ফুটবলে নতুন ইতিহাস গড়তে যাচ্ছে দুই প্রধান দল মোহামেডান ও আবাহনী। ১৯৭৩ সাল থেকে লিগ লড়াইয়ে মাধ্যমে তাদের লড়াই শুরু। কিন্তু কোনো মৌসুমে দুই দল চারবারের বেশি মুখোমুখি হয়নি। আজ নিটল টাটা পেশাদার ফুটবল লিগের দ্বিতীয়পর্বে তারা একে অপরের বিপক্ষে লড়বে। এটা চলতি মৌসুমে দুই প্রধানের পঞ্চম সাক্ষাৎ। এর আগে ফেডারেশন কাপে, গ্রুপ লিগে প্রথম পর্ব, স্বাধীনতা কাপে ও সেমিফাইনালে মুখোমুখি হয়েছিল তারা। লিগে তৃতীয়পর্ব ও সুপার কাপে দেখা হলে এক মৌসুমে সর্বোচ্চ সাতবার প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার সুযোগ পাবে দেশের শীর্ষ পর্যায়ে দুটো দল। যাক এ রেকর্ড নিয়ে ফুটবলপ্রেমীদের তেমন আগ্রহ নেই বললেই চলে। দুই দলের সমর্থকরা চেয়ে আছে আজকের ম্যাচে ফলাফলের দিকে। লিগে শিরোপা কে জিতবে এটা বলার সময় এখনো না হলেও মোহামেডানের জন্য ম্যাচটি বাঁচা-মরার লড়াই। তৃতীয় পর্ব বাকি থাকলেও ১২ ম্যাচে ২০ পয়েন্ট সংগ্রহ করাতে এখুনি তারা নিকটতম দুই প্রতিদ্বন্দ্বী আবাহনী ৫ ও শেখ জামালের চেয়ে ১১ পয়েন্ট পিছিয়ে আছে। আজ হেরে যাওয়া মানে মোহামেডানের শিরোপার আশা অনেকটা শেষ হয়ে যাওয়া। অন্যদিকে শিরোপা লড়াইয়ে এগিয়ে যেতে আবাহনীর কাছেও ম্যাচের গুরুত্ব অনেক। কেননা আজ জিতলেও তারা শেখ জামালের চেয়ে ৩ পয়েন্টে পিছিয়ে থাকবে। হারলে আবার ৬ পয়েন্টে। ড্র হলে শেখ জামালের আরও সুবিধা। সুতরাং জয় ছাড়া দুই দলেরই আজ বিকল্প কোনো পথ নেই।
আজ মোহামেডান-আবাহনীর গুরুত্বপূর্ণ। লড়াই হলেও ক্রীড়াঙ্গনে উত্তেজনা লক্ষ্য করা যায়নি। সাধারণ দর্শকতো বটেই ফুটবল ফেডারেশনের অনেকেই জানেন না চির প্রতিদ্বন্দ্বী লড়াইয়ের কথা। যাক উত্তাপহীন হলেও দুদল জেতার লক্ষ্যে নিজেদের সেরা পারফরম্যান্স শো করবে এ প্রত্যাশা সবারই। কথা হচ্ছে, আজ জিতবে কে? আসলে অনেক ম্যাচের হিসাব-নিকাশ করা গেলেও মোহামেডান-আবাহনীর ম্যাচে কে জিতবে বলা মুশকিল। এখনো ঘটনা ঘটেছে আগের ম্যাচে বড় দুই দল দুর্বল কোনো প্রতিপক্ষের কাছে হার মানলেও মর্যাদার লড়াইয়ে ঠিকই জ্বলে ম্যাচ জিতে গেছে। যেমন এবার মোহামেডানেরই উদাহরণ দেখা যাক। আগের ম্যাচে এগিয়ে থেকেও শেষ মুহূর্তে ২ গোল খেয়ে টিম বিজেএমসির কাছে হেরে যায়। অন্যদিকে দ্বিতীয় পর্বের প্রথম ম্যাচেই আবাহনী হেরে যায় ব্রাদার্সের কাছে। তারপরও মর্যাদার লড়াই বলে আজকের ম্যাচে কে বিজয়ের হাসি হাসবে নাকি ড্র হবে তা বলা মুশকিল। পেশাদার লিগ শুরুর পর আবাহনী চারবার শিরোপা জিতলেও মোহামেডানের কাছে তা স্বপ্নে পরিণত হয়েছে। ২০০২ সালের পর ঐতিহ্যবাহী দলটি লিগে শিরোপা জিততে পারছে না। এবার তুলনামূলক শক্তিশালী দল গড়েও ফেডারেশন কাপ ও লিগের প্রথম পর্ব লড়াইয়ে আবাহানীর কাছে হেরে যায়। স্বাধীনতা কাপে গ্রুপ পর্ব ড্র হলেও সেমিতে মোহামেডান জিতে যায়। আবাহনীর ফুটবল ম্যানেজার সত্যজিত দাস রুপু বলেন, লিগ এখনো অনেক বাকি থাকলেও শিরোপার রাস্তা হাঁটতে আজকের ম্যাচে গুরুত্ব