ক্রিকেটার মাত্রই স্বপ্ন থাকে বিশ্বকাপে খেলার। বিশ্বকাপ নিয়ে স্বপ্ন থাকে ক্রিকেটামোদীদেরও। ক্রিকেটাররা মাঠে দুর্দান্ত লড়াই করে জয় উপহার দেবেন, আর বিজয়ের আনন্দে মাতোয়ারা হবেন সমর্থকরা। বিশ্বকাপের চূড়ান্ত দলে জায়গা করে নিয়ে ইতিমধ্যেই স্বপ্ন পূরণ হয়ে গেছে ১৫ ক্রিকেটারের। কিন্তু নিজেদের স্বপ্ন পূরণ হলেও ক্রিকেটাররা পারবেন কি দেশবাসীর স্বপ্ন পূরণ করতে? অস্ট্রেলিয়া-নিউজিল্যান্ডের কঠিন কন্ডিশনে কাঙ্ক্ষিত সাফল্য এনে দিতে পারবেন তো চূড়ান্ত দলে জায়গা পাওয়া ক্রিকেটাররা!
অবশ্য জয়-পরাজয় নয়, আপাতত দেশবাসী বিশ্বকাপ দল নিয়ে আলোচনায় ব্যস্ত। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে 'স্ট্যাটাস কিংবা মন্তব্য' দিয়ে সাধারণ মানুষ তাদের মতামত প্রকাশ করছেন। বিশ্বকাপের দল নিয়ে নানা আঙ্গিকে ভিন্ন ভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গি উপস্থাপন করে ব্যবচ্ছেদ করে চলেছেন সাবেক ক্রিকেটাররাও।
১৫ সদস্যের দলের ৯ জনেরই এবার 'বিশ্বকাপ অভিষেক' হতে যাচ্ছে। একে তো দলে অভিজ্ঞ ক্রিকেটার মাত্র ছয়জন, তার ওপর নতুনদের মধ্যে নাসির, এনামুল ও মুমিনুল ছাড়া বাকি ছয় ক্রিকেটার মিলে ওয়ানডে ম্যাচ খেলেছেন মাত্র ২৯টি। অস্ট্রেলিয়ার মতো বাউন্সি উইকেটে এই 'অনভিজ্ঞ' দল নিয়ে বাংলাদেশ কি আদৌ কিছু করতে পারবেন? ফর্মে থাকার পরও রাজ্জাক, ইমরুল, নাঈমের মতো পরীক্ষিত ক্রিকেটারকে কেন দলে নেওয়া হলো না? -এমন নানা প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে! সাবেক ক্রিকেটাররাও এই দল নিয়ে অস্ট্রেলিয়া-নিউজিল্যান্ডের বাউন্সি উইকেটে ভালো করার ব্যাপারে সন্দিহান! বাংলাদেশ দলের সাবেক অধিনায়ক খালেদ মাসুদ পাইলট এবং শাহরিয়ার নাফিস মনে করেন, এবারের বিশ্বকাপে অনভিজ্ঞতাই ভোগাতে পারে বাংলাদেশকে।
বিশ্বকাপ চার বছর অন্তর অন্তর হয়। তাই চূড়ান্ত দলে ৯ জন নতুন ক্রিকেটারকে দেখে মোটেও অবাক হননি পাইলট। তাই বলে ইমরুল কায়েস ও রাজ্জাকের মতো তারকা ক্রিকেটার ফর্মে থাকার পরও চূড়ান্ত দলে সুযোগ পাবে না! দুই অভিজ্ঞ ক্রিকেটারকে বাদ দিয়ে দল গঠন করায় বিস্মিত হয়েছেন ২০০৩ সালে বিশ্বকাপে বাংলাদেশকে নেতৃত্ব দেওয়া এই তারকা। পাইলট বলেন, 'বাংলাদেশে খেলা হলে এই দলটা খুবই ভালো ছিল। এ ব্যাপারে কোনো প্রশ্ন থাকতো না। কিন্তু বিশ্বকাপ যেহেতু অস্ট্রেলিয়ার মতো কঠিন কন্ডিশনে, তাই দলে আরও অভিজ্ঞ ক্রিকেটার থাকলে ভালো হতে। রাজ্জাক এবং ইমরুল কায়েসের খুবই দরকার ছিল।' বিশ্বকাপের দল দেখে যারপরনাই হতাশ শাহরিয়ার নাফিস। তার ধারণা, অনভিজ্ঞ এই দল নিয়ে দ্বিতীয় রাউন্ডে ওঠার আশা করাটা অকল্পনীয়। শাহরিয়ার বলেন, 