ক্রিকেটের ব্যাকরণ দুটো দলই খুব ভালো জানে। কিভাবে প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করতে হয়, কখন হামলে পড়তে হয় ক্ষুধার্ত শার্দুলের মতো, সবকিছুই ওদের জানা। কিন্তু তারপরও বিশ্বকাপের মহামঞ্চে দুটো দলেরই রয়েছে চূড়ান্ত সময়ে ভেঙে পড়ার ভয়ঙ্কর দুর্বলতা। নিউজিল্যান্ড তো বিশ্বকাপের 'সেমিফাইনালিস্ট' দল হিসেবেই পরিচিত। আর দক্ষিণ আফ্রিকা! এখনো ওরা 'চোকার্স' লেবেলটা মুছতে পারেনি জার্সি থেকে। ১৯৯২, ১৯৯৯ কিংবা ২০০৭- প্রতিবারই ফেবারিটের তকমা নিয়ে বিশ্বকাপ খেলতে গিয়েছিল তারা। আর কি সব ক্রিকেটার ছিল দলে। ৯২'তে ছিলেন কেপলার-পিটাররা। ৯৯'তে ছিলেন ক্লুজনার, ডোনাল্ড, ক্রোনিয়ে আর গ্যারি কার্স্টেনদের মতো মহাতারকারা। ২০০৭'তে ছিলেন মার্ক বাউচার, জ্যাক ক্যালিস আর গ্রায়েম স্মিথরা। কিন্তু কোনোবারই সঙ্গী হয়নি ভাগ্য। বিশ্বকাপের চাপ সামলানোর ক্ষমতা না থাকার অভিযোগে কখনো ইংল্যান্ড (১৯৯২) আবার কখনো অস্ট্রেলিয়া (১৯৯৯ ও ২০০৭) দক্ষিণ আফ্রিকার স্বপ্নের কফিনে শেষ পেরেক ঠুকেছে। দক্ষিণ আফ্রিকার চেয়েও বড় হতভাগা নিউজিল্যান্ড। ১৯৭৫ সালের সেই প্রথম বিশ্বকাপ থেকেই স্বপ্ন ভঙ্গ হচ্ছে ব্ল্যাক ক্যাপসদের। ১৯৭৫, ১৯৭৯, ১৯৯২, ১৯৯৯, ২০০৭ এবং ২০১১ সালে বিশ্বকাপের সেমিফাইনাল থেকে তাদের বিদায় করেছে ওয়েস্ট ইন্ডিজ, ইংল্যান্ড, পাকিস্তান এবং শ্রীলঙ্কা। বার বার একই দলের কাছে সেমিফাইনালে হারার রেকর্ড নিউজিল্যান্ডেরই সবচেয়ে বেশি। ১৯৯২ ও ১৯৯৯ বিশ্বকাপের সেমিতে তারা হেরেছে পাকিস্তানের কাছে। ২০০৭ ও ২০১১ ব্ল্যাক ক্যাপসরা পরাজয় স্বীকার করেছে শ্রীলঙ্কার কাছে। অথচ নিউজিল্যান্ডের ওইসব পরাজিত দলে কি দুর্দান্ত সব ক্রিকেটারই না ছিলেন। মার্টিন ক্রো আর স্টিফেন ফ্লোমিংরা যা করতে পারেননি তা কি করে দেখাতে পারবেন ব্রেন্ডন ম্যাককালামরা! পিটার কার্স্টেন, ক্রোনিয়ে কিংবা স্মিথরা যা পারেননি তা কি পারবেন ভিলিয়ার্সরা! রিচার্ড হ্যাডলির মতো বিখ্যাত কিংবদন্তির বাজি নিউজিল্যান্ড। দক্ষিণ আফ্রিকা আবারও তাদের 'চোকার্স' নামের যথার্থতা প্রমাণ করতেই নাকি সেমিফাইনাল থেকে ছিটকে যাবে। অন্যদিকে জন বুকাননরা 'গোঁ' ধরে বসে আছেন, সিডনিতে অস্ট্রেলিয়ার সামনে ভারত দাঁড়াতে পারবে না। ওটা নাকি অস্ট্রেলিয়ান ক্রিকেটের বাসভূম। সে যাই হোক, ফাইনাল অস্ট্রেলিয়া-নিউজিল্যান্ড হোক কিংবা অন্য কোনো দুই দলের মধ্যে, বিশ্বকাপ তার চূড়ান্ত ফলাফল থেকে আর মাত্র দুই ধাপ দূরে। কিংবদন্তিদের ভবিষ্যদ্বাণী পূরণ করে চ্যাম্পিয়নের মুকুট জিততে পারে নিউজিল্যান্ড। আবার প্রোটিয়াসরাও মুছে ফেলতে পারে 'চোকার্স' শব্দের কলঙ্ক। দুটো দলই আছে দুর্দান্ত ফর্মে। ব্যাট হাতে মাঠে নামলেই অবলীলায় করে ফেলছে ৪০০ কিংবা তার কাছাকাছি রান! বোলাররা গতি আর স্পিনে উইকেটে ঝরাচ্ছে আগুন। ফিল্ডাররা কোনো 'ভুলচুক' করতে রাজি নয়। এমন লড়াকুদের মুখোমুখি হওয়া সত্যিই দুষ্কর। অন্তত অস্ট্রেলিয়া আর ভারত তো তা স্বীকার করবেই! তিন তিনবার ফাইনাল খেলেও ফুটবলে বিশ্বকাপ স্বপ্ন পূরণ হয়নি ডাচদের। তাও ওদের সান্ত্বনা, ফাইনাল তো খেলেছি! দক্ষিণ আফ্রিকা আর নিউজিল্যান্ডের তো ক্রিকেট বিশ্বকাপে ফাইনাল খেলার সান্ত্বনাটুকুও নেই। এবার অবশ্য যে কোনো এক দলের ফাইনাল খেলার স্বপ্ন পূরণ হবে। একটা বিষয় তো নিশ্চিত, বিশ্বকাপ পাচ্ছে নতুন এক ফাইনালিস্ট। অস্ট্রেলিয়া, ভারত, ওয়েস্ট ইন্ডিজ, শ্রীলঙ্কা, পাকিস্তান ও ইংল্যান্ড-ঘুরে ফিরে এই দলগুলোই বিশ্বকাপের ফাইনাল খেলেছে। এবারে অন্তত একটা নতুন নাম যোগ হচ্ছে এই তালিকায়। আর কে জানে, ২৯ মার্চ ফাইনালের পর ক্রিকেটবিশ্ব হয়ত স্বাগত জানাবে কোনো নতুন চ্যাম্পিয়নকে! নিউজিল্যান্ড অথবা দক্ষিণ আফ্রিকাকে!