অস্ট্রেলিয়ার এক শহরের সঙ্গে আরেক শহরে মিল নেই বললেই চলে! ব্যস্ততা, জীবনবোধ, কিংবা যানজট- কিছুতেই মিল নেই। কিন্তু এক জায়গায় অদ্ভুত মিল। রাতের অস্ট্রেলিয়া। রাজধানী ক্যানবেরা থেকে শুরু করে ব্রিসবেন, অ্যাডিলেড, মেলবোর্ন, সিডনি- সবগুলো শহরে সন্ধ্যা হতেই নেমে আসে নিস্তব্ধতা। সুনসান পরিবেশ। দিনের আলোয় যে রাস্তাগুলো থাকে জনারণ্যে ভরপুর, রাতে সেখানে ভৌতিক পরিবেশ! সিডনির কথাই ধরা যাক। অস্ট্রেলিয়ার সবচেয়ে বড় ও জনবসতির শহর। ৪৭ লাখ লোকের বাস। রাত হতেই সেই সিডনিও পরিণত হয় ভুতুড়ে নগরীতে। শহরের বুক চিরে বেরিয়ে যাওয়া রাস্তাগুলোতে শুধু ট্যাক্সি আর গাড়ির আওয়াজ। এ ছাড়া কোথাও লোকজন নেই। তবে রাতের পাখির মতো কিছু কিছু পর্যটকের পছন্দের জায়গা অপেরা হাউস, সিডনি হারবার ব্রিজ। হারবার নদীর কূলঘেঁষে দাঁড়িয়ে থাকা স্থাপনাগুলো দেখতে বেশ ভালোই লোকজনের দেখা মেলে। সেখানেই দেখা সুনীল গাভাস্কারের। অপেরা হাউসের পাশেই ইন্টাকন্টিনেন্টাল হোটেল। রাতের অপেরা হাউস দেখতে চলে আসেন গাভাস্কার। মেলবোর্নে কথা হয়েছিল কোয়ার্টার ফাইনালের পর। এবার দেখা হলো সিডনিতে। কথা হলো বাংলাদেশের ক্রিকেট নিয়ে। বিশ্বকাপে বাংলাদেশের পারফরম্যান্স নিয়ে কথার ঝাঁপি খুলে দেন এই ভারতীয় কিংবদন্তি।
গাভাস্কার বাংলাদেশকে দেখছেন প্রায় ২৮ বছর ধরে। বাংলাদেশের বিপক্ষে খেলেছেন। ধারাভাষ্য দিতে বাংলাদেশে গিয়েছেন বহুবার। বাংলাদেশের ক্রিকেট নিয়ে তাই অন্য যে কারও চেয়ে একটু বেশিই জানেন। কোয়ার্টার ফাইনালে ভারতের বিপক্ষে ম্যাচে ধারাভাষ্য দিয়েছেন। ম্যাচের কূটকৌশল নিয়ে কথা বলেছেন। ম্যাচ শুরুর আগে বলেছিলেন, 'ম্যাচটি প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ হবে'। ম্যাচ শেষে হেসে বলেন, 'ব্যাড লাক'। তবে সেই বলায় একটি কিন্তু ছিল! সেদিন এর বেশি আর কিছুই বলেননি। হারবার ব্রিজে রাতে অনেক কথা বলেন। তাতে ছিল না আম্পায়ারিং নিয়ে কোনো কথা। ছিল না বাংলাদেশ ছাড়া অন্য কোনো কথা।
'দেখ বিশ্বকাপ শুরুর আগে কেউই ভাবেনি বাংলাদেশ এত ভালো ক্রিকেট খেলবে। কিন্তু বিশ্বকাপ শুরুর পর থেকেই নিজেদের গুছিয়ে প্রতিটি ম্যাচেই ভালো ক্রিকেট খেলেছে। বিশেষ করে মাহমুদুল্লাহ খুব ভালো ব্যাটিং করেছেন।' বক্তা গাভাস্কার। এই গাভাস্কারই বছর দুই আগে বলেছিলেন, 'বিশ্বের সেরা ৮ নম্বর ব্যাটসম্যান মাহমুদুল্লাহ।' সেদিনের মন্তব্যে তির্যকতা ছিল কি না, বোঝা যায়নি। কিন্তু ইংল্যান্ড ও নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে দুই সেঞ্চুরির পর ক্রিকেট বিশ্ব নাড়িয়ে দেন মাহমুদুল্লাহ। সমালোচকদের প্রশংসা কুড়ান মাহমুদুল্লাহ। গাভাস্কার প্রশংসা করেন মাহমুদল্লাহর, 'মাহমুদুল্লাহ প্রতিভাবান ক্রিকেটার। তিনি আগে থেকেই ভালো ব্যাটিং করতেন। এবার অনেক পরিণত ব্যাটিং করেছেন। মুশফিকও ভালো ব্যাটসম্যান।' ব্যাটসম্যানদের পাশাপাশি প্রশংসা করেছেন দুই পেসার রুবেল হোসেন ও তাসকিন আহমেদের, 'রুবেল ইংল্যান্ডের বিপক্ষে খুব ভালো বোলিং করেন। তাসকিনের ভবিষ্যৎ ভালো।' তিনি বলেন, এক সময়ে বাংলাদেশকে হালকা চোখে দেখা হতো। এখন সেদিন শেষ। আমি বিশ্বাস করি ক্রিকেটে বাংলাদেশ আরও ভালো করবে।