পেপ গার্ডিওলাকে একবার জিজ্ঞেস করা হয়েছিল, তার সবচেয়ে খারাপ লাগে কিসে? চটজলদি গার্ডিওলার উত্তর ছিল, পজেশন হারালে। তার টিকিটাকা-দর্শন তখনই স্পষ্ট হয়েছিল। গার্ডিওলার এই ফুটবলীয় দর্শন গত প্রায় অর্ধযুগ বিশ্বফুটবলে রাজত্ব করেছে। তবে পড়ন্ত বেলায় এসে প্রমাণ হলো, টিকিটাকা ম্যাচের সৌন্দর্য্য বৃদ্ধি করতে পারে। দর্শকদের মোহগ্রস্ত করে রাখতে পারে। এমনকি মাঝে মধ্যে জয়ও এনে দিতে পারে। কিন্তু টিকিটাকা প্রতিটা ম্যাচেই জয়ের জামিন হতে পারে না। বুধবার সান্তিয়াগো বার্নাব্যুতে এই বিষয়টাই তো প্রমাণ হলো। পুরো ম্যাচে বায়ার্ন মিউনিখের পায়ে বল ছিল ৭২ ভাগ সময়। অথচ ২৮ ভাগ সময় বল পায়ে রেখেই ১-০ গোলের জয় দিয়ে উয়েফা চ্যাম্পিয়ন্স লিগের প্রথম লেগ শেষ করেছে রিয়াল মাদ্রিদ!
সান্তিয়াগো বার্নাব্যুতে ম্যাচের শুরুটা দারুণ করেছিল বায়ার্ন মিউনিখ। টনি ক্রুজ পঞ্চম মিনিটেই দুর্দান্ত আক্রমণ চালিয়েছিলেন। পেপের সামনে সে আক্রমণ অবশ্য মুখ থুবড়ে পড়ে। তবে আক্ষরিক অর্থেই সুযোগ পেয়েছিলেন আরিয়েন রোবেন। ১৪তম মিনিটে এই ডাচম্যানের জোরাল শট বাম প্রান্ত থেকে লুফে নেন ইকার ক্যাসিয়াস। ম্যাচে তখনো উত্তেজনা তেমনভাবে শুরু হয়নি। এরই মধ্যে ইসকো, জাভি আলোনসো, ক্রিস্টিয়ানো রোনালদোর পা হয়ে ফ্যাবিও কন্ত্রাওয়ের ক্রস থেকে ডান পায়ের আলতো ছোঁয়ায় গোল করেন ফরাসি তারকা করিম বেনজেমা। সান্তিয়াগো বার্নাব্যুর দর্শকদের উচ্ছ্বাসে মেতে উঠার জন্য ওটুকুই প্রয়োজন ছিল। ১৯তম মিনিটের এই গোলটাই শেষ পর্যন্ত রিয়াল মাদ্রিদের জয়ের জামিন হয়ে যায়। ভাগ্য ভালো গার্ডিওলার শিষ্যদের। পরাজয়ের ব্যবধানটা নিশ্চিতভাবেই বিশাল হতে পারত। ক্রিস্টিয়ানো রোনালদোর তো হ্যাটট্রিক করার কথা ছিল। ২০, ৪৬ এবং ৮৬ মিনিটে তার তিনটি আক্রমণ ব্যর্থ হয়। এর মধ্যে একটা গোলবারের উপর দিয়ে গেলেও দুটি আক্রমণ ঠেকিয়েছেন ম্যানুয়েল নিউয়ার। করিম বেনজেমা এবং অ্যাঞ্জেল ডি মারিয়ার ডাবল হওয়ার কথা ছিল। অবশ্য এমন কয়েকটা সুযোগ বায়ার্নও পেয়েছে। আরিয়েন রোবেনের তিনটা শটের যে কোনো একটা গোল হতেই পারত। থমাস মুলারের শেষ মুহূর্তের শটটাও তো গোল হওয়ার কথা ছিল। মারিও গোত্জে, ফিলিপ লাম কিংবা টনি ক্রুজের আক্রমণগুলোও ছিল জুতসই। অতিরিক্ত মিনিটে ডি বক্সে ভেতরে মুলারকে রুখে দিয়েছিলেন জাভি আলোনসো। রেফারি ওয়েব হাওয়ার্ড এটাকে পেনাল্টি দিলে সমালোচনার তেমন কিছু ছিল না। কিন্তু দুর্ভাগ্য বায়ার্ন মিউনিখের। 'রিয়াল মাদ্রিদের চেয়ে ভালো কোনো দল নেই।' ম্যাচ শেষে গার্ডিওলার মন্তব্য এমনই। তার মতে, রিয়াল মাদ্রিদের কাউন্টার আক্রমণগুলোই বায়ার্নের পরাজয়ের জন্য দায়ী। সান্তিয়াগো বার্নাব্যুতে কোচ গার্ডিওলার প্রথম পরাজয়ের জন্য রিয়ালের কাউন্টার আক্রমণই তাহলে দায়ী! তবে গার্ডিওলা তার শিষ্যদের প্রশংসা করেছেন দারুণ একটা ম্যাচ খেলার জন্য। এই ম্যাচে বায়ার্ন জয়ী হলে তা হতো সত্যিই এক অসাধারণ ম্যাচ! কার্লো আনসেলত্তি জয়ের রহস্যটা ভেদ করলেন। 'বায়ার্ন যখনই গতি কমিয়েছে, আমরা দারুণ খেলেছি। কাউন্টার আক্রমণে আমরা তাদের চেয়ে ভালো ছিলাম।' রিয়াল মাদ্রিদের লা ডেসিমা বুঝি খুব দূরে নয়। আগামী মঙ্গলবার দ্বিতীয় লেগে যে কোনো ব্যবধানের ড্রই রিয়ালকে পৌঁছে দিবে ফাইনালে। ফাইনাল খেলার জন্য দ্বিতীয় লেগে বায়ার্নের অন্তত ২-০ গোলের জয় প্রয়োজন।