বাংলাদেশ আজ হংকং চায়নার মুখোমুখি হচ্ছে। রাত ৮টায় ঢাকা জাতীয় স্টেডিয়ামে ম্যাচটি শুরু হবে। এশিয়ান কাপ বাছাইয়ের ঘরের মাঠে এটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচ। চূড়ান্ত পর্বের সম্ভাবনা জিইয়ে রাখতে বাংলাদেশের জয় ছাড়া কোনো বিকল্প নেই। ১৪ অক্টোবর হংকংয়ে আবার অ্যাওয়ে ম্যাচ। ৪৫ বছর পর এশিয়ান ফুটবলে শ্রেষ্ঠত্বের লড়াইয়ে বাংলাদেশ খেলতে পারবে কি না তা নির্ভর করছে দুটি ম্যাচের ওপর। ফুটবলে তেমন শক্তিশালী নয় বলে দর্শকের কাছে হংকং নামটি অচেনাই বলা যায়। তবে দেশটি বাংলাদেশের নতুন প্রতিপক্ষ নয়। সেই ৫০ বছর আগে আন্তর্জাতিক আসরে দুই দেশ প্রথমবারের মতো মুখোমুখি হয়েছিল। সেবারই আমার জাতীয় দলে অভিষেক ঘটেছিল।
১৯৭৫ সালে বাংলাদেশ জাতীয় দল মালয়েশিয়ায় দ্বিতীয়বার মারদেকা কাপে অংশ নেয়। ১৯৭৩ সালেই মারদেকা কাপ দিয়ে আন্তর্জাতিক ফুটবলে বাংলাদেশের অভিষেক। সেবার অধিনায়ক ছিলেন জাকারিয়া পিন্টু ভাই। ’৭৫ সালে দায়িত্ব পান কাজী সালাউদ্দিন ভাই। ’৭৫ সালে আমার বয়স ১৭ বা ১৮। এ বয়সে জাতীয় দলে সুযোগ পেয়ে অবাক হয়ে যাই। ’৭৪ সালে ঢাকা প্রথম বিভাগ লিগে রহমতগঞ্জে খেলি। সেবারই আবাহনী প্রথম চ্যাম্পিয়ন হয়। তবে রহমতগঞ্জের কাছে তারা হার মেনেছিল। গোলটি করেছিলাম আমি। আমার পারফরম্যান্সে মুগ্ধ হয়ে পরের বছরই আবাহনী আমাকে দলভুক্ত করে।
আবাহনীতে খেলেই স্বপ্নের জাতীয় দলে আমার সুযোগ হয়। এজন্য ক্লাবটির কাছে ঋণী। ৭৫-ও জাতীয় দলে আমিই ছিলাম কনিষ্ঠতম সদস্য। সুপারস্টারে ভরপুর দল। গোলরক্ষক শহিদুর রহমান শান্টু, রক্ষণভাগে আশরাফ, নান্নু, বাটু, সলিমুল্লাহ, মঞ্জু। অমলেশ, এনায়েত, নওশের, অনেকের নাম মনে করতে পারছি না। তবে এটি যে বাংলাদেশের ইতিহাসে অন্যতম সেরা দল ছিল তাতে অনেকেই একমত হবেন। সেবারই আমরা হংকংয়ের বিপক্ষে প্রথম খেলেছিলাম। এ ম্যাচটি শুধু আমার নয়, জাতীয় দলের জন্য ছিল বড় লজ্জার। ম্যাচে আমরা ছিলাম পুরোপুরি ফ্লপ। ৯-১ গোলে হেরে যাই। ওই যে বলে না, মাঠে দাঁড়াতেই পারেনি, আমাদেরও অবস্থা ছিল তাই।
এশিয়ান কাপ বাছাই পর্বে দুই দেশ আবার মুখোমুখি হচ্ছে বলেই ৫০ বছর আগের দুঃস্বপ্নের সেই ম্যাচের কথা মনে পড়ে যাচ্ছে। শক্তিশালী দল হওয়ার পরও বাংলাদেশ ৯ গোল হজম করল কেন? এ প্রশ্ন জাগাটা স্বাভাবিক। অনেকে ক্লান্ত বা রেফারিং এসব দেখিয়ে নানান অজুহাতের কথা বলেছেন। আমি সরাসরি বলব আমাদের নিজেদের ভুলে এত বড় পরাজয় মেনে নিতে হয়েছে। হংকংয়ের অনুশীলন ও ম্যাচ দেখে মনে হয়েছিল ওরা আমাদের সঙ্গে পারবে না। মারদেকা কাপের সেই ম্যাচে বাংলাদেশ শুরু থেকেই আক্রমণাত্মক খেলা খেলেছে। ওরা আবার কাউন্টারে গিয়ে একের পর এক গোল করেছে। রক্ষণ, মধ্য বা আক্রমণ সব ভাগই ছিল ব্যর্থ। ম্যাচে যখন হংকং ২-০ গোলে এগিয়ে তখন সালাউদ্দিন ভাই চমৎকার গোল করে ব্যবধান কমান। পরে আর পাত্তাই পাইনি। ’৭৬ সালে বাংলাদেশের প্রথম ফুটবলার হিসেবে হংকংয়ে পেশাদার লিগ খেলেন সালাউদ্দিন ভাই। আমি বলব মারদেকা কাপে তাঁর সেই অনবদ্য গোলই সুযোগ এনে দেয়। খেলেন কারোলিন ক্লাবে।