সিডনি ক্রিকেট স্টেডিয়ামের উইকেট দেখে বিস্ময় জাগল! লালমাটির না হলেও কোনো ঘাস নেই উইকেটে। একেবারে ন্যাড়া। যেন ভারতীয় কোনো উইকেট! এ নিয়ে গত কয়েকদিনে কতই না নাটক হলো। বড় বড় ব্যানারে লেখাও হয়েছে, ম্যাচের আগেই ভারতের কাছে হেরে গেছে অস্ট্রেলিয়া। ক্লার্কের কোনো অনুরোধই কানে তুলেনি আইসিসি। আরও কত কি? কাল দ্বিতীয় সেমিফাইনালে অস্ট্রেলিয়ার ব্যাটিং শেষে লাল ব্যানারের সেসব হেডলাইনগুলো মাঠে মারা গেল! স্পিনার এবং ধীরলয়ের ভারতীয় বোলারদের স্বর্গ হবে উইকেট-এমন ধারণায় সবাই যখন ক্ষণ গুনছিল, তখন ভারতীয় টিম ম্যানেজমেন্টসহ সবাইকে চমকে দিল অস্ট্রেলিয়া। চমকে দিলেন স্টিভ ডেভিড স্মিথ। ভারতীয় পেসার মোহাম্মদ সামি, শর্মা ও উমেশ যাদব এবং দুই স্পিনার রবিচন্দন অশ্বিন ও রবীন্দ্র জাদেজাকে মামুলি বোলার বানিয়ে তুলে নেন ক্যারিয়ারের চতুর্থ এবং ভারতের বিপক্ষে প্রথম সেঞ্চুরি। স্মিথের সেঞ্চুরিতে অস্ট্রেলিয়া যে সাত উইকেটে ৩২৮ রান করল, তা আবার বিশ্বকাপ ক্রিকেটের ১১ আসরের সেমিফাইনালে সর্বোচ্চ স্কোরও। আগের সর্বোচ্চ ২৯৯ রান, যা প্রথম সেমিফাইনালে করেছিল ব্ল্যাক ক্ল্যাপসরা।
আগের সাত ম্যাচে প্রতিপক্ষকে অলআউটের তীব্র স্বাদ নিয়ে খেলতে নামেন মহেন্দ্র সিং ধোনিরা। তিন ভারতীয় পেসারের তোপে কখনোই কোমর সোজা করে দাঁড়াতে পারেনি প্রতিপক্ষ। সেই সামি, যাদব ও মোহিতের গতিকে ফারাক্কা বাঁধের মতো নিয়ন্ত্রণে এনে সেঞ্চুরি করেন স্মিথ। গত নভেম্বরে অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে পা রাখার পর ভারতের প্রবল প্রতিপক্ষ হয়ে ওঠা স্মিথ কাল তুলে নেন পাঁচ নম্বর সেঞ্চুরি। গতকালেরটি ওয়ানডেতে প্রথম এবং বাকি চার বোর্ডার-গাভাস্কার টেস্ট সিরিজে। টানা চার টেস্টে চার সেঞ্চুরি হাঁকানো স্মিথ ১০ ইনিংসে ৯২১ রান করেন ধোনিদের বিপক্ষে! অবিশ্বাস্য! স্মিথ একাই ভারতীয় টিম ম্যানেজমেন্টের সব চাওয়া-পাওয়াকে গুঁড়িয়ে দেন ৯৩ বলে ১০৫ রানের ঝলমলে ইনিংস খেলে। স্মিথ ভারতের বিপক্ষে এ নিয়ে তৃতীয় ওয়ানডে খেলে সেঞ্চুরি করেন প্রথম। গত নভেম্বর থেকে যে চারটি টেস্ট খেলেন, তার স্কোর ১৬২*, ৫২*, ১৩৩, ২৮, ১৯২, ১৪, ১১৭ ও ৭১। স্কোরগুলোই বলছে, ভারতের বিপক্ষে কতটা দুর্দমনীয়। শুধু ভারত নয়, বিশ্বকাপেও উজ্জ্বল স্মিথ। বাংলাদেশ ম্যাচটি ছাড়া বাকিগুলোতে তার স্কোর ৫, ৪, ৯৫, ৭২, ৬৫ ও ১০৫।
সাব কন্টিনেন্টের মতো উইকেট। টস জেতা জরুরি। কিন্তু সেই কাজটি সহায় হয়নি ধোনির। হেরে ফিল্ডিংয়ে নামে ভারত। চতুর্থ ওভারে প্রথম আঘাত হানেন যাদব। শরীর বরাবর বলটিতে ঠিকমতো চোখ রাখতে না পারায় কোহলির তালুবন্দী হন ডেভিড ওয়ার্নার। বাঁ হাতি ওপেনারের বিদায়ে নেচে ওঠে সিডনির গ্যালারি। ১৫ রানে ওয়ার্নারের বিদায়ের পর ক্রিজে আসেন ইনফর্ম স্মিথ। ওপেনার অ্যারন ফিঞ্চকে নিয়ে দ্বিতীয় উইকেট জুটিতে ৩১ ওভারে যোগ করেন ১৮২ রান। যা বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে যে কোনো উইকেটে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ। ১৯৯৯ সালের বিশ্বকাপে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ১৯৪ রান করেছিলেন পাকিস্তানের সাঈদ আনোয়ার ও ওয়াজিতুল্লাহ ওয়াস্তি।
স্মিথ ও ফিঞ্চের রেকর্ড জুটিতে বিশ্বকাপ ক্রিকেটের সেমিফাইনালে আবার সর্বোচ্চ স্কোরটাও লিখে নেয় অস্ট্রেলিয়া। অকল্যান্ডের ইডেন পার্কে অবিশ্বাস্য ক্রিকেট খেলে ৬ উইকেটে ২৯৯ রান করেছিলেন ব্রেন্ডন ম্যাককালামরা। ডার্ক ওয়ার্থ লুইস (ডিএল) মেথডের ম্যাচে দক্ষিণ আফ্রিকার ২৯৮ রান তাড়া করেই এই রেকর্ড গড়েছিল নিউজিল্যান্ড। তা স্থায়ী ছিল মাত্র ৪৮ ঘণ্টা। ১৯৭৫ সালে ক্লাই লয়েডের ওয়েস্ট ইন্ডিজ ২৯৩ রান করেছিল। মজার বিষয়, ৪০০ রানও যখন কোনো সেইফ নয়, সেখানে গত ৪০ বছরের ইতিহাসে এই প্রথম সেমিফাইনালে তিনশোর্ধ্ব স্কোর হয়েছে।
ভারতের বিপক্ষে যেমন উজ্জ্বল স্মিথ, তেমনি অস্ট্রেলিয়ার পক্ষে তার পরিসংখ্যানও উজ্জ্বল।