যাচে মাহমুদুল হাসান জয়কে সঙ্গে নিয়ে ওপেন করতে নামেন তামিম। উদ্বোধনী জুটিতেই চট্টগ্রামের হয়ে দুজন করেন ৮০ রান। এরপর জয় আউট হলেও টিকে থাকেন তামিম। ৮টি চার ও ৩টি ছক্কায় ১৯৬.৯৭ স্ট্রাইক রেটে করেন ৬৫ রান। ক্যারিয়ারের অন্যতম সেরা ইনিংস খেললেন তামিম। এর আগে টি-২০ ক্রিকেটে এর চেয়ে বেশি স্ট্রাইক রেটে মাত্র দুটি ইনিংস খেলেছেন তিনি। স্বীকৃত টি-২০ ক্রিকেটে ২৬৫ ম্যাচের ক্যারিয়ারে ৪টি সেঞ্চুরি ও ৫০টি হাফ সেঞ্চুরি করেছেন তামিম। গতকাল ফিফটির ফিফটি পূরণ করলেন তিনি। ৫০ ছাড়ানো ৫৪টি ইনিংসের মধ্যে সর্বোচ্চ স্ট্রাইক রেটের দুটি ইনিংসেই সেঞ্চুরি করেছেন তামিম। ২০১৯ সালে বিপিএলের ফাইনালে কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ানসের হয়ে ঢাকা ডায়নামাইটসের বিপক্ষে ৬১ বলে ১৪১ রানের ইনিংসে তামিমের স্ট্রাইক রেট ছিল ২৩১.১৪। ২০১৩ সালে বিজয় দিবস ক্রিকেটে ইউসিবি-বিসিবি একাদশের বিপক্ষে ৬৪ বলে ১৩০ রানের ইনিংসে তামিমের স্ট্রাইক রেট ছিল ২০৩.১২।
গতকাল দুর্দান্ত এক ইনিংস খেলে গণমাধ্যমকে তামিম বলেন, ‘আমার জন্য সত্যিই গুরুত্বপূর্ণ ইনিংস। এ কারণেই আমি চাই যে, চারটা-পাঁচটা ম্যাচ খেলব। অনেক দিন বাইরে থাকলে অনেক কিছু মানিয়ে নিতে হয়। প্রথম ম্যাচে হয়নি, সেকেন্ড ম্যাচ মাশাআল্লাহ ভালো হলো। আমার জন্য খেলার সময়টা গুরুত্বপূর্ণ। সবাই জানি, সামনে বিপিএল যেটা গুরুত্বপূর্ণ। এই টুর্নামেন্টও গুরুত্বপূর্ণ।’ বিপিএলের জন্য প্রস্তুত হচ্ছেন তিনি। গতবার বিপিএলে ফরচুন বরিশালকে নেতৃত্ব দিয়ে চ্যাম্পিয়ন করিয়েছিলেন। এবারও লক্ষ্য বিপিএলের শিরোপা।
তামিম ইকবালের স্বরূপে ফেরার ম্যাচে চট্টগ্রাম ১২ রানে হারিয়েছে সিলেটকে। প্রথমে ব্যাটিংয়ে নেমে তামিমের ঝোড়ো ইনিংসে ১৪৫ রান করে চট্টগ্রাম। জবাবে ১৩৩ রানে অলআউট হয় সিলেট। দুই ম্যাচে এক জয়ে দুই পয়েন্ট নিয়ে তালিকার চার নম্বরে অবস্থান করছে চট্টগ্রাম। গতকাল জয় পেয়েছে ঢাকা মেট্রো, রংপুর এবং খুলনাও। রংপুর ও ঢাকা মেট্রো চার পয়েন্ট করে সংগ্রহ করেছে। তবে রান রেটে এগিয়ে থাকায় শীর্ষে আছে রংপুর।