'তোমাকে খেলা মুঠোয় আনতে হবে।' নিজেদের প্রথম বিশ্বকাপের (১৯৯৪) প্রথম ম্যাচে বুলগেরিয়াকে ৩-০ গোলে উড়িয়ে দেওয়ার পর বিখ্যাত এ উক্তিটি করেছিলেন নাইজেরিয়ার গোলরক্ষক পিটার রুফাই। টেক্সাসের উত্তরাঞ্চলের ডালাস শহরের কটন বোলে সেদিন ৭২ হাজার দর্শক দেখেছিল 'সুপার ঈগল' নাইজেরিয়ার কাছে ইউরোপের অন্যতম সেরা দল বুলগেরিয়ার অসহায় আত্দসমর্পণ। ওরকম দুর্দান্ত একটা জয়ের পর নাইজেরিয়ার কোচ ক্লিমেন্স ওয়েস্টার হফের মন্তব্য ছিল, 'ছেলেদের বলেছিলাম তোমরা খেলা দেখাও। বিশ্বকে জানাও আমরাও খেলতে পারি। আফ্রিকাও ফুটবল খেলে।' চার বছর আগে ইতালিতে রজার মিলার ক্যামেরুন আফ্রিকানদের যোগ্যতার প্রমাণ দিয়েছিল কোয়ার্টার ফাইনাল খেলে। ১৯৯৪ সালে মার্কিন মুল্লুকে অনুষ্ঠিত বিশ্বকাপের ডি গ্রুপে চ্যাম্পিয়ন হয়ে তারই ধারাবাহিকতা দেখিয়েছিল নাইজেরিয়া। 'সুপার ঈগল' খ্যাত নাইজেরিয়া পঞ্চম বিশ্বকাপ খেলতে যাচ্ছে ব্রাজিলে।
নাইজেরিয়ান ফুটবলারদের কদর ইউরোপে দীর্ঘদিন ধরেই। এই ধারা দিন দিন বেড়েই চলেছে। বর্তমানে ইউরোপীয়ান লিগগুলোতে নাইজেরিয়ার প্রতিনিধিত্ব করছেন জন ওবি মাইকেল ও ভিক্টর মোসেসের মতো তারকারা। মাইকেল ইংলিশ লিগে চেলসির অন্যতম তারকা। লিভারপুলে সেরাদের একজন ভিক্টর মোসেস। এছাড়া ফ্রেঞ্চ লিগ ওয়ানে খেলছেন অধিনায়ক ভিনসেন্ট ইনিয়ামা (লিলি) ও এলডারসন (মোনাকো)। স্প্যানিশ, জার্মান ও ইতালিয়ান লিগও নাইজেরিয়ান ফুটবলারদের পদচারণায় মুখরিত। ইউরোপীয়ান ফুটবলের সঙ্গে পরিচিত এই দলটা নিয়েই বিশ্বকাপ বাছাই পর্ব পাড়ি দিয়েছেন কোচ স্টিফেন কেশি। অবশ্য কাজটা সহজ ছিল না। বেতন-ভাতা বৃদ্ধির দাবিতে ফুটবলাররা একটা সময় ফেডারেশনের সঙ্গে সম্পর্কচ্ছেদই করেছিল। শেষ পর্যন্ত অনেক দেন-দরবারও করতে হয়েছিল ফেডারেশনকে। ফুটবলারদের দাবি অনেকটাই মেনে নিতে বাধ্য হয়েছিল তারা। বিশ্বকাপ যাত্রার আগে একটা ঐক্যবদ্ধ দল গঠন করাই কোচ স্টিফেন কেশির সামনে বড় চ্যালেঞ্জ। ইরানের বিপক্ষে ১৬ জুন মাঠে নামার আগে তার সামনে রয়েছে তিনটা প্রস্তুতি ম্যাচ। স্কটল্যান্ড (২৮ মে), গ্রিস (৩ জুন) ও যুক্তরাষ্ট্রের (৭ জুন) বিপক্ষে প্রস্তুতি ম্যাচ খেলবে নাইজেরিয়া। এই ফাঁকেই দল গঠন করতে হবে স্টিফেনকে।
ব্রাজিলে দুইবারের বিশ্বচ্যাম্পিয়ন আর্জেন্টিনা, ইরান ও বসনিয়া-হার্জেগোভিনার মুখোমুখি হবে নাইজেরিয়া। ইরানের সঙ্গে একটা ম্যাচ খেলে নাইজেরিয়া ১-০ গোলে জিতেছে। ১৯৯৮ সালে এক প্রীতিম্যাচে এই জয় পেয়েছিল সুপার ঈগলরা। ১৬ জুন ইরানের বিপক্ষে মাঠে নামার আগে নিশ্চয়ই সেই জয়ের স্মৃতি সঙ্গে থাকবে নাইজেরিয়ার। আর্জেন্টিনার বিপক্ষে ৬ ম্যাচ খেলে একবারই জয় নিয়ে মাঠ ছেড়েছে সুপার ঈগলরা। ২০১১ সালের সেই ম্যাচে আলবেসিলেস্তদের ৪-১ গোলে উড়িয়ে দিয়েছিল নাইজেরিয়া। তবে আর্জেন্টিনার কাছে চারবার পরাজয় স্বীকার করেছে তারা। বসনিয়া-হার্জেগোভিনা এখনো নতুন নাইজেরিয়ার জন্য। দুই দলের প্রথম সাক্ষাৎ হবে ২১ জুন। বিশ্বকাপ বাছাই পর্বে দারুণ খেলেছে নাইজেরিয়া। গ্রুপ পর্বে এক ম্যাচ হাতে রেখেই প্লে-অফ নিশ্চিত করেছিল সুপার ঈগলরা। প্লে-অফ পর্বে আফ্রিকান ফুটবলের উঠতি শক্তি ইথিওপিয়াকে দাঁড়াতেই দেয়নি তারা। দুই লেগে ৪-১ ব্যবধানে জিতেছে নাইজেরিয়া। বাছাই পর্বের এই রেকর্ড কি বিশ্বকাপেও ধরে রাখতে পারবে আফ্রিকান ফুটবলে শ্রেষ্ঠত্বের দাবিদাররা! ১৯৯৪ ও ১৯৯৮ বিশ্বকাপে দ্বিতীয় রাউন্ড খেললেও ২০০২ ও ২০১০ সালে গ্রুপ পর্ব পাড়ি দিতে ব্যর্থ হয়েছে নাইজেরিয়া। ব্যর্থতার এই জাল ছিঁড়ে কি বের হতে পারবে 'সুপার ঈগল' নাইজেরিয়া!
দল পরিচিতি : নাইজেরিয়া
কোচ : স্টিফেন কেশি
অধিনায়ক : ভিনসেন্ট ইনিয়ামা
ফিফা র্যাঙ্কিং : ৪৫
প্রধান তারকা : জন ওবি মাইকেল ও ভিক্টর মোসেস
ফরমেশন : ৪-৩-৩
ম্যাচ ডে : ১৬ জুন (ইরান), ২১ জুন (বসনিয়া) ও ২৫ জুন (আর্জেন্টিনা)
গ্রুপ এফ : নাইজেরিয়া, আর্জেন্টিনা, ইরান ও বসনিয়া-হার্জেগোভিনা