আল আমিনের বিষয়টি শোনার পর প্রথম বিশ্বাস হয়নি টিম ম্যানেজার খালেদ মাহমুদ সুজনের। মাশরাফি-সাকিব-তামিম-মুশফিকদের ওপর অগাধ আস্থা তার। কিন্তু সেই বিশ্বাস ভেঙে যাওয়ায় হতাশ। দেশের মানসম্মানের কথা বিবেচনা করে আল আমিনের মধ্য রাতে হোটেলে ফেরার বিষয়টি জানান বিসিবি সভাপতি নাজমুল হাসান পাপনকে। দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গের অপরাধ প্রমাণিত হওয়ায় আল-আমিনকে বিশ্বকাপ ক্রিকেট থেকে বহিষ্কার করে বিসিবি। কাল স্থানীয় সময় সন্ধ্যা ৭টায় সবার চোখ ফাঁকি দিয়ে মেলবোর্ন ছাড়েন আল আমিন। তার পরিবর্তে আজ কোনো এক সময় দলের সঙ্গে যোগ দিবেন আরেক ডান হাতি পেসার শফিউল ইসলাম সুহাশ। অথচ কোচ চন্ডিকা হাতুরাসিংহে চেয়েছিলেন লেগ স্পিনার জুবায়ের হোসেন লিখনকে। জুবায়েরকে চেয়ে মেইলও করেছিলেন কোচ।
বিশ্বকাপ স্কোয়াড ঘোষণার সময় কোচ লেগ স্পিনার জুবায়েরকে চেয়েছিলেন। কিন্তু নির্বাচকরা অনভিজ্ঞতার জন্য লেগ স্পিনারকে স্কোয়াডে নেননি। সাকিব আল হাসানের সঙ্গে দুই বাঁ হাতি স্পিনার আরাফাত সানি ও তাইজুল ইসলামকে নেন স্কোয়াডে। জুবায়েরকে না নেওয়ায় নির্বাচক প্যানেলের উপর মনঃক্ষুণ্ন্ন হন কোচ। এর ফলে শীতল লড়াই চলতে থাকে দুই পক্ষের মধ্যে। যার ফল, নির্বাচক প্যানেলের অস্ট্রেলিয়ায় আসার ওপর এক প্রকার নিষেধাজ্ঞা জারী করে বিসিবি।
আল আমিনের ওপর আইসিসি দুর্নীত দমন ও নিরাপত্তা দফতর আকসুর নজরদারি সেপ্টেম্বর থেকে। ক্যানবেরার মানুকা ওভালে আফগানিস্তান ম্যাচের আগে আকসুর জেরার মুখে পড়েন আল আমিন। তখনও বিষয়টি মিডিয়ার কাছে আসেনি। কিন্তু ব্রিসবেনে আসার পর রাত করে হোটেলে ঢোকার বিষয়টি জেনে যায় মিডিয়া। মিডিয়া জানায় বিব্রতকর অবস্থায় পড়ে বোর্ড। এরপর দ্রুত দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগে বিশ্বকাপ থেকে বহিষ্কার করে আল আমিনকে। বিসিবির নিয়ম অনুযায়ী রাত ১০টার পর কোনো ক্রিকেটার হোটেলের বাইরে থাকতে পারবেন না। থাকতে চাইলে টিম ম্যানেজমেন্টের অনুমতি নিয়ে থাকতে হবে। আল আমিন ব্রিসবেনে অস্ট্রেলিয়া ম্যাচের দুদিন আগে ১৯ ফেব্রুয়ারি টিম মানেজমেন্টের অনুমতি ছাড়া অনেক রাত পর্যন্ত হোটেলের বাইরে ছিলেন। ফিরেন রাত ১২টায়। মধ্য রাতে তার ফেরার বিষয়টি জানতেন না টিম ম্যানেজার। পরের দিন, ২০ ফেব্রুয়ারি আল আমিনের মধ্য রাতে হোটেলে ফেরার বিষয়টি টিম ম্যানেজারকে জানায় আকসু। এরপর তিনি আল আমিনের কাছে সত্যতা জানতে চাইলে শুরুতে অস্বীকার করেন আল আমিন। কিন্তু পরে স্বীকার করেন মধ্য রাতে হোটেলে ফেরার কথা।
১৯ ফেব্রুয়ারি রাতে আল আমিন হোটেল ছাড়েন কোনো একজনের সঙ্গে গাড়িতে চড়ে। ফিরেন হেঁটে হেঁটে। যা সন্দেহ জাগায় আকসুর মনে। এছাড়া তারা তার ওপর নজর রাখছিল গত সেপ্টেম্বর থেকে। তাই আল আমিনের চলাচলের ওপর নজরদারি ছিল তীক্ষ্ন। তাদের নজরদারিতে শেষ পর্যন্ত আল আমিনের বাইরে থাকার বিষয়টি জানে টিম ম্যানেজমেন্ট। কিন্তু বলেনি বাজিকরদের সঙ্গে যোগাযোগের বিষয়। অবশ্য গুঞ্জন, ওই রাতে বাজিকরদের সঙ্গে দেখা করতেই হোটেল ছেড়েছিলেন আল আমিন। যদিও টিম ম্যানেজার বিষয়টি অস্বীকার করেন, 'আল আমিনকে দেশে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গের জন্য। আমি বিশ্বাস করি না বাজিকরদের সঙ্গে তার যোগাযোগ রয়েছে। তারপরও পুরোপুরি বলতে পারব না।'
বাংলাদেশের ইতিহাসে এই প্রথম কোনো ক্রিকেটারকে বিশ্বকাপ ক্রিকেট থেকে বহিষ্কার করা হল। শৃঙ্খলা ভঙ্গের জন্য ২০০৪ সালে দেশে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছিল মোহাম্মদ রফিককে। কিন্তু বিশ্বকাপ থেকে এই প্রথম। আল আমিনকে ফেরত পাঠানোয় তার শূন্যস্থান পুরণ করতে কোচ দুজনের নাম প্রস্তাব করেন। একজন শফিউল ইসলাম সুহাশ ও অন্যজন জুবায়ের হোসেন লিখন। ফারুক আহমেদের নেতৃত্বাধীন নির্বাচক প্যানেল অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ডের কন্ডিশন এবং অভিজ্ঞতার বিবেচনায় পাঠিয়েছেন শফিউলকে। যদিও কোচের চাওয়া ছিল লেগ স্পিনার জুবায়ের। কিন্তু দলে তিনজন বাঁ হাতি স্পিনার ও একজন অব স্পিনার থাকায় জুবায়েরকে পাঠায়নি।