অনেক। পয়েন্টে পিছিয়ে থাকলেও মোহামেডানকে তিনি যোগ্য প্রতিপক্ষ বলে চিহ্নিত করেন। রুপু বলেন, দুদলের লড়াই এমনিতেই টেনশনের সুতরাং ফলাফল কি হবে তা আগাম বলা মুশকিল। দ্বিতীয় পর্বে প্রথম ম্যাচে ব্রাদার্সের কাছে হারার পর মাঠে আবাহনী ভালোই পারফরম্যান্স শো করছে। ছেলেরা এর ধারাবাহিকতা ধরে রাখতে পারলে মোহামেডানকে ভালোভাবেই হারানো সম্ভব বলে রুপু মনে করেন। তিনি বলেন, হারলে শেখ জামাল অনেকটা ধরাছোঁয়ার বাইরে চলে যাবে। তাই মাঠে অবশ্যই সতর্ক হয়ে খেলতে হবে। অধিনায়ক সুজন বলেন, শিরোপা রেসে ভালোমতো টিকে থাকতে হলে অবশ্যই মোহামেডানকে হারাতে হবে। স্বাধীনতা কাপে হারলেও আবাহনীর যে স্পিরিট তা ধরে রাখতে পারলে বড় ব্যবধানে জেতা সম্ভব বলে তিনি মনে করেন।
এক সময় লিগ লড়াইয়ে মোহামেডান এগিয়ে থাকলেও পেশাদার লিগে আবাহনীর বিপক্ষে সুবিধা করতে পারছে না। ২০১২ সালে লিগে আবাহনীর বিরুদ্ধে মোহামেডান শেষবার জয় পেয়েছিল। আজ মাঠে নামার আগে মোহামেডান গতকাল ক্লাব মাঠে হাল্কা অনুশীলন করে। ম্যানেজার আমিরুল ইসলাম বাবু বলেন, মোহামেডান শিরোপা দৌড়ে টিকে থাকবে কিনা তা অনেকটা নির্ভর করবে আবাহনীকে হারানোর ওপর। খেলোয়াড়দের মনে রাখতে হবে শেখ জামাল ও আবাহনীর চেয়ে আমরা এতটা পিছিয়ে যে জিতলেও এগুতে পারব না। সুতরাং পরাজয়তো নয়, ড্র হলেও বিপর্যয় থেকে বের হয়ে আসতে পারব না। তাই উপায় একটাই জয়। ক্লাব কিন্তু ডিমান্ড অনুযায়ী সবকিছু পূরণ করেছে। শুধু তাই নয়, স্বাধীনতা কাপে চ্যাম্পিয়ন হওয়ার পর মোটা অঙ্কের বোনাস দেওয়া হয়েছে। বিষয়গুলো উপলব্ধি করে খেলোয়াড়দের মাঠে অবশ্যই মনোযোগী থাকতে হবে। শুধু মনোযোগী নয়, জিতেই মাঠ ছাড়তে হবে। আশা করি খেলোয়াড়রা সমর্থকদের হতাশ করবে না। অন্যদিকে অধিনায়ক জাহিদ হোসেন এমিলি বলেন, মোহামেডান-আবাহনীর ম্যাচে উত্তাপই আলাদা। সুতরাং আগের ম্যাচে বিজেএমসির কাছে হারলেও তাতে এ ম্যাচে কোনো প্রভাব পড়বে না। এমিলি বলেন, আমরা জেতার জন্যই মাঠে নামব। আশা রাখি সমর্থকদের মুখে হাসি ফুটাতে পারব। বিকাল সাড়ে ৫টায় বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামে আজ মোহামেডান-আবাহনীর ম্যাচটি শুরু হবে।
দুই প্রধানের উল্লেখযোগ্য ঘটনা
দুদলের প্রথম সাক্ষাৎ
১৯৭৩ : প্রথম বিভাগ ফুটবল লিগ
ফলাফল : আবাহনী ২-০ গোলে জয়ী
গোলদাতা কাজী সালাউদ্দিন, অমলেশ সেন।
মোহামেডান প্রথম জয়ী
১৯৭৫, ৪-০ গোলে জয়ী
গোলদাতা
হাফিজ, গাজী, নওশের মঈন
সর্বোচ্চ গোলে জয়ী
মোহামেডান ৪-০ ১৯৭৫
আবাহনী ৩-১ ১৯৭৯
এক ম্যাচে সর্বোচ্চ গোল
৭টি, ২০০০
মোহামেডান : ৪ আবাহনী:৩
একমাত্র হ্যাটট্রিক
নকিব (মোহামেডান) ২০০০
প্রথম লাল কার্ড
টুটুল (আবাহনী) মঞ্জু (মোহামেডান) ১৯৭৬
দুদলকে নেতৃত্ব
গোলরক্ষক মহসিন (মোহামেডান) ১৯৮৫
গোলরক্ষক মহসিন (আবাহনী) ১৯৯২
উভয় দলের পক্ষে গোল
শেখ মো. আসলাম-১৯৮৩-মোহামেডান
শেখ মো. আসলাম-১৯৮৪-আবাহনী
সম্রাট হোসেন এমিলি-১৯৮৩-আবাহনী
সম্রাট হোসেন এমিলি-১৯৮৭-মোহামেডান