মিরপুর স্টেডিয়ামের ২ নম্বর গেটে ঢোকার পথে তিনটি ব্যানার টাঙানো। ব্যানারগুলো দৃষ্টি আকর্ষণ করে ক্রিকেটার, ক্লাব কর্মকর্তা, বিসিবি পরিচালক, পথচারীসহ সবার। রঙিন ব্যানারে আরাফাত রহমান কোকোর ৫৬তম জন্মবার্ষিকীর শুভেচ্ছা জানিয়েছে ঢাকার ক্রিকেট ক্লাবগুলোর অ্যাসোসিয়েশন। ঠিক তার নিচে সাদা কাপড়ে আরও দুটি ব্যানার টাঙানো। ঢাকাস্থ নারী ক্রিকেট ক্লাব অ্যাসোসিয়েশনের ব্যানার দুটির আকার, আয়তন ও লেখা হুবহু। ব্যানারে তিন দাবির প্রথমটিতে লেখা, ‘আসন্ন বিসিবি নির্বাচনে ঢাকাস্থ সকল নারী ক্রিকেট ক্লাবের কাউন্সিলর চাই’। নারী ক্রিকেট ক্লাব অ্যাসোসিশেয়নের ব্যানার পরিষ্কার ইঙ্গিত করছে, বিসিবির আসন্ন নির্বাচনে সবার নজর ক্লাবগুলোর কাউন্সিলরদের দিকে। ১২ প্রিমিয়ার, ২০ প্রথম বিভাগ, ২৪ দ্বিতীয় বিভাগ ও ২০ তৃতীয় বিভাগ-এ ৭৬টি ক্লাব ক্যাটাগরি-২-এর আওতায়। ‘এ’ ক্যাটাগরি থেকে নির্বাচিত হবেন ১২ পরিচালক। বিসিবি পরিচালনা পর্ষদে যা সর্বোচ্চসংখ্যক। সেজন্যই বিসিবির আসন্ন নির্বাচনে ক্রিকেটার, ক্রিকেট সংগঠক সবার নজর ক্লাব কাউন্সিলরদের দিকে।
বিসিবির নির্বাচন কবে? চূড়ান্ত তারিখ এখনো ঘোষণা করেনি বিসিবি। অবশ্য তিন সদস্যের নির্বাচন প্যানেল চূড়ান্ত করেছে ক্রিকেট বোর্ড। তারা এখন নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করবে। শোনা যাচ্ছে, ৪-৬ অক্টোবরের মধ্যে নির্বাচন হবে। নির্বাচন হবে নাজমুল হাসান পাপনের সময়ে ২০২৪ সালের সংশোধিত গঠনতন্ত্র মেনে। যদিও বিসিবির বর্তমান কমিটি গঠনতন্ত্রের সংশোধন করতে চেয়েছিল। ক্যাটাগরি-২-এ ক্লাব পরিচালকের সংখ্যা কমানোর প্রস্তাব রেখেছিল। ক্লাবগুলোর আন্দোলনে সে অবস্থান থেকে সরে আসতে বাধ্য হয় গঠনতন্ত্র সংশোধন কমিটি। এখন বিসিবির নির্বাচন হবে ক্যাটাগরি ১, ২ ও ৩-এ। তিন ক্যাটাগরিতে নির্বাচন হবে ২৩ পরিচালক পদে। বিসিবির পরিচালক অবশ্য ২৫ জন। বাকি দুজন জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের (এনএসসি) কোটায়। ২৩ পরিচালকের ১০ জন ক্যাটাগরি-১ বা জেলা ও বিভাগ থেকে। ১২ পরিচালক ঢাকার ৭৬ ক্লাব বা ক্যাটাগরি-২ থেকে এবং একজন পরিচালক ক্যাটাগরি-১ থেকে নির্বাচিত হবেন। ২৩ পরিচালকের মধ্যে ক্রিকেটারসহ ক্রিকেটপ্রেমী সবার নজর ক্লাব পরিচালকদের দিকে। সাবেক ক্রিকেটার, সংগঠক, ব্যবসায়ী, রাজনীতিবিদ সবাই ব্যস্ত ক্লাবগুলোর কাউন্সিলর হতে। ১৭ সেপ্টেম্বর চূড়ান্ত হবে ক্লাব কাউন্সিলরদের নাম। ক্লাবগুলো সাধারণত কাউন্সিলর চূড়ান্ত করে নিজের সুবিধা নিয়ে।
ক্রিকেটপাড়ায় গুঞ্জন, ক্লাবগুলোর কাউন্সিলরশিপ দুই-তিন পক্ষের হাতে জিম্মি। সমালোচকরা এর সমালোচনা করছেন। ক্লাব কোটায় নির্বাচন করতে আগ্রহী নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন পরিচালক বলেন, ‘একজন শুধু একটি ক্লাবের কাউন্সিলর হতে পারেন। কিন্তু বিসিবির পরিচালক হতে আগ্রহী অনেকেই বছরের পর বছর একাধিক ক্লাবকে আর্থিক সহায়তা করে আসছেন। সেসব ব্যক্তি সমালোচনা করছেন, যারা কাউন্সিলরশিপ পাননি। তারা শীতের পাখি। তারা জানেন না ক্লাবগুলো কাউন্সিলর চূড়ান্ত করে থাকে গঠনতন্ত্র অনুযায়ী।’ কাউন্সিলরশিপ বেশি পরিবর্তন হয় দ্বিতীয় ও তৃতীয় বিভাগের ক্লাবগুলোয়। নির্বাচনের আগে ক্লাবগুলো আর্থিক সহায়তাকারীদের অনুরোধে তাদের মনোনীত ব্যক্তিদের কাউন্সিলর করে থাকে। এতে অনিয়ম থাকে না। কার্যকরী পরিষদের পূর্ণ সমর্থনে কাউন্সিলর চূড়ান্ত করে ক্লাব। যদিও বিসিবির সাবেক পরিচালক ইসমাইল হায়দার মল্লিক তাঁদের পক্ষে কাউন্সিলর মনোনীত করতেন ক্ষমতাবলে। ক্লাবগুলোর গঠনতন্ত্র অনুসরণ করা হতো না তখন।
বিসিবির ১২ ক্লাব পরিচালক হতে আগ্রহী অনেক প্রার্থীর নাম শোনা যাচ্ছে। মাহবুব আনাম নিজেকে সরিয়ে নিয়েছেন। তার পরও ক্লাব পরিচালক হওয়ার লড়াইয়ে রয়েছেন মাহবুব আনাম। এ ছাড়া শোনা যাচ্ছে তামিম ইকবাল, ইশরাক হোসেন, রফিকুল ইসলাম বাবুু, ইফতেখার রহমান মিঠু, ফাহিম সিনহা, ইশতিয়াক সাদেক, সানিয়ান তামিম, মঈন ইসলাম, মঞ্জুরুল হক, আজিজ আল কায়সার টিটো, আসিফ রাব্বানি, সৈয়দ বোরহানুল হোসেন পাপ্পু, জিয়াউর রহমান তপু, সালাউদ্দিন চৌধুরী, আদনান রহমান দীপন, মিতুর নাম।