সেই প্রাচীনকাল থেকে যোগ ব্যায়াম উপমহাদেশের মানুষকে সুস্থতা দিয়েছে। এমনকি প্রাগৈতিহাসিক সময়েও (খ্রিস্ট-পূর্ব তৃতীয় সহস াব্দ) ইন্দুস ভ্যালি সভ্যতায় যোগ ব্যায়ামের অস্তিত্ব পেয়েছেন প্রত্নতাতি্বক গ্রেগরি। হরপ্পা এবং মহেঞ্জোদারো সভ্যতার অসংখ্য দেয়ালচিত্রে বিষয়টি প্রমাণিত হয়েছে। যোগ ব্যায়ামের অনেক শিক্ষক রয়েছেন। এদের বেশিরভাগই ধর্মীয় গুরু। হিন্দু এবং বৌদ্ধ ধর্মের অনেক গুরুই ছিলেন যোগ ব্যায়ামের পথ প্রদর্শক। তবে যোগ ব্যায়ামের সূত্রগুলোকে প্রথম লিপিবদ্ধ করেন পতঞ্জলি। খ্রিস্ট-পূর্ব দ্বিতীয় শতকে পতঞ্জলির লেখা এই সূত্রগুলোই পরবর্তীতে যোগ ব্যায়ামের আকর গ্রন্থ হয়ে উঠে। এই মহান লেখক নিজস্ব মতামতও দিয়েছেন তার গ্রন্থে। সেখানে তিনি অষ্টাঙ্গ যোগ নামে একটি অধ্যায় লিখেছেন। এই ব্যায়ামগুলো নিয়মিত করতে পারলে শরীর এবং মন দুটোই সুস্থ ও সতেজ থাকবে।
পতঞ্জলির অষ্টাঙ্গ যোগ ব্যায়ামগুলো হচ্ছে_ ওঁম, নিয়ম, আসন, প্রাণায়ম, প্রত্যাহার, ধারণ, ধ্যান। প্রতিটি ব্যায়ামেরই রয়েছে আলাদা বৈশিষ্ট্য এবং উপকারিতা। প্রথম ব্যায়াম ওঁম কিংবা ইয়ামা কিছু নৈতিক বিষয় নির্দেশ করে। এ জন্য ওঁমকে ব্যক্তির সামাজিক আচরণ সূত্রও বলা হয়। প্রথমত অহিংসা। পৃথিবীর সব সৃষ্টির প্রতিই অহিংসা পোষণ করতে হবে। কাউকে আঘাত করা যাবে না। দ্বিতীয়ত সত্য। মিথ্যাকে বর্জন করে সত্যের মধ্যে পুরোপুরি লীন হতে হবে। সবরকমের প্রতারণা থেকে মুক্ত থাকতে হবে। তৃতীয়ত আস্থা। পরের উপর নির্ভরশীলতা দূর করতে হবে। নিজেকে এমনভাবে গড়ে তুলতে হবে যাতে নির্ভরযোগ্য হওয়া যায়। চতুর্থত ব্রহ্মচর্য। এর অর্থ চিরকুমার থাকা নয়। বরং অনৈতিকভাবে লালসা বাস্তবায়ন না করাই হচ্ছে এর উদ্দেশ্য। পঞ্চমত অপরিগ্রহ। এর অর্থ হচ্ছে ভোগ-বিলাস থেকে মুক্ত থাকা। এতে শরীরে অলসতা বৃদ্ধি পায় এবং দেখা দেয় নানান সমস্যা। অষ্টাঙ্গ যোগের প্রথমটি ওঁম মূলত এমন এক ব্যায়াম যেখানে মানুষ সম্পূর্ণ নীরবে নিজের কাছেই প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হয় সব প্রকার অনৈতিক কাজ থেকে বিরত থাকার। এই ব্যায়াম মূলত মানসিক প্রশান্তির জন্যই প্রয়োজন। শরীর কেবল তখনই পূর্ণাঙ্গভাবে কাজ করবে যখন মানসিক প্রশান্তি থাকবে। অষ্টাঙ্গ যোগে পতঞ্জলি সবার আগে এ কারণেই ওঁম যোগ ব্যায়াম রেখেছেন।