'আমি ব্যক্তিগতভাবে মনে করি, এই দলে অবশ্যই রাজ্জাক ভাই, ইমরুল কায়েস ও নাঈম ইসলামকে নেওয়া উচিত ছিল। রাজ্জাক দেশের সর্বোচ্চ উইকেট শিকারি বোলার এবং অভিজ্ঞ। ইমরুল কায়েস গত বিশ্বকাপে বলতে গেলে সেরা পারফরমার ছিল। এখন সে ফর্মে। আর আমি বুঝতেই পারছি কেন নাঈম ইসলামের মতো ক্রিকেটারকে এই দলে রাখা হলো না? মিডল অর্ডারে তার খুবই দরকার ছিল। সে জাতীয় লিগে দারুণ খেলেছে। আর প্রিমিয়ার লিগে তো অসাধারণ। ব্যাটিং ও বোলিং -দুই বিভাগেই দুর্দান্ত। তারপরেও বিশ্বকাপের চূড়ান্ত দলে জায়গা হলো না। কিন্তু কেন?' পাইলটের দাবি, নাঈম এখন দুর্দান্ত ফর্মে থাকলেও দলে তিনি যে জায়গায় খেলেন সেখানে মাহমুদুল্লাহ ও নাসির রয়েছেন। কিন্তু তামিম হঠাৎ ইনজুরিতে পড়লে ওপেন করবে কে? খালেদ মাসুদ বলেন, 'এর আগেও দেখা গেছে, তামিম সিরিজের মাঝপথে হঠাৎ ইনজুরিতে পড়ে যায়। আল্লাহ না করুক যদি এমন হয়েই যায়, আমি মনে করি, সেক্ষেত্রে সৌম্য সরকারের চেয়ে ইমরুলই অনেক ভালো ছিল। তার অভিজ্ঞতা কাজে লাগতো। তাছাড়া হঠাৎ করে বাউন্সি উইকেটে ভালো করা যায় না। ইমরুল একজন পরীক্ষিত ক্রিকেটার। বিশ্বকাপে আমি তাকে মিস করব।'
যতই বাউন্সি উইকেটে খেলা হোক না কেন, বোলিংয়ে বাংলাদেশের প্রধান অস্ত্র স্পিনেই। কিন্তু চূড়ান্ত দলে সাকিবের সঙ্গে রয়েছেন তাইজুল ও সানি। দুই স্পিনারই একেবারেই তরুণ। তাইজুল খেলেছেন এক ম্যাচ, সানি ৮টি। এক সঙ্গে দুই 'অনভিজ্ঞ' স্পিনারকে না রেখে অনায়াসেই রাজ্জাককে দলে নেওয়া যেত। কিন্তু দল ঘোষণার সময় নির্বাচকরা জানিয়েছেন, রাজ্জাক 'ফিট' নয় বলেই তাকে বাদ দেওয়া হয়েছে। নির্বাচকদের এমন অজুহাত মানতে রাজি নন শাহরিয়ার। তিনি প্রশ্নের সুরে বলেন, 'রাজ্জাক ভাই যদি আন-ফিট হন, তাহলে প্রিমিয়ার লিগের সব ম্যাচ খেলছেন কীভাবে?' একই প্রশ্নও পাইলটেরও। সাবেক এই অধিনায়ক বলেন, 'নির্বাচকদের ব্যাখ্যা, রাজ্জাক ফিট নয়। যদি তাই হয় তাহলে এতো টাকা বেতন দিয়ে ট্রেনার রাখা হয়েছে কেন? রাজ্জাক তো জিম্বাবুয়ের বিরুদ্ধে সিরিজও খেলেনি। এই সময়ের মধ্যে কি তাকে ফিট করে তোলা যেত না! আমি দেখেছি, জয়সুরিয়া শেষ যে বিশ্বকাপে খেলেছে ওই বিশ্বকাপের ছয় মাস আগে থেকেই তাকে ফিটনেসের জন্য আলাদা করে ট্রেনিং করানো হয়েছে। তাই রাজ্জাকের মতো অভিজ্ঞ স্পিনারকে নিতে চাইলে আগে থেকেই তার ফিটনেস নিয়ে চিন্তা করতে হতো। তাছাড়া সে যদি আন-ফিটই হয় তাহলে প্রিমিয়ার লিগে খেলছে কীভাবে?' তবে দল যেমনই হোক, পাইলট ও শাহরিয়ারের প্রত্যাশা বিশ্বকাপে অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে বাংলাদেশ অনেক ভালো করুক। টাইগারদের শুভ কামনা জানিয়েছেন, দুই তারকাই।