আফঈদা খন্দকাররা যা পেরেছেন তা পারেননি হামজারা। হ্যাঁ, নারী জাতীয় ফুটবল দল এশিয়ান কাপের চূড়ান্ত পর্বে খেলবে। শুধু তাই নয়, অনূর্ধ্ব-২০ নারী দলও চূড়ান্ত পর্বে জায়গা করে নিয়েছে। এ কৃতিত্ব যেমন মেয়েদের, তেমন পিটার বাটলারেরও। তাঁর দক্ষ প্রশিক্ষণেই বাংলাদেশ এত দূর এসেছে। ১৯৮০ সালে পুরুষ জাতীয় দল প্রথম ও শেষবারের মতো এশিয়ান কাপ চূড়ান্ত পর্বে খেলেছিল। ৪৫ বছর পর আশা জেগেছিল এশিয়ান ফুটবলে শ্রেষ্ঠত্বের লড়াইয়ে মুখোমুখি হওয়ার। দলে প্রবাসী হামজা দেওয়ান চৌধুরী, সামিত সোম ও ফাহমিদুল খেলায় প্রত্যাশাটা তৈরি হয়েছিল। পরে জায়ান আহমেদ খেলার পরও ৪৫ বছরের স্বপ্ন পূরণ হয়নি। আর তিন প্রবাসী জামাল ভূঁইয়া, তারিক কাজী ও কাজিম শাহ আগে থেকে জাতীয় দলে খেলছেন। জামাল তো বাংলাদেশের ফুটবল ইতিহাসে সর্বোচ্চ ম্যাচের অধিনায়ক। দীর্ঘ সময়ে বেস্ট ইলেভেনে না থেকেও জাতীয় দলের অধিনায়ক; যা শুধু বাংলাদেশ নয়, বিশ্ব ফুটবলে বিরল বলা যায়।
সব মিলিয়ে জাতীয় দল এখন প্রবাসীময়। সাত প্রবাসী নিয়ে স্কোয়াড গড়া হয়। এর মধ্যে শুরু থেকে সবাই না খেললেও মাঠে তো নামছেন। সব প্রবাসীর মধ্যে হামজার নামই আগে উচ্চারিত হবে। ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগে খেলা এই ফুটবলারের বাংলাদেশে অভিষেকের পর ফুটবলের দৃশ্যপটই পাল্টে গেছে। সামিত সোমের আবার কানাডা জাতীয় দলে খেলার অভিজ্ঞতা রয়েছে। এত প্রবাসী খেলার পরও দুই ম্যাচ আগে চূড়ান্ত পর্বে খেলার সম্ভাবনা শেষ! এ কি চরম ব্যর্থতা বা ভরাডুবি নয়? ৪৫ বছর ধরেই একই ব্যর্থতা, তবে এবার তো হামজা-সামিতদের মতো ফুটবলার ছিলেন। তাঁরা খেলার পরও যদি এ হাল হয় তাহলে মেয়েদের কাছে পুরুষ ফুটবলাররা লজ্জা পেলেন না? আফঈদাদের দলে কোনো প্রবাসী ছিলেন না। সেখানে নারী জাতীয় দলের এশিয়ান কাপের চূড়ান্ত পর্বে খেলাটা নিঃসন্দেহে গৌরবের। তবে পুরুষ জাতীয় দলের এমন ফলও লজ্জার বলা যাবে না। বরং অন্ধকারে হারিয়ে যাওয়া ফুটবল আলোর মুখ দেখছে।
শেখ মো. আসলাম ও কায়সার হামিদ দুজনই জাতীয় দলের হয়ে এশিয়ান কাপ বাছাই পর্বে খেলেছেন। কখনো গ্রুপ পর্ব পেরোতে পারেননি। এবার হামজাদের মতো প্রবাসী ফুটবলার থাকার পরেও একই দৃশ্যের পুনরাবৃত্তি। কিন্তু আসলাম বা কায়সারের মতো তারকা বলেছেন, ‘ব্যর্থতা বা হতাশা নয়, এবারের না পারাটা আফসোস ছাড়া আর কিছু নয়। এখন হংকং ও সিঙ্গাপুরের ম্যাচ যারা জিতবে তারাই চূড়ান্ত পর্বে জায়গা করে নেবে। দুই ম্যাচ বাকি থাকলেও বাংলাদেশের আর কোনো সম্ভাবনা নেই।’ তার পরও দুই তারকার মতে এবার বাছাই পর্বে যা ঘটেছে, তা দেশের ফুটবলের পুনর্জাগরণই।
কায়সার বলেন, ‘ফুটবল তো একেবারে শেষ হয়ে গিয়েছিল। হামজা, সামিত, ফাহমিদুল ও জায়ানরা নতুন জীবন দিয়েছেন। ফুটবল ১১ জনের খেলা হলেও এ চার প্রবাসী প্রমাণ রেখেছেন ফুটবলে বাংলাদেশও শক্তিশালী রূপ ধারণ করতে পারে। আমি বলব, হামজারা খেললে তা বাস্তবে রূপ দেবেই।’ আসলাম বলেন, ‘বাছাই পর্বে বাংলাদেশ চার ম্যাচ খেলেছে। কোনো জয় আসেনি। কিন্তু আমি বলব, চার ম্যাচেই বাংলাদেশের জেতার সম্ভাবনা ছিল। আগে তো মাঠে দাঁড়াতেই পারত না। এখন জিততে জিততে ড্র বা হেরে যাচ্ছে। একে কি ভরাডুবি বলা যায়? এখন ব্যর্থতা পরিণত হয়েছে আফসোসে। সেদিন আর বেশি দূরে নয় আফসোসও দূর হয়ে যাবে। নভেম্বরে ভারত ও মার্চে যদি সিঙ্গাপুরকে হারানো যায় আমি বলব, দুর্দান্তভাবে বাংলাদেশ দাঁড়িয়ে যাবে। দরকার শুধু ম্যাচে যোগ্যদের সঠিক মূল্যায়ন করা